সাগরের এরকম ঢেউ আগে দেখেনি

সুজাউদ্দিন রুবেল
উৎসব বা উপলক্ষ্যে; যদি হয় টানা ছুটি, তাহলে কোন কথায় নেই। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসে বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত শহর কক্সবাজারে। এবারও টানা ৩ দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে ছুটে এসেছে হাজারো পর্যটক।
তবে এবার কক্সবাজারে সৈকতে এসে পর্যটকরা একটু অবাকই হচ্ছেন। তারা বলছেন, সাগরের এরকম ঢেউ কক্সবাজারে কোন দিন দেখেননি আগে। সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখে অনেকটায় অবাক লাগছে পাশাপাশি ভয়ও লাগছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) হতে টানা ৩ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। তাই ছুটির প্রথম দিনেই সৈকত শহর কক্সবাজারে ভিড় করেছে হাজারো পর্যটক। প্রতিটি পয়েন্টে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। আর উত্তাল সাগরে পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা সবর্দা সজাগ করেছে লাইফ গার্ড কর্মী।

বেলা ১১টায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়; সাগর উত্তাল, একের পর এক বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। আর এই ঢেউয়ে মেতেছেন ভ্রমনপিপাসুরা। কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ এসেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে, আবার কেউবা এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে দলবেধে। সবারই প্রশান্তি যেন সাগরের নোনাজলে।
টানা ৩ দিনের ছুটিতে সকাল থেকে দলে দলে পর্যটকরা নামতে শুরু করে সৈকতের সবকটি পয়েন্টে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে সাগরতীর।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে স্ত্রীর হাত ধরে ঘুরছেন ঢাকার মিরপুর থেকে রিয়াজ উদ্দিন। কথা হয় রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন, ‘ছুটি পেলাম, তাই স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজারে চলে আসা। এখানে এসে দেখি অনেক মানুষ, আসলে এটা আশা করিনি এতো মানুষ কক্সবাজারে আসবে। পর্যটনের ভর মৌসুমে মানুষের যেমন আগমন হয়, ঠিক তেমন মানুষ এখন কক্সবাজার সৈকতে। প্রচুর মানুষ এসেছে কক্সবাজারে ঘুরতে। আসলেই ঘুরতে তো সবারই ভালো লাগে। তাই ভাবলাম যে একটু স্ত্রী নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে আসি। আসলাম, ঘুরছি; শনিবার পর্যন্ত ঘুরে আবার চলে যাবো নিজ গন্তব্যে।’
একই পয়েন্ট সামান্য পানিতে পা ভেজাচ্ছেন পর্যটক দম্পতি হুমায়ুন ও রিয়া। হুমায়ুন কথা না বললেও রিয়া বলেন, সাগর তো আসলেই অনেক সুন্দর। তো প্রিয় মানুষের সঙ্গে এতো বড় সাগরের সামনে মনটা যেমন বড় হয়ে যায়, ঠিক তেমনি ভালোবাসাটাও বেড়ে যায়। এই জন্যই প্রিয় মানুষের সঙ্গে কক্সবাজার ছুটে আসা।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের বালুচরে খেলা করা পর্যটক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ছুটিতে শুধুমাত্র কক্সবাজার আসলেই ভালো লাগে। তাই স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজার ছুটে আসা। এতোটা ভালো লাগে, সত্যিই অনেক আনন্দের। তবে এবার বেশি ভালো লাগছে যে, সাগরের এরকম বড় বড় ঢেউ আগে কোন দিন কক্সবাজারে দেখিনি। এখন বড় বড় ঢেউ দেখে সত্যিই অবাক হচ্ছি।
আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ বুলেটিনে দেখা যায়, উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ০৬টায় একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরো ঘণীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৩ (তিন) নম্বর (পুন:) তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
সৈকতের লাইফ গার্ড কর্মীরা জানিয়েছে, আবহাওয়া পরিস্থিতি তেমন ভাল না, সাগর উত্তাল। প্রতিদিনই সমুদ্রস্নানে ঘটছে দূর্ঘটনা। তাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে তারা এবং প্রতিটি পয়েন্টে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দায়িত্বরত সী সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী আব্দুল মান্নান বলেন, টানা ৩ দিনের ছুটি থাকাতে কক্সবাজার প্রচুর পর্যটক এসেছে। পর্যটকরা সৈকতে এসেই নোনাজলে সমুদ্রস্নানে নেমে পড়ে। কিন্তু আমাদের লাইফ গার্ড কর্মীর স্বল্পতা রয়েছে। তার মাঝেও চেষ্টা করছি, কোন পয়েন্টেই যাতেই পর্যটকরা সমুদ্রস্নানে নেমে বিপদে না পড়ে। আবহাওয়া পরিস্থিতি তেমন ভাল না, যার কারণে প্রতিটি পয়েন্টে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। তবে পর্যটকরা অনেকেই নির্দেশনা মানছেন না। তারপরও পর্যটকদের সতর্ক করার পাশাপাশি সমুদ্রস্নানে নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে টহল জোরদার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। একই সঙ্গে মাইকিংও চলছে। মাইকিংয়ে নানা নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, টানা ছুটিতে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়েছে। যার মাত্র শুক্রবার আরও বাড়বে। তাই সৈকতে, হোটেল মোটেল জোন ও পর্যটন স্পটগুলোতে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করি, টানা ছুটিতে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।
তবে সন্ধ্যার পর দেখা যায়, সৈকতে পর্যটকের আনাগোনা কমে গেছে। কিন্তু পর্যটকরা সৈকতের পাড়ের বার্মিজ পণ্যের দোকান, শুটকি ও আচারের দোকানে ভিড় করছে। এতে ব্যবসায়ীরাও ভালো ব্যবসা করছেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.