“গনতন্ত্রের বুলিতে জনগণের পকেটে রাষ্ট্রিয় চোখ”
জাহেদ কলম থেকেঃ
বিশ্বের কোন দেশে রাজতন্ত্র বা প্রজাতন্ত্র এমনকি গণতন্ত্রে এ রকম রাজনীতি চলে কিনা জানিনা। তবে সমাজনীতি বড় বেশি পরিবর্তন হচ্ছে প্রয়াত জগত বিখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা ভাসানী,শেরে বাংলা,হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবর রহমানের বাংলাদেশে।
গনতন্ত্র বলতে রাষ্ট্র কতৃক জনগণের নিরাপত্তায় ভয়হীন সমাজ ব্যবস্থা বুঝি আমি । জনগণকে উৎকন্ঠায় রাখা কোন রাজা বা প্রধানমন্ত্রীর কাজ নয়। গনতন্ত্র এভাবে সাধিত হয় না। কদিন আগে সংবিধান প্রনেতা ডঃ কামাল হোসেন বলেছেন”বর্তমানে রাজনীতিতে জনগণের কোন মুখ্য ভূমিকা নেই”।
তৃণমুল থেকে প্রয়াত শেখ মুজিবর রহমান বা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মতো কোন নেতা আর মাঠ থেকে উঠে আসতে আমরা দেখিনা! অথচ জানতাম মেধা থাকলেই প্রকাশিত হবে। কিন্তু রাজনীতিতে মেধাবীরা অনুপ্রানিত হচ্ছেনা। আমাদের রাজনীতির পরিবেশের কারনে বলে মনে হচ্ছে অনেকের। যেমনটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র আমেরিকায় বর্তমানে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনীতিবিদ না হয়েও, সে নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট হিসাবে। কারন প্রভাব প্রতিবিত্ত আর ক্ষমতাবান হলেই রাজনীতিতে রাজা হওয়া যায়,ট্রাম্প বড় প্রমান।
আমেরিকা যতই মুখে গনতন্ত্রের শুদ্ধ চর্চার কথা বলুক না কেনো সেটা বিমান বালার হাসি কিংবা মার্সিডিজ গাড়ির পাশে দাড়ানো সুন্দরী ললনার মুচকি হাসির চেয়ে মারাত্বক। হয়তো অনেকে ভাবতে পারেন আমরা সমালোচনা করছি,সরকারের আসলে তা নয়। রাষ্ট্রের নাগরিক যদি রাষ্ট্রকে নিয়ে চিন্তা না করে সে রাষ্ট্র মৃত হয় নয়তো গা ছেড়া ভাব।
আমার জানামতে বাংলাদেশে ৩৯ থেকে ৪০টি মন্ত্রানালয় রয়েছে। যেদল সরকার নির্বাচিত হয়ে গনতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসে। সে সরকার মন্ত্রানালয় সাজায় নিজস্ব সাংসদ দিয়ে। তবে আওয়ামীলীগ বা বিএনপি কিংবা জাতীয়পার্টির সমালোচনা নয় । যা বাস্তব মনে হয় তা বলছি। অনেকে ভয় দেখায় সরকারের বিরুদ্ধে যাতে লেখা না যায়। আমার মতে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সময়ে যত মিডিয়া আত্বপ্রকাশ করেছে বিশ্বে কোথাও নেই। এতো স্বাধীনতা দিয়েছে কথা বলার।
গত ৬ মাস পুর্বে দুবাই সিটিতে ২২তলায় আগুন লেগেছিলো। ২ঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। পৃথিবীর কোন মিডিয়া বলতে পারবেনা কতো জন লোক আহত বা নিহত হলো। কিছুদিন পুর্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম শ্রীলংকা ও ইংল্যান্ড সফর করে আসলো সে দেশের মানুষ অবাক হয়েছে। বাংলাদেশ টিমের সাথে এতো মিডিয়া দেখে।
বলতে চেয়েছি আমরা সাংবাদিকেরা তেলবাজ আর দালালীতে ব্যস্ত। হলুদ আর অপসাংবাদিকতা সমাজকে দুষিত করছে। আজকাল সাধারণ মানুষ মনেকরে কাগজে ওঠা সব সত্য নয়। টাকা দিলে সব হয় বলে ধারণা জম্মে জনমনে । বড় বিচিত্র হয়ে গেছে সাংবাদিকতা। সেদিন বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর শেষে সংবাদ সম্মেলন করলেন । প্রতিবারেই মিডিয়াকে সুযোগ দেয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আজব আমার দেশের বড় বড় সাংবাদিকেরা তেল মারা আর প্রশংসা মন্ত্র বলতে বলতে গনমানুষের কোন কথাই বলেন নি।
