খাদ্যের সন্ধানে লোকালয় হনুমান

মোজাম্মেল হক, গোয়ালন্দঃ

প্রায় ১ মাস হলো হনুমানটিকে গোয়ালন্দ শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে। প্রথমদিকে সে মানুষজন হতে গাছের ডালে,ঘরের চালে,ভবনের ছাদে উঠে দূরে দূরে থাকত। অনেকেই বিরক্তবোধ করে তাকে তাড়িয়ে দিত।

কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সে অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে মিশে গেছে লোকজনের সাথে। টিকে থাকার তাগিদে সঙ্গীবিহীন হনুমানটি মানুষের সাথে এভাবে মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

স্হানীয়রা জানান, প্রায় মাসখানেক আগে হনুমানটিকে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর সে শহর এলাকায় চলে আছে।দক্ষিনাঞ্চল হতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসা যে কোন যানবাহনের ছাদে উঠে হনুমানটি এ এলাকায় চলে আসে । এভাবে মাঝে মধ্যেই এ এলাকায় হনুমান চলে আসার ঘটনা ঘটছে। নিরাপদ আবাসস্হল ও খাদ্যের অভাবে তারা তাদের নিজস্ব এলাকা ত্যাগ করে থাকে এভাবে চলে আসছে বলে অনেকের ধারনা।

সোমবার বেলা ১ টার দিকে বিশাল দেহের এ হনুমানটি গোয়ালন্দ বাজার রেলগেট এলাকায় চলে আসে। ক্ষুধার্ত হনুমানটি এখানে মজিবর রহমান নামের এক ফল ব্যবসায়ীর দোকানে ঢুকে পড়ে অবলীলায়।দোকানদার তাকে একটি আনার ফল দিলে সে দীর্ঘ সময় ধরে ফলটি খায়।এ সময়ের মধ্যে সে দোকানের অন্য কোন কিছু খায় নি কিংবা ক্ষতি করেনি।

অতঃপর হনুমানটি পাশের একটি খাবার হোটেলে গিয়ে মানুষের মতো বেঞ্চে বসে পড়ে। নারী হোটেল মালিক সহিতুন নেছা হনুমানটিকে তাড়িয়ে না দিয়ে কিছু খাবার খেতে দেন। এ সময় আরো অনেকেই হনুমানটিকে আম,কলা,বাদাম,পাউরুটি
প্রভৃতি খাবার দেয়।

সে যতটা সম্ভব খেয়ে সেখান থেকে চুপচাপ চলে যায়। এ সময় হোটেলের অন্যান্য খদ্দেররা বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন।কিন্তু কেউ কাউকে বিরক্ত করেনি।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরের প্রচন্ড রোদে ক্লান্ত হনুমানটি গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি দোকানে ঢুকে মেঝেতে শুয়ে পড়ে। দোকানদার ফ্যান ছেড়ে দিলে হনুমানটি ঠান্ডা বাতাসে দীর্ঘক্ষন ঘুমিয়ে নেয়।জেগে ওঠার পর রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক হনুমানটির মাথায় হাত বুলিয়ে পরম মমতায় আদর করেন।হনুমানটি সে আদর বেশ উপভোগ করে।

প্রত্যক্ষদর্শী যুবক মুক্তার মাহমুদ, তৌহিদ হোসেন,রাজু আহমেদ সহ অনেকেই বলেন,মানুষের সাথে এভাবে স্বাভাবিকভাবে কোন হনুমানের মিশে যাওয়া এর আগে তারা দেখেনি।লোকজনের মানবিকতা দেখে খুব ভালো লেগেছে।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন বলেন,গোয়ালন্দের করোনা পরিস্হিতি খুবই খারাপ।গত শনিবারও হাসপাতালে ২৬ জনের নমুনা পরিক্ষায় ২২ জনেরই পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মারা গেছেন।ঘরে ঘরে পরিক্ষা না করানো রোগীর সংখ্যা প্রচুর। কার কখন উপরের ডাক এসে যায় তা নিয়ে মানুষজন শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্হায় লোকজন একটু বেশীই মানবিক হয়ে উঠেছেন।হনুমানটির সাথে মানবিক আচরন হয়তো তারই বহিঃপ্রকাশ।

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, হনুমানটি হয়তো কোন কলার ট্রাকে করে সুন্দরবন এলাকা হতে এদিকে চলে এসেছে। এখানে আসার পর সে সঙ্গীবিহীন হয়ে গেছে। তাই সে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষের সাথে স্বাভাবিক আচরন করছে।কারো কোন ক্ষতি করছে না।মানুষও ক্ষতি করে না এমন কোন প্রানী পেলে স্বভাবতই ভালোবাসে।খাবার দেয়,সহযোগিতা করে।তিনি আরো আরো বলেন, হনুমান ও বানরের জ্ঞান -বুদ্ধি অনেক প্রবল।ওরা বোঝে কেন পরিবেশে কিভাবে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হয়।এ সময় তিনি সকল প্রানীর প্রতি এভাবে মানবিক হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.