নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
দিনদিন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে জোরদার হচ্ছে কোটা আন্দোলন। গত কয়েকদিন চুপ থাকলেও গত শুক্রবার থেকে আবারো আন্দোলনকারিরা মাঠে নেমেছে। গতকাল ( শনিবার) আন্দোলনকারিরা শহরের আলীর জাহাল এলাকা থেকে মিছিল শুরু করে শহরের প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে । যার কারণে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দিনদিন অস্থির হচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার । শুরুতে তেমন আন্দোলন দেখা না গেলেও এখন প্রতিদিন আন্দোলনকারিদের শো ডাউন-মিছিল প্রতিদিন হচ্ছে। গত শনিবার বিকালে শহরের আলীরজাহাল এলাকা থেকে হাজারো ছাত্র জনতার সমন্নয়ে শুরু হয় মিছিল । সেখান থেকে শুরু করে তারা শহরের প্রধান সড়কে মিছিল নিয়ে বের হয়। তারা হাতে প্লে কার্ড নিয়ে ‘আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে, আমার ভাই খুন কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই, লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে, সন্ত্রাসীদের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও, তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, বায়ান্নের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি ¯েøাগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো কক্সবাজারের রাজপথ। আন্দোলনকারিদের একজন জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলাম সারা দেশে । কিন্তু একটি মহল আমাদের ছাত্র সমাজকে এই দাবি থেকে সরাতে আমাদের ভাইদের গুলি করে হত্যা করেছে । আমরা সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারেও পুরো কলেজ স্কুল পড়–য়া ছাত্র ছাত্রী সাধারণ মানুষসহ আন্দোলন চালিয়ে যাবো ।
কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে মৃত্যু ও সহিংস ঘটনার বিচার দাবিতে কক্সবাজারেও শিক্ষার্থী-জনতা সম্মিলিত বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এদিকে গত শুক্রবার (২ আগস্ট) জুমার নামাজের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচীর আলোকে শহরের কালুর দোকান এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থী-জনতা। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কক্সবাজার শহরের প্রবেশদ্বার লিংক রোডে যান। সেখানে অবস্থানের পর বিকেলে পুনরায় কালুর দোকান এসে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক নিরাপত্তায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবক ও সাধারণ মানুষও শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিলটি শেষ করে যে যার গন্তব্যে চলে যায়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সরকারদলীয় সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নগ্নভাবে ব্যবহার, সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেয় বিক্ষোভে অংশ নেয়ারা। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ সরকারে পদত্যাগেরও দাবি তুলেন তারা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের টানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল জুমাবারেও তারা মাঠে ছিল। মিছিলে ¯েøাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে মহাসড়কের লিংক রোড ও আশপাশের এলাকা। বিক্ষোভের মাঝখানে কেউ যেন বিশৃংখল কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে চারপাশে অবস্থান নেয় শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি টিম।
এদিকে আন্দোলনের শুরুতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও কোটা আন্দোলনকারীরা হামলা করা হয়েছে বলে জানা গেছে । পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান আসলে হামরাকারীরা পালিয়ে যায়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাৎক্ষনিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, হামলায় জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক সদস্য আহত হয়েছে।
অভিযোগ উঠে, সাদা শার্ট পড়ে শিক্ষার্থীদের ভেতর ঢুকে পড়ে দুর্বৃত্তরা। তারা মিছিল নিয়ে রহস্যজনক ভাবে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকার চেষ্টা করে। বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকছে দেখে তাদের বাঁধা দেয় কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজে ইন্টারনাল পরীক্ষা চলছিল। বাঁধা দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও মিছিলকারিদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আহত হন অনেকে।
সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রনেতাদের দাবি, চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ছাত্রসংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পর ১/১১ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার গঠন হলে কলেজ ক্যাম্পাস হতে দৃশ্যমান বিতাড়িত হয় নব্বই দশক হতে কর্তৃত্ব চালানো ছাত্র শিবির। গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালালেও কলেজে কর্তৃত্ব চালাতে না পেরে কোটা আন্দোলনের কাঁধে ভর করে সরকারি ছাত্র শিবির সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকার চেষ্টা চালায়। ব্যর্থ হয়ে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির মোটরসাইকেল জ্বালানোসহ ভাংচুর চালানো হয়। অথচ তাদের দাবি নিয়ে হয় রাস্তায় না রাষ্ট্র প্রতিনিধি হিসেবে জেলা প্রশাসনের কাছে যাওয়ার কথা।
পরে সেই রেশ চলে যায় জেলা শহরে। সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে কালিমা লেপন করে সুযোগ সন্ধানীরা জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা জাসদ, জেলা জাতীয় পার্টির অফিসসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় নগ্ন হামলা ও ভাংচুর চালায়। কোপানো হয় ছাত্রলীগের চার নেতাসহ অনেককে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মা. মাহফুজুল ইসলাম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে যারা নৈরাজ্য চালিয়েছে তাদের সনাক্তে মাঠে রয়েছে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে স্থির ও ভিডিও চিত্র এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নৈরাজ্যকারিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:০৫
আগের খবর
পরের খবর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.