শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল জিম্বাবুয়ে
ওয়ান নিউজ ক্রীড়া ডেক্সঃ ‘জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট শেষ হয়ে গেছে’- এই ধারণা যাদের ছিল, তাদেরকে একটা আগমণী বার্তা দিয়ে রাখলেন সলোমন মিরে, সিকান্দার রাজা, ক্রেইগ আরভিনরা। শ্রীলঙ্কা এখন অনেক ক্ষয়িষ্ণু একটি দল; কিন্তু ঘরের মাঠে র্যাংকিংয়ে ১২ নম্বরে থাকা জিম্বাবুয়ের কাছে কোনো ম্যাচ হেরে যাবে, এটা কল্পনাতেই আনতে পারেনি কেউ। অথচ সে কাজটিই শেষ পর্যন্ত করে দেখাল জিম্বাবুয়ে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদেরকেই ৩-২ ব্যবধানে সিরিজে পরাজিত করেছে গ্রায়েম ক্রেমারের দল।
প্রায়ে ১৬ বছর পর কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের মাটিতে গিয়ে সিরিজে জয় পেলো জিম্বাবুয়ে। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের মাটিতে সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে জিতেছিল ২০০১-০২ মৌসুমে। সেবার সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্ত বাংলাদেশের মাটিতে এসে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশ করে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। এরপর বিদেশের মাটিতে আরেকটি সিরিজ জিতেছিল জিম্বাবুইয়ানরা। সেটা ২০০৮ সালে, নন টেস্ট প্লেইং দেশ কেনিয়ার বিপক্ষে।
হাম্বানতোতায় ৫ ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটি ছিল আজ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২০৩ রান তুলতে সক্ষম হয় লঙ্কানরা। জবাবে শুরুতে দারুণ ব্যাটিং করলেও মাঝে আকিলা ধনঞ্জয়ার দারুণ বোলিং বিপদে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তবে শেষ দিকে সিকান্দার রাজার দারুণ ধৈয্যশীল ব্যাটিংয়ে ৩ উইকেট জয় তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। একই সঙ্গে সিরিজ জিতে নেয় ৩-২ ব্যবধানে।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সিরিজ জয় ২০০০-০১ মৌসুমে। গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, অ্যালিস্টার ক্যম্পবেল এবং হিথ স্ট্রিকদের আমলে। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে স্বাগতিকদের ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছিল তারা। এছাড়া বিদেশের মাটিতে আর বড় কোনো গৌরব ছিল না জিম্বাবুয়ের। এরপর তো বলতে গেলে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট হারিয়েই গিয়েছে।
বর্ণবৈষম্য আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট এখন সবচেয়ে তলানীতে। মাত্র কিছুদিন আগেও আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হেরেছে তারা। সেই দলটি শ্রীলঙ্কায় এসে এতবড় কীর্তি গড়ে দেখাবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল?
প্রথম ম্যাচেই গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে কীর্তি গড়ার সূচকা করেছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথমে ব্যাট করে ৩১৬ রান করার পরও লঙ্কানদের জিম্বাবুয়ে হারিয়ে ৬ উইকেটের ব্যাবধানে। পরের দুই ম্যাচ দাপটের সঙ্গেই জিতে যায় লঙ্কানরা। একটাতে জিম্বাবুয়েকে অলআউট করে দেয় ১৫৫ রানে। ম্যাচ জিতে নেয় ৭ উইকেটে। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের করা ৩১০ রানের বিশাল স্কোর তাড়া করে শ্রীলঙ্কা জেতে ৮ উইকেটে। চতুর্থ ম্যাচে এসে ৩০০ রান করার পরও বৃষ্টি আইনে লঙ্কানরা হেরে যায় ৪ উইকেটে। আজ শেষ ম্যাচে এসে হারল ৩ উইকেটে।
লঙ্কানদের ছুড়ে দেয়া ২০৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর সলোমন মিরে ১৪.২ ওভারেই তুলে ফেলেন ৯২ রান। এরপর ৪৩ রান করে মিরে আউট হয়ে গেলেও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ৭৩ রান করেন। ৮৬ বলে ৯টি বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় এই রান করেন তিনি। তারিসাই মুসাকান্দা করেন ৩৭ রান।
এরপরই যেন মড়ক লেগেছিল জিম্বাবুয়ে শিবিরে। ক্রেইগ আরভিন, শন উইলিয়ামস, ম্যালকম ওয়ালার এবং পিটার মুর দ্রুত ফিরে যান। ১৭৫ রানেই নাই হয়ে যায় ৭ উইকেট। এরপর সিকান্দার রাজা এবং গ্রায়েম ক্রেমার ধৈয্যশীল ব্যাটিং করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। ৩.৩ ওভারে তারা গড়েন ২৯ রানের জুটি।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৪টি, লাসিথ মালিঙ্গা ২টি এবং অ্যাসেলা গুনারত্নে ১টি উইকেট নেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.