গত ২৭ আগস্ট সাবেক পার্লামেন্টেরিয়ান, সাবেক রাষ্ট্রদূত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রতিষ্টাতা শ্রদ্ধেয় ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর ১২তম মৃত্যু বার্ষিকী। এই দিনে কক্সবাজারবাসি শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছে। এমন মানুষদের পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন মনে রাখবে জাতি।
প্রথমে আমার কথা দিয়ে শুরু করি পরে আমার মায়ের কথা পড়তে পারবেন।
শ্রদ্ধেয় মামা ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বড় ভাই মরহুম মনির আহমদ চৌধুরী সম্পর্কে আমার আপন ফুফা। যার কারণে আমরা প্রায় সময় ফুমার বাড়িতে বেড়াতে যেতাম আর সেখানেই দেখা মিলত এমন অসাধারণ সমাজ সেবক শ্রদ্ধাভাজনের । আগে বলে রাখি বাবা রামু খিজারিতে মেট্রিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন শ্রদ্ধেয় ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বাড়িতে থেকে। মেট্রিক পাশ করার পর বাবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য কুমিল্লা চলে যান। বয়সে তেমন তফাৎ না থাকার কারনে আমার মেঝ মামা ( মরহুম আলহাজ¦ মোস্তাক আহমদ) আমার বাবা ও শ্রদ্ধেয় ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বন্ধু ছিলেন। এমপি হওয়ার খুশিতে আমার মেঝ মামা শ্রদ্ধেয় ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীকে একটি হরিণ উপহার দিয়েছিলেন যার ছবি এখনো ওসমান ভবনে রয়েছে। আমার বাবা এলজিইডির সাবেক সহকারি ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরিরত ছিলেন ১৯৯৯ পর্যন্ত। এবং একই বছর ডিসেম্বরের ৬ তারিখ ইন্তেকাল করেন। এখন বলছি আমার দেখা ছোটকালের বা ৯০ এর পরের কথা বাবা যখন বেচে ছিলেন। যখন রামু মন্ডলপাড়াস্থ বাড়িতে যেতাম সেখানে দেখতাম সবসময় বাড়ির সামনেও ভিতরে প্রচুর মানুষ নিয়ে তিনি আলাপ আলোচনায় থাকতেন।আমি ফুমার বাড়ি থেকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। শীতকালে প্রায় সময় টাই আর ব্লেজার পরিহিত থাকতেন তিনি। মুখে সাদাকালো দাড়ি তখন। দেখতে অসাধারণ সুন্দর একজন মানুষ। রাষ্ট্রদূত হওয়ার পর একবার নাইক্ষ্যংছড়ি কলেজে আসলেন অতিথি হয়ে । তখন বাবা নাইক্ষ্যংছড়িতে এলজিইড়িতে চাকরিরত। কলেজের প্রোগ্রামে আগে প্রথমে বাসায় ডুকলেন আমাদের সকল ভাইবোনদেরকে আদর করে গিয়েছিলেন। তখন বাবা নাইক্ষ্যংছড়ি কলেজের অভিভাবক সদস্য ছিলেন।
১৯৯৪ সালের কথা তখন তিনি নিয়মিত কক্সবাজার মহিলা কলেজে সময় দিচ্ছিলেন। তখন কলেজ সরকারি হয়নি তারপরেও কলেজের বেশ সুনাম ছিল। আমার বাবা আমার দুজনের বড়বোন রোকেয়া আপাকে ভর্তি করাতে নিয়ে আসলেন মহিলা কলেজে, আমিও সাথে এসেছিলাম। ওনার অধ্যক্ষ রুমে ডুকতেই তিনি এমন একটি চমৎকার হাসি দিয়ে মা এবং বাবার নাম ধরে বললেন তোরা এখানে? বলে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। বাবা রোকেয়া আপার দিকে তাকিয়ে বললেন মেয়েকে ভর্তি করাতে হবে এবং হোস্টেলে রাখতে হবে। সেদিন রোকেয়া আপাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়ে চলে আসলেন বাবা।আমার মাকেও তিনি নাম ধরে ডাকতেন। মা ওসমান বদ্দা বলে সংবোধন করতেন।
তারিখ মনে নেই বাবা মাঝে মধ্যে ফুমার বাড়িতে যেতেন কক্সবাজার যাতায়াতের সময়। ফুমা বাবার ছোট বোন। বাড়ি সবার একভিটেতে হলেও বিল্ডিং আলাদা হওয়ার কারণে প্রথমে ফুমার বাড়ি পড়তো (এখনো সবার বাড়ি এক ভিটেতে)। বাড়ি পার হয়ে যাওয়ার সময় জানালা দিয়ে বাবাকে দেখে সোজা বাড়িতে ডুকে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো কখন আসলি ? (বাবাকে তিনি নাম, ধরে ডাকতেন) আমাকে জানালি না কেন। তখন বাবাকেসহ নিয়ে উনার বাড়িতে গিয়ে একসাথে দুপুরের খাবার খেলেন। বাবা যেহেতু সেই পরিবারে থেকে পড়ালেখা করেছেন সবাইকে আগে থেকে চিনতেন।
এই লেখা যখন লিখছি আমার মা পাশে বসে থেকে বলছিলেন, আমাদের গ্রামের বাড়িতে শ্রদ্ধেয় ওসমান সরওয়ার আলম চেীধুরীর বড় ভাই মরহুম মনির আহমদ চৌধুরীর একটি খামারবাড়ি ছিল । যখন শীত মৌসুম আসতো তখন সবাই খামারবাড়িতে আসতেন এবং মা বিভিন্ন রকমের পিঠা বানাতেন ওনাদের জন্য। সাথে আরেকজন আসতেন তিনি আমার ফুফা মাঝিরকাটার মরহুম সুলতান আহমদ চেয়ারম্যান।
