ভাঙ্গন কবলে ঝাউবাগান

মো. নেজামউদ্দিন. কক্সবাজারঃ-
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত কক্সবাজারের ঝাউবাগান দিনদিন আকারে ছোট হতে চলেছে। একসময় ঝাউ বাগানের সেই শো শো শব্দ কানে ভেসে আসলেও এখন আর সেই শব্দ বৈরী আবহাওয়া উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার সৈকতে তীব্র ভাঙনের ফলে ঝাউ গাছ বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণে তা শুনা যায় না ।প্রতিনিয়ত উপড়ে পড়ছে শত শত ঝাউগাছ। গত ১৫ দিনে কক্সবাজার শহর, ইনানী ও হিমছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত তিন হাজারের বেশি ছোট-বড় ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে।
একদিকে যেমন বৈরি আবহাওয়ার কারণে ঝাউবাগান হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমনি সুগন্ধা পয়েন্ট ও ডায়বেটিক পয়েন্ট এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা করার কারণে বেশ ঝাউবন উজাড় করা হয়েছে এমনটা দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে সাগরের পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। বর্ষার মৌসুমে উত্তাল সাগরের উচ্চ জোয়ারে তীর ভাঙছে। তীর রক্ষায় অভিজ্ঞদের মতামত নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। কক্সবাজার সৈকতে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বিভিন্ন পর্যটন পয়েন্টে গত এক দশকে কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেললেও তা কাজে আসছে না। কবিতা চত্বর থেকে লাবণি পয়েন্ট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, সাগরের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় তীরে আছড়ে পড়ছে। ঢেউয়ের চাপে তীর রক্ষায় বসানো জিও ব্যাগগুলো ছিঁড়ে পড়ে আছে। জিও ব্যাগের বাঁধ ছাপিয়ে ঢেউয়ের পানি ঢুকে পড়ছে ঝাউবনে। এতে একে একে ঝাউগাছ উপড়ে পড়ছে। কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এ সড়কেও পর্যটকদের আলাদা নজর কাড়ে ঝাউবন। কটিরও বিভিন্ন অংশে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ও পাকা বøক বসানো হয়েছে। গতকাল হিমছড়ি এলাকায় দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়ায় সাগরের ঢেউ পাকা বøক ছাপিয়ে মেরিন ড্রাইভে আঘাত হানছে। টেকনাফে এ সড়কের কয়েকটি স্থানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিন-চার বছরের মধ্যে হিমছড়ি সৈকতের বালিয়াড়ি বিলীন হয়ে ঢেউ মেরিন ড্রাইভ ছুঁয়েছে। সড়ক রক্ষায় বøক বসিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম।
জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী বেলাল হোসেন বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে ডায়বেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতে এবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। ফলে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। সাগরতীর রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের বালুকাময় সৈকত রক্ষায় কোন ধরনের উদ্ভিদ লাগানো উচিত, সে বিষয়ে কোনো গবেষণা নেই। বালিয়াড়িতে শুধু যত্রতত্র ঝাউগাছ রোপণ করা হচ্ছে। অথচ এক সময়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া যে উদ্ভিদ ছিল, তা সৈকতের ভাঙন রোধে কার্যকর ছিল।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ সরওয়ার আলম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগর দিনদিন উত্তাল হয়ে উঠছে। পানির উচ্চতা বাড়ছে। এর ফলে উচ্চ জোয়ারে কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, শৈবাল পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি স্থানে জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে প্রায় আড়াইশ বড় এবং আড়াই-তিন হাজারের মতো ছোট ঝাউ চারা উপড়ে গেছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, যেসব জায়গায় ভাঙ্গন হয়েছে আমরা তা আপাতত জিও ব্যাগ দিলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি । নাজিরারটেক থেকে শুরু করে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত আপাতত কাজ করা হবে। তিনি আরো বলেন আমরা একটি প্রপোজল দিয়েছিলাম তা আবার ফেরত এসেছে । এখানে আবার পরিবেশবাদীর একটি মামলাও চলমান রয়েছে । কাজ করতে গেলে তাদের বাঁধার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। যদি সঠিকভাবে কাজ করা যায় তবে এই ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ছাড়াও ভ্রমণে আসা পর্যটকেরাও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করতে পারবেন

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.