সাংবাদিকতায় যদি গনমানুষের আকুতি ফুটে না ওঠে এটা কিসের সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা দালালী হতে পারেনা। দালালী সাংবাদিকতা নয়। এসব ছাড়তে হবে সাংবাদিকদের । নিজের অর্জিত সম্মান হারিয়ে গেলে নিজেকেই ফিরিয়ে আনতে হয় সম্মান। পৃথিবীর সব দেশে মিডিয়াকে সম্মান করে। মন্ত্রী,সচিব,সরকারি বড় বড় কর্মকর্তা সবাইকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ভিন্ন দৃষ্টিতে থাকায়।
সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের কষ্টে যে দল কান্না করেনা। সে সব রাজনীতি অন্তঃসারশূন্য মনেহয় । বাংলাদেশে কি রকম গনতন্ত্র চলমান আমি বোধগম্য নয় । সবকটি দল ক্ষমতায় আসার আগে পাবলিক প্রীতি দেখায়। পরে জনগণের কথা ওদের কানে পৌছাতে বছর চলে যায়। আমরা যদি দেশের উন্নয়নমুলক কাজগুলো সেনাবাহিনী দ্বারা ১৫ বছর বাস্তবায়ন করতে পারি। মনেহয় সত্যিই সোনার বাংলাদেশ হতো। কেননা এখন ১০০% বাজেটে সমাজ উন্নয়নে কাজ হয় ৪০% বাকি ৬০% বোয়াল মাছের পেটে। এটাই বড় বাস্তব আজ।
অনেকে বলবে সেনাবাহিনী ঠিকাদারি করবে কেন? সেনাবাহিনী দেশের সার্বিক রক্ষাকবজ আর শেষ সম্পদ। হায়রে আবুল মার্কা ধারনা বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি জাতিসংঘের অধীনে সুদান,আফ্রিকায় রাস্তার কাজ করতে পারে,পাবলিক টয়লেট বানাতে পারে তবে নিজ দেশকে সোনা বানাতে পারবেনা কেন?
আজ আমরা দেখি নেতার ছেলে নেতা হয়,জজের ছেলে জজ। আর বেসরকারী জরিপে এখনো ৩০লাখ শিশু বাংলাদেশের ফুটপাতে ঘুমায়। তারপরেও সমাজতন্ত্র খুজি, গনতন্ত্র খুজি। নেতার বিবি ও মহিলা দলের প্রেসিডেন্ট পদে বসে আর মরিয়ম হয় গার্মেন্টস কর্মী। কোন নাগরিক কি স্বপ্ন দেখতে পারেনা নেতা হবার। এটাই কি গঠনতন্ত্র নাকি অপরাধ? দৃশ্যটি এমন তাহলে নেতা নেত্রীর ছেলে মেয়ে আগামীতে রাজা হবে মন্ত্রী হবে। আর গ্রাম বাংলার কোন উদিয়মান রাজনীতিবিদ কারাগারে ঘুমাবে।
চরম সত্য বাংলাদেশে আর হয়তো তৃণমূল হতে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেনা। উত্তরাধিকার সুত্রে সকলে নেতা নেত্রীর ছেলেমেয়েরা আসন পেতে বসবে অথচ বারাক ওবামা তৃণমুল হতে উঠে আসা প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বড় বেশি আজব বিষয়। আমাদের মন্ত্রীদের হাবভাব দেখে। মাসে মাসে ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার আর বিমানে ভ্রমন অথচ গ্রামের মানুষকে চিনেনা মন্ত্রী। বৃটিশ আমল হতে অনিয়ম নিয়ম হয়ে গিয়েছে। বারাক ওবামা লাইনে দাড়িয়ে ক্যাফেটেরিয়া হতে নাস্তা সংগ্রহ করে,বৃটিশ রানী উইলিয়াম কেট নিজে বাজার করে,ডেভিট ক্যামেরুন নিজে ফ্রিজ বহন করে আর আমাদের মন্ত্রী এমপিদের যে তাপ। সে তাপে জনগন পুড়ে ছাই হচ্ছে। কষ্ট এসব দেখে।
অতি সহজে ৪৬ বছরে আর এসব অনিয়ম পাল্টাতে পারেনি সোনার বাংলাদেশ। গনতন্ত্রের সংজ্ঞা কাকে বলে সেটা রাজনীতি বিষয়ে পড়ুয়া ছেলেরা ভালো জানবে। পৃথিবীতে এরকম দেশ চলে কিনা জানিনা। ফুটবল কখনো একার খেলা নয়।মেসি একা কিছু পারবেনা বাকি ১০জন না হলে। ঠিক তেমনি জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন সোনার বাংলা গঠনে তিনি একাই যুদ্ধ করছেন। প্রতিভাবান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম,শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইয়েদ আহমেদ পলকের মতো চৌকস মন্ত্রী নিয়ে।
স্বাধীনতার ৪৬বছরের ইতিহাসে জেনেছি।
যে মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে মন্ত্রী বানানো হয় সে মন্ত্রনালয়ের নামের যথার্থ বিপরীত হয়। বিশ্বের উন্নত দেশে যে লোক যে কাজে পারদর্শী সে লোককে সে মন্ত্রনালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর প্রিয় বাংলাদেশে আইনমন্ত্রী হতে আইন পড়তে হয় না। চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে চট্রগ্রামের অধিবাসী হতে হয়না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হতে তেমন শিক্ষিত হতে হয়না। কৃষি মন্ত্রী হতে কৃষি ডিপ্লোমা ও পড়তে হয়না, কোন রকমে জোট বেধে এমপি হতে পারলেই স্বপ্ন দেখে মন্ত্রী। বড় বিচিত্র রাজনীতি।