আমার পাশে থেকে মা বলছিলেন,(আলহাজ্ব গোল চেহেরা খানম)ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্টজন ছিলেন। যখন বঙ্গবন্ধু বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী লাভ করে তখন কক্সবাজার থেকে এমপির নির্বাচন করেন ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী । তিনি বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। এবং বঙ্গবন্ধুর কোন বার্তা থাকলে তা ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী প্রচার করতেন। পাকিস্তান পিরিয়ড়ে খুব সাবধানে কাজ করতে হতো । আমি জানি স্বাধীনতা যুদ্ধে যখন ওসমান বদ্দাকে ঘরে পাওয়া যায়নি তখন উনার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল স্বাধীনতা বিরোদীরা। পাকিস্তানী সেনারা যখন তাদের পরিবারের লোকদের মেরে ফেলার জন্য তুকাচ্ছিল তখন মনির বদ্দার (মরহুম মুনির চৌধুরী) বড় সন্তানেরা (বেদার, আবছার, ও আরো কয়েজন তাদের সঙ্গী আবুল কালাম সাথে) আমার গ্রামে গর্জনিয়া জুমছড়িতে এসে আতœরক্ষা করেছিল দিনে পশ্চিমের শাহসোজা রোড়ের পাশে জঙ্গলে অবস্থান করতো রাতে হলে বাড়িতে চলে আসতো।
যখন ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর আব্বা যেতেন তখন খামারবাড়ি ছিল নতুনবাজারে। মরহুম, মনির আহমদ চৌধুরী জমিজামার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার শুশুর বাড়িতে খামারবাড়ি তৈরি করে সেখানে ধান উঠাতেন। এর আগে খামারবাড়ি ও ধানের গোলা ছিল নতুনবাজারে। সেখানে কে বা কারা ধানের গোলায় আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিলে আমার শশুর বাড়ি সাচি সিকদারের বাড়িতে খামারবাড়ি করে। এবং নিয়মিত সেখানে থাকতেন। যার ফলশ্রæতিতে আমার ননদকে বিয়ে করে আতœীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হন মনির আহমদ চৌধুরী। সেই থেকে পারিবিকভাবে বন্ধন আরো দৃড় হয়। আমি যখন ইউনিয়ন পরিষদ কাজের জন্য উপজেলা আসতাম তখন ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বাড়িতে উঠতাম । তিনি আমাকে নিজের বোনের মতো দেখতেন। তিনি আমাকে সাগ্রহে ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার নির্বাচিত করেছিলেন। রামু গেলে আমি ও রওশন আক্তার আপা (ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর স্ত্রী) একসাথে থাকতাম। আপা মৃত্যুর আগে আমার সাথে দেখা হয়েছিল তখন আমাকে বলেছিল কাজলকে (বর্তমান রামু উপজেলা চেয়াম্যান) নিয়ে আমার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন। কিন্তু আসা হলো না আপার। আমি গেলে আপা কখনো ঘরে যারা কাজ করতো তাদের দিয়ে রান্না করাতেন না । তিনি নিজে রান্না করে করে খাওয়াতেন।ঠিক তেমনি আমার বাড়িতে আসলে আমিও নিজে রান্না করে খাওয়াতাম । আমরা একে অন্যকে আপা বলে সংবোধন করতাম। বড়বিলে জমি বেশি থাকার কারণে নিয়মিত গ্রামে আসতেন। আমার মেঝ ভাইয়ের (আলহাজ¦ মোস্তাক আহমদ) ও তোমার বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। আমার মেঝ ভাই(আলহাজ¦ মোস্তাক আহমদ) জাগের চৌধুরীর বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেছেন। গ্রামে ওসমান বদ্দা আসলে ঈদের মতো মনে হতো । সবাইকে নিয়ে উঠানে বসে আলাপ আলোচনা করতেন।
মরিচ্যাচরের মানুষ মনির চৌধুরী ও ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীকে আজীবন মনে রাখবে। মরহুম মনির আহমদ চৌধুরী আমাদের বাড়ির দক্ষিণ সাইটের সিমানা নিয়ে বিরোধ মিমাংসা করে দিয়েছিল। এখনো মনে পড়ে সেই দিনগুলো। ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী যখন নির্বাচন করছিলেন তখন নিয়মিত আমার বাড়িতে বৈঠক হতো। সেসময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। আজকে মরহুম ওসমান মরওয়ার আলম চৌধুরীর মৃত্যু বার্ষিকী , আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি।
(আরো অনেক কথা যা বয়সের ভারে বলতে পারেনি আমার মা)
লেখকঃ
মোঃ নেজাম উদ্দিন
সংবাদকর্মী
কক্সবাজার।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.