কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে মায়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত গরু আনছে বলে খবর পাওয়া গেছ্ ে। এই গরু চোরাকারবারিদের কোনভাবে ঠোকানো যাচ্ছেনা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ । এই মাসে দুদফা বেশ কিছু মায়ানমার থেকে আসা গরু বিজিবি হাতে আটক করে নিলামে বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে । এরপরেও তাদের ঠেকানো যাচ্ছেনা । যার ফলে বাজারে দেশীয় গরুর চাহিদা কম বলে জানান গরু ব্যবসায়ীরা ।
জানা যায়, এই মাসের শুরুর দিকে মায়ানমার থেকে গরু আনার সময় বান্দরবানের আলীকদম হয়ে গর্জনিয়া বাজার নিয়ে আসার সময় বিজিবির হাতে ধরা পড়ে ১৪টি গরু। ১৮ জুন আবারো রামু উপজেলার গর্জনিয়ার মরিচ্যাচর এলাকা থেকে আবারো ৯টি গরু উৃদ্ধার করা হয় । স্থানীয়রা জানিয়েছে ঐদিন প্রায় শ খানেক গরু ছিল । বাকি গরু কোথায় গেল তা জানা দরকার।
মায়ানমারের গরুর কারণে দেশীয় গরুর চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে দেশীয় খামরীদের কাছ থেকে । মায়ানমার থেকে আসা বড় আকারের গরু কম দামে পাওয়ার কারণে কোরবান ঈদে বা বাজার ব্যবসায় মায়ানমারের গরুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলে জানা গেছে। যার ফলে দেশীয় গরু খামার ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা সঠিকভাবে করতে পারছে না। গুনতে হচ্ছে লোকসানের হিসাব।
বেশ কিছুদিন ধরে মায়ানমার থেকে গরুর আসছে বলে খবর পাওয়া গেছে । আর তা গর্জনিয়া থেকে নিয়ন্ত্রন করছে কচ্ছপিয়ার সাবেক ইউপি সদস্য জসিম নামের এক ব্যক্তি। সামনের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মায়ানমার থেকে পুরোদমে গরু আনা শুরু করেছে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ভালবাসা গ্রামের মৃত মোঃ হাসেম এর ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন। তার একটি নিজস্ব সক্রিয় সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে জানা গেছে। আর তা নিয়ন্ত্রন করছে আরেক সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম নামের আরেক ব্যক্তি। জসিম গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সাত হাজার ইয়াবাসহ শহরের বাজারঘাটা এলাকা থেকে র্যাবের হাতে আটক হয়ে বেশ কিছুদিন জেল হাজতে থাকার পর বের হয়ে ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি মায়ানমার থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি দোছড়ি সীমান্ত বাইশারী, আলীকদম হয়ে মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু আনছে বাংলাদেশে ।
গত ১৮ জুন (শনিবার) ১১ বিজিবি ও গর্জনিয়া পুলিশ ফাড়ি যৌথ অভিযানে প্রায় ৬৫ টি গরু থেকে ৯টি গরু গর্জনিয়া ইউনিয়নের মরিচ্যাচর এলাকা থেকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে। একটি বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, জসিম মায়ানমার থেকে গরুর পেটে করে বড় ধরনের ইয়াবার চালার বাংলাদেশে আনছে। তার নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
জানা গেছে দৌছড়ি আশারতলী, ফুলতলী হয়ে বেশ কয়েকটি পয়েন্প হয়ে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা এসেছিল বাংলাদেশে । এখন গরু চোরাকারবারিরা সেই পথ ব্যবহার করে গরু আনছিল। ১১ বিজিবি জানতে পেওে সজাগ হলে চোরাকারবারিরা বর্তমানে আলীকদম পয়েন্ট ব্যবহার করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন যাবত মায়ানমার থেকে গরু এনে গর্জনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়াড়ের্র ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মনজুর হত্যা মামলার আসামী আবুল কাসেম তার আপন ভগ্নিপতি হওয়ার কারনে তার এলাকার মরিচ্যাচর গ্রামের বাঘঘোনা নামক স্থানে গরু গুলো রাখা হয়। যা সেখানে তদারকি করছে করিম নামের আরেক ব্যক্তি। কয়েকদিন রাখার পর গর্জনিয়া বাজার থেকে অবৈধ রশিদ বানিয়ে পাশ^বর্তী বিভিন্ন বাজারে তারা বিক্রি করছে গরু গুলো। আর তাতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
স্থানীয় গরু খামারীরা বলছে , তাদের কারণে দেশীয় গরুর চাহিদা কম । যার কারণে দেশে দিন দিন গরুর খামার কম হতে চলেছে।যদি অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে না পারে তবে দেশীয় গরুর খামার থাকবে না ।
সম্প্রতি স্থানীয় এক যুবক মরিচ্যাচরে মায়ানমারের গরু আছে বলে প্রশাসনকে জানালে ১১ বিজিবি অভিযান চালানোর পরের দিন মাদক ব্যবসায়ী জসিমও তার ভগ্নিপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য তাকে মারধর করতে আসে বলে জানান। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন মায়ানমার থেকে গরু আসা ঠেকাতে সীমান্ত এলাকা কঠোর নজরদারিতে থাকার পরেও কোনভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, জসিম ও আবুল কালাম মেম্বার এর সিন্ডিকেট বহুদিন ধরে মায়ানমার থেকে গরু আনছে তবে এখন কচ্ছপিয়া দৌছড়ি সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে আলীকদম হয়ে এখন গরু আসছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি ১১বিজিবি জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ নাহিদ হোসাইন জানান, সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি অস্ত্র, ইয়াবা,সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম ও চোরাই পথে আনা গরু সহ সব ধরনের পণ্য আটকে সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.