পর্যটন শহরে যাচ্ছে রেল

মোঃ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ
অবশেষে বহু প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে রেল আসা যাওয়া শুরু করেছে। লাল সবুজের পতাকা নেড়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকার পথে গতকাল বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে গেছে রেল কক্সবাজার এক্সপ্রেস। এর মাধ্যমেই কক্সবাজারবাসির ফুরালো অপেক্ষার প্রহর। বাস্তবে রূপ নিলো কক্সবাজারবাসীর শত বছরের লালিত বহুল কাঙ্খিত স্বপ্ন। কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন রেল লাইন সড়ক। আর তাতে যাতায়াত হবে সুন্দর ও পর্যটনখাতেও বাড়বে ব্যবসা। সব মিলিয়ে আশায় বুক বেধে ছিল কক্সবাজারবাসী। দীর্ঘদিন থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার অর্ধকোটি মানুষ স্বপ্ন দেখছিল এ রেললাইন নির্মাণের। গতকালের যারা যাত্রী ছিল সকলকে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করা হয় রেলওয়ে থেকে । নিরাপত্তার জন্য জেলা পুলিশ কাজ করে। সব মিলিয়ে গতকাল কক্সবাজার রেল ষ্টেশন যেন ঈদ উৎসবে মেতে উঠেছিল। প্রথম ট্রেনে যাওয়া যÍ্রীরা বেশ উৎফুল্ল ছিল।
গতকাল ১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়লো প্রথম ট্রেন। এর মাধ্যমে শুরু হলো বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল। ইতিহাসের পাতায় আজীবন লিপিবদ্ধ থাকবে, তাই দিনক্ষণ ঠিক ছিল আগে থেকেই। শুক্রবার সকাল থেকে ব্যস্ততা বাড়ে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে। বেলা বাড়তেই আসতে থাকেন কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। কড়া নিরাপত্তায় তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

# প্রথম দিনে যাত্রী ১হাজার ২০জন
# ২০টি বগি ব্যবহার করা হয়েছে
# প্রথম ট্রেন চালক আব্দুল আউয়াল রানা

যাত্রীদের পাশাপাশি রেল প্ল্যাটফর্মে জড়ো হন স্থানীয়রাও। সবার মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা। ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরা। তাঁদের অভিমত, ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার আসবো বা বাড়ি ফিরবো কখনো চিন্তা করেনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো আজ। আশা করছি এখন থেকে ট্রেন হবে নিরাপদ যাতায়াত ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। বাণিজ্যিকভাবে রেল চালু হওয়ায় কক্সবাজারে আগের তুলনায় দুই-তিন গুণ পর্যটক বাড়বে। এতে আরও সমৃদ্ধ হবে পর্যটন শিল্প। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপদে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করবে। টহল টিমের পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্স। এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।
কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বদন্যতায় কক্সবাজারবাসীর মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রেল চালুর মধ্য দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করলো কক্সবাজার। এখন থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি এই রেল ঘিরে কক্সবাজারসহ দেশের অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে প্রথম বাণিজ্যিক রেল যাত্রা পরিদর্শনে আসেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু হলো। আন্তঃনগর এই ট্রেন ২০টি বগি নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচল করবে। চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান ট্রেনটিতে কোন কেবিন সুবিধা নেই। এসি শোভন কোচে চেয়ার থাকবে পর্যাপ্ত। জানুয়ারি থেকে আরও কয়েকটি ট্রেন চালু হবে। তবে আপাতত লোকাল ট্রেন চালু হচ্ছে না। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পর্যটন শহর থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার-দোহাজারি রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উলেখ্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পে ব্যয় প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ের অন্য অংশ চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন লিমিটেড (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এ অংশে ভৌত কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ মার্চ। এ অংশে ২০টি সেতুর নির্মাণকাজ হয়। এছাড়া ১০৯টি কালভার্টের মধ্যে ৫৮টি করা হয়েছে। এ অংশের জন্য মালয়েশিয়া থেকে ব্যালাস্ট সংগ্রহ করা হয়েছিল। সবমিলিয়ে কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশন। যা এখন দৃশ্যমান।

 

  1. NUkJMwABcZ বলেছেন

    CfuesYaxlS

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.