এমনকি জীবনে বিমানে চড়ে পর্যটক হয়নি।সে রকম মানুষও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। আর না বুঝে কাজ নিলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বহনকারী বিমান ও লোকাল বাস হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রী হতে বৈদেশিক বানিজ্য বুঝতে হয়না। এমনকি বানিজ্য শাখায় না পড়েও মন্ত্রী হতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় হতে কখনো ঠিকাদারী বিজনেস ও যোগাযোগ বিষয়ে পড়তে হয়না। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হতে নাটকে অভিনয় করলেই হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হতে কখনো সীমান্তের নিরাপত্তা বুঝতে হয়না।
খাদ্য মন্ত্রী হতে খাদ্য মজুদ বিষয়ে বুঝতে হয়না,পুর্বে ধর্ম মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও সে হতে পারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রী হয়ে যায় বানিজ্য মন্ত্রী। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী হতে সামাজিক বিষয় বুঝতে হয়না। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান সমাজবিজ্ঞান পড়ুয়া ছাত্র। বোটানীতে পড়ুয়া ভার্সিটি টানা মেধাবী ছাত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রী হয়। কখনো কখনো আমরা দেখি আওয়ামীলীগ বা বিএনপি সরকার ঘটন করলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ৫ মাস পরে অর্থ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ৬ মাস পরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ১বছর পর হয়ে যায় ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী পরে দায়িত্ব পালন করে শিল্প মন্ত্রণালয় কিংবা তথ্য মন্ত্রীর।
অন্যদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী পরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী হয়ে যায় ভূমি মন্ত্রী,স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী একদিন বসে যায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। ডাক ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী হয় রাজাকার যুদ্ধাপরাধী কিংবা মুফতি ও শাইখুল হাদিস,নৌ-পরিবহন মন্ত্রী হয়ে যায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী হঠাৎ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী উদ্বোধন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোন অনুষ্টান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী হয় শিক্ষামন্ত্রী। রেল মন্ত্রণালয়ের রেল মন্ত্রী এক বছরেই আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রীকে দুর্যোগ নিয়ে পড়ালেখা করতে হয়না। এভাবে ৪৬ বছরে কত মন্ত্রী দেখেছে তার কোন হিসাব নেই। তবে জনগন এসব আর দেখতে চায় না। ভারতীয় বাংলা ছবির মতো ফাটাকিস্টের মতো মন্ত্রী চাই। সমাজ পরিবর্তনে সরকারের টাকা যেনো সঠিক কাজে সঠিক পরিকল্পনায় ব্যয় হয় সেটাই চায়। কেননা সবকিছু গনতন্ত্রের বুলিতেই জনগনের পকেট থেকে যায়,কারো বাপের পকেট থেকে নয়। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ হতে পারেনা।
জাহেদ সাংবাদিক ও কলাম লেখক
zahednews@gmail.com

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.