রামুতে বিস্তৃর্ণ বনভুমিতে তামাক চাষ : বন্ধ করার উদ্যোগ নেই প্রশাসনের

মোঃ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ
প্রশাসনের কোনো তৎপরতা না থাকায় কক্সবাজারের রামু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সামাজিক বনায়নের বিস্তৃর্ণ বনভুমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকারী খাস জমি এবং নদীর পাড়েও তামাক চাষ আশংকা জনকভাবে বাড়ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তামাক চাষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।

চাষীদের মতে, এ বছর রামুতে প্রায় চার হাজার একর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে ,এর মধ্যে প্রায় দুইহাজার একর সরকারী খাস ও বনভুমি। ফলে হুমকীর মুখে পড়ছে বন ও পরিবেশ।

সরেজমিনে পরিদর্শন এবং তামাক চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কাউয়ারখোপ, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, রাজারকুল,ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তামাক চাষ করা হয়েছে। এসব এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সরকারী খাস ও পতিত জমি, বাঁকখালী নদীর পাড় এবং বনাঞ্চলের সামাজিক বনায়নের জমিতে তামাকের আবাদ করা হয়েছে।

চাষীদের মতে,এবছর উপজেলার বিভিন্নস্থানে প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় দুইহাজার একর খাস ও সামাজিক বনায়নের বনভূমি। এসব জমিতে উৎপাদিত তামাক পোড়ানোর জন্যও প্রায় দুই হাজার তামাক চুল্লী (তন্দুর) তৈরীর প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

কাউয়ারখোপের মনিরঝিলের এম সোলতান আহম্মদ মনিরী জানান, তামাক চাষ স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জেনেও গ্রামের সহজ সরল মানুষ অধিক লাভের আশায়, তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। তাছাড়া তামাক খেতের জন্য বিভিন্ন তামাক কোম্পানী সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ায় চাষীরা ক্ষতিকর এ কাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক তামাক চাষী বলেন,সবজি বা অন্যান্য ফসলের আবাদ করলে প্রয়োজন মত সার মেলে না কিন্তু তামাক খেতের জন্য সারের নিশ্চয়তা আছে।

সরকারী খাস ও বনভুমিতে তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে রামু কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে গত পাঁচ-সাত বছর আগেও এক কানি (৪০ শতক) জমি বছরে পাঁচ-সাত হাজার টাকায় বর্গা পাওয়া যেত। এখন তামাক চাষের কারণে সে জমি বর্গা দেওয়া হচ্ছে পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকায়। এত অধিক দামে জমি বর্গা নিয়ে সবজি চাষে লোকসানের আশায় অনেকে বাধ্য হয়ে তামাকের চাষ করছেন।

এছাড়া বর্তমানে নানা কারনে চাষযোগ্য জমির সংকট দেখা দেওয়ায় লোকজন বনভূমিতে ব্যাপক ভাবে তামাক চাষ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ এবং সরকারী-বেসরকারী তামাকবিরোধী নানা প্রচারণাও তেমন প্রভাব ফেলতে পারছেনা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামু উপজেলার সভাপতি মাষ্টার মোহাম্মদ আলম বলেন, ব্যক্তিগত জমির পাশাপাশি রামুতে নদীর পাড়, সরকারী খাস জমি ও বনাঞ্চলের ভেতরেও বিস্তীর্ণ জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এটা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত। সরকারী ভুমিতে তামাক চাষ বন্ধে অন্যান্য বছর বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও এ বছর তা দেখা যাচ্ছেনা । বিষয়টি রহস্য জনক ।

রামু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, তামাকের গাছ থেকে শুধুমাত্র পাতা সংগ্রহ করা হয়, তাই পাতা বড় করার জন্য খেতে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করে চাষিরা। অতিরিক্ত সার ব্যবহারের কারণে একদিকে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়,অন্যদিকে সার সংকট দেখা দেয়। আবার তামাক পোড়ানোর চুল্লীতে কাঠ পোড়ানোর কারণে বনাঞ্চলও উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

তবে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বাঁকখালী বিট কর্মকর্তা জানান, সামাজিক বনায়ন ও বনভুমিতে তামাক চাষ কোনোভাবেই আমরা করতে দিচ্ছিনা। ইতিমধ্যে বনভুমির ভেতরে করা প্রায় দশ একর তামাক খেত ও বীজতলা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বনভুমির তামাক খেত ধ্বংসে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

রাজারকুল রেঞ্চ কর্মকর্তা তাঁর এরিয়ায় কোথাও তামাক চাষ করা হয়নি বলে দাবি করেন।

রামু উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও উপজেলা বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি জানান বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.