জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন: উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে।
মোঃ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শনিবার ঘড়ির কাটা সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়। একটানা বেলা ২টা পর্যন্ত ভোট নেয়া হবে।
জেলা বারের দ্বি-তলায় একটি বুথে ভোট নেয়া হচ্ছে। নতুন ৬৮ জনসহ মোট ভোটার সংখ্যা ৬৫২।
৭ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এম. শাহজাহান এডভোকেট।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সমমনা আইনজীবীদের দুই প্যানেলে ৭টি স¤পাদকীয় পদ ও ৯টি সাধারণ সদস্যপদে ৩৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মোহাম্মদ ইছহাক-১ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জিয়া উদ্দিন আহমদ লড়ছেন। সহ-সভাপতি পদে নুরুল আমিন ও মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) আবদুল শুক্কুর, সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) রাহামত উল্লাহ, পাঠাগার সম্পাদক আবুল হোছন এবং আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এ.বি.এম মহিউদ্দীন।
এই প্যানেলের সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- পীযুষ কান্তি চৌধুরী, আমজাদ হোসেন, আবুল কাশেম-২, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ নুরুল আজিম, খাইরুল আমিন, সোমেন দেব, মীরাজুল হক চৌধুরী ও লিপিকা পাল।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সমমনা আইনজীবীদের মনোনীত প্যানেলে সভাপতি পদে এস.এম নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী, সহ-সভাপতি সাদেক উল্লাহ ও রমিজ আহমদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) মোহাম্মদ এনামুল হক সিকদার, পাঠাগার সম্পাদক মোহাম্মদ শামীমুল ইসলাম এবং আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছৈয়দ আলম।
সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থীরা হচ্ছেন-আবুল কালাম ছিদ্দিকী, মোহাম্মদ আবুল আলা, সব্বির আহমদ, মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন ফারুকী, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, ছৈয়দ আলম, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক খান, এ.এইচ.এম শাহজাহান এবং মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম (টিপু)।
ভোটারদের মতে, সভাপতি পদে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সভাপতি প্রার্থী এড. মোহাম্মদ ইসহাক খুবই সহজ সরল ও উদার মনের মানুষ। তিনি বর্তমান সরকারের জিপি। আইন পেশায় ব্যক্তিগতভাবে কাউকে কোন ক্ষতি করেননি। পারলে উপকার করেছেন। ব্যক্তিগত ইমেজও রয়েছে তার। গতবারের নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়ায়ে তিনি যৌথ সভাপতি হন। এবারও তাকে সভাপতি নির্বাচিত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপরদিকে বিএনপি ঘরানা থেকে সভাপতি প্রার্থী এসএম নুরুল ইসলাম ন¤্র-ভদ্র ও সজ্জন লোক হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ৬৫২ জন ভোটারের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ভোটার বেশি। নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া আইনজীবীদের মাঝেও বেশীরভাগ তাদের ভোট। তাছাড়া গতবারের নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বিধাভক্তি থাকলেও এবার তাদের মাঝে চমৎকার বোঝাপড়া রয়েছে। গুনে গুনে সব ভোট নিজেদের বাক্সে ফেলার ফন্দি করছে নেতারা। সে হিসেবে সভাপতি পদে এসএম নুরুল ইসলামের জয়ের সম্ভাবনা বেশী দেখছেন ভোটাররা।
ভোটারদের বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে, বিএনপি-জামায়াতের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী সব শ্রেনীর আইনজীবীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তিনি প্রবীন আইনজীবি হলেও নবীনদের সাথে তার সম্পর্কটা অতুলনীয়। ১৯৯৬ সাল থেকে অদ্যবধি তিনি জনপ্রিয় একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। পেশাগত জীবনে জুনিয়ার-সিনিয়র সমন্বয় করে চলেছেন। নতুন আইনজীবীরাও তার চেম্বারে গেলে হাত বাড়িয়ে সহযোগিতা করেন। ছুটে যান অপরের আপদ বিপদে। ভোটের মাঠে বিজ্ঞ আইনজীবীরা এসব চুলচেরা বিশ্লেষন করছেন। মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী ২০১১ সালে জেলা বারের সহ-সাধারণ সম্পাদক (অর্থ) দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটে সদস্য নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদে জিয়া উদ্দিন আহমদ ভোটের হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে পারেন বলে ধারণা ভোটারদের। তার পিতা প্রফেসর নুর আহমদ এডভোকেট আদালত অঙ্গনের পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। পিতার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের মাঝে সুন্দর অবস্থান তৈরী করেছেন তিনি। তরুণ আইনজীবীদের একটা অংশ জিয়া উদ্দিন আহমদের জন্য কোমর বেঁধে কাজ করছেন। নিজেও রাত দিন প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টা করছেন। জিয়া উদ্দিন আহমদ ২০০২ সাল থেকে আইন পেশায় জড়িত। তিনি ২০১২ সালে আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে আপ্যায়ন ও সদস্য ছিলেন তিনি। পেশাগত জীবনে তিনি অনেকটা ক্লিন ইমেজের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে, তরুণ আইনজীবীরা এক হলে তিনি সব হিসেব পাল্টাবেন- এমনটি ধারণা বিশ্লেষকদের।
প্রসঙ্গত, জেলা আইনজীবী সমিতি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের বর্ষের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয়। এতে যৌথভাবে সভাপতি নির্বাচিত হন আবুল কালাম ছিদ্দিকী ও মোহাম্মদ ইছহাক-১। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে আ.জ.ম মঈন উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৫২ জন। সেখানে নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৬৭ জন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.