আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল এবং থাকবে

আবু মোরশেদ চৌধুরী
এদেশে সব সময়ই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল এবং আগামীতেও থাকবে ।
বেশি দূরের সময়কাল নয় ষাট -সত্তরের দশকে সময়, এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠে মধুময় দিনগুলো। আমার শৈশব কেটেছে পাশের বাড়ির বৌদ্ধ পরিবারের বাসায়। খেলে খেয়ে অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়েছি বাবার সহপাঠী সনাতন ধর্মাবলম্বী কাকা আর আমার বন্ধুদের বাসায়। কৈশোরে বন্ধুদের নিয়ে পূজার সময় মন্দিরে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে লুচি হালুয়ার প্রসাদ খেয়েছি অপরদিকে ঈদের দিন তাদেরকে সময় কেটেছে আমার বাসায়। এখনো মনে পড়ে দুর্গাপূজায় মণ্ডপের সামনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বন্ধুদের সাথে ঢাক ঢোলের তালে নেচেছি । ইদানীং কালের বিভিন্ন অজুহাতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি আমাকে শুধু ব্যতীত করে না আমাদের শত শত বছরের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঐতিহ্য রক্ষা করা নিয়েও সন্দেহের উদ্রেক করে। দেশে যখন কোন সহিংস ঘটনা ঘটে তখন শুধু আমরা বিভিন্ন বিবৃতি, জনসভা, টকশো, একদল অপরদলকে দোষারোপ করি আর ঘটনার প্রতিবাদ জানাই, তদন্ত কমিটি গঠন করি। প্রশ্ন জাগে, আমরা কি ইচ্ছে করে ভুলে যায়, কিংবা যে কোন কারণে আমলে নিতে চাই না যে আমরা ভূ-রাজনীতি কিংবা অর্থ-লোভী বিভিন্ন সাইনবোর্ড আর পদে অধিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দেশীয় এজেন্টদের কথা! যাদের আত্মঘাতী সহযোগিতায় প্রাণ দিতে হয়েছিল বাংলার নবাব সিরাজুূদউদ্দৌলার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরকে, সংঘটিত হয়েছিল ২১ আগষ্টের, রোহিঙ্গা সমস্যা, রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলাসহ ছোট বড় অনেক ঘটনা। একজন রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু মনে হয় আমাদের ভৌগলিক অবস্থান, এদেশের উন্নয়ন আর বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অনেক আন্তর্জাতিক মহলের বর্তমান চক্ষুশূল। এদেশের সরকার প্রধান যেখানে বিশ্বব্যাংককে তোয়াক্কা করে না, পশ্চিমা বিশ্বের কূটনীতিকরা সরকার প্রধানের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়।
এই আত্মবিশ্বাস অর্জন নিঃসন্দেহে আমাদের গর্ভ। যা অনেক দেশ সহজে মেনে নিতে পারছে না।
গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আর দুর্নীতি দমনে অগ্রগতি খুব একটা বেশি না হলেও বর্তমানে দেশের আবকাঠামোগত আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশর অর্জন আজ বিশ্বনন্দিত। তাই এ দেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতিকে প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন মহল দেশীয় দালালদের মাধ্যমে এ ধরনের অনাকাংখিত ঘটনা ঘটাতেও পারে। আবার অনেক সময় এক দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক/ সামাজিক পরিস্থিতি পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোর আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশকেও প্রভাবিত করে থাকে।
কোন রাজনৈতিক দল চিরদিন ক্ষমতায় থাকে না, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে দেশে যখন কোন স্পর্শকাতর সহিংস ঘটনা ঘটে তাকে পুঁজি করে বিরোধী দল গুলো সমাধানের পথ না দেখিয়ে নানামুখী সমালোচনা আর নুতন বিতর্কের সৃষ্টি করে জাতীয় স্বার্থে অনৈক্যের চোরাবালি সৃষ্টি করেন। উনারা ভুলে যান একদিন ক্ষমতায় আসলে তাদের বর্তমান কার্যক্রমগুলো বুমেরাং হতে পারে।
দেশে কোন ধরনের অনাকাংখিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বা ঘটনা ঘটলে অভ্যন্তরীণ তদন্তের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কোন যোগসুত্র আছে কিনা তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। দৃশ্যপটে মনে হয়, আমাদের পারস্পারিক সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নিশ্চিত করার সহজ ঐতিহ্যগত পদ্ধতি পূনঃপ্রচলন করা অনিবার্য। শকুনের বাচচার মানুষের মাংস খাওয়ার গল্পের কাহিনির পরিবেশ যাতে কেউ এ মাটিতে সৃষ্টি করতে না পারে সেই দিকেও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

আবু মোরশেদ চৌধুরী
সভাপতি, কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.