মোঃ নেজাম উদ্দিন
টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ চলাচলের অনুমতির জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেছে ক্রুজ অপারেটরস্ অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ স্কোয়াব। বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকালে এই আবেদন কার হয় বলে জানা যায়। এর আগে জেলা প্রশাসক কক্সবাজার বরাবরও এই সংগঠন একটি লিকিত আবেদন করেছে বলে জানা গেছে ।
সম্প্রতি নাফ নদী হয়ে সেন্টমার্টিন হাজাজ যাওয়া আসার জন্য অনুমতি না দিওে জাহাজ কর্তৃপক্ষ টেকনাফের সাবরাং পয়েন্ট থেকে জাহাজ চলাচলের জর্য অনুমতির আবেদন করছেন। আগামী মাস থেকে সেন্টমার্টিনের সকল নৌ জাহাজ চলাচলের সম্ভবনা রয়েছে বওে জানান বে অফ বেঙ্গল জাহাজ মালিক তোফায়েল আহমদ।
গত ২৮ সেপ্টম্বর সরকার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করেছে, সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও তার বিকল্প হিসেবে সাবরাং থেকে জাহাজ চলাচলের দাবী তুলেন। কক্সবাজার সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল খুবই ব্যায়বহুল দাবী করে টুয়াকের সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমদ দাবী করেন সরাসরি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পর্যটকরাও অনাগ্রহী। তাই সাবরাং থেকে জাহাজ মালিকরা নিজ খরচে অস্থায়ী জেটি নির্মান করবে বলে জানান। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জাহাজ চলাচল শুরু করার জন্য অনুরোধ ও জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পর্যটকরা টেকনাফ থেকে যেতে সাচ্ছন্দবোধ করে তাই পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ হয়ে বেশি পর্যটক যাতায়াত করে।
# পর্যটক হারাতে পারে
# কাজ হারাবে লক্ষাধিক পর্যটক কর্মী
সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াভ) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুরবলেন,দেশের পর্যটন স্পট সমূহের মধ্যে সেন্টমার্টিন অন্যতম। যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁসহ অসংখ্য পর্যটন প্রতিষ্ঠান। প্রবালদ্বীপের আকর্ষণকে কেন্দ্র করে জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটসমূহেরও কদর বেড়েছে। যেখান থেকে সরকার পাচ্ছে কোটি টাকা রাজস্ব। কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকার যুবক-যুবতিদের। সমৃদ্ধির পথে ব্লু ইকোনমি। তাছাড়া সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা গত দুই বছরের করোনার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ঠিক এমন মুহূর্তে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত অতিকড়াকড়িতে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে পর্যটন খাত। স্বল্প সংখ্যক পর্যটক ব্যবস্থাপনায় দ্বীপের ১৮৮টি আবাসিক হোটেলে নতুন সংকট দেখা দিবে।টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ ও পর্যটক সীমিতকরণ’
,তোফায়েল আহমদ বলেন, আমরা জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ এবং হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ ১ যুগের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। অফুরান সম্ভাবনার প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সুরক্ষায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ জলবায়ুর নৈতিবাচক প্রভাব থেকে দ্বীপকে রক্ষার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছি। ২ বছর আগে করোনার শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাহাজে পর্যটক ওঠানামা এবং পারাপার করে আসছি। সেন্টমার্টিনে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর থাকায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। কারো করোনা শনাক্তও হয়নি। এনিয়ে প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। সেন্টমার্টিনকে করোনামুক্ত রাখতে ‘জাহাজ মালিক-কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ মন্তব্য এই পর্যটন উদ্যোক্তার। প্রধানমন্ত্রীকে ‘মানবতার মা’ উল্লেখ করে হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাসহ ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের খাওয়াচ্ছেন। যে কারণে বিশ্ব নেতৃত্ব আপনাকে ‘মানবতার মা’ স্বীকৃতি দিয়েছেন। আপনি জাতির জনকের কন্যা, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেত্রী। আপনার সুদৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। শুধুমাত্র কক্সবাজারের মতো একটি জেলাতেই ৭৩টি মেগাউন্নয়ন প্রকল্প চলমান। যার বিপরীতে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হলে কক্সবাজারের চেহারাই পাল্টে যাবে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের আবেদন ও ব্যাপ্তি বাড়বে বহুগুণে। কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল, শুটকি, লবণ, চিংড়িসহ নানা ব্যবসার পরিধি বাড়বে। ৬/৭ লাখ বেকার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে। এসব ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণশক্তি হচ্ছে সেন্টমার্টিন। কারণ, সেন্টমার্টিন ঘিরেই এক তৃতীয়াংশ পর্যটক আগমন ঘটে কক্সবাজারে। কিন্তু সেন্টমার্টিনে যদি পর্যটক সীমিত করা হয়, তাহলে কক্সবাজারে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি হোটেল মোটেল ও ব্যবসা এবং পর্যটন খাতে লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগে ধ্বংস নামবে। পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে ঠিক এই মুহূর্তে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ করার চিন্তা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে জাহাজ মালিক। মাত্র একটি জাহাজ চললে কয়েক হাজার পর্যটক বঞ্চিত হবে, যার প্রভাব পড়বে পুরো পর্যটন শিল্পে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ব্যবসা। জাহাজ চলাচল বন্ধ হলেও বিকল্প পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের নৌকায় চড়ে সেন্টমার্টিন যাবে পর্যটকেরা। সুতরাং যে উদ্দেশ্যে জাহাজ চলাচল সীমিত করা হচ্ছে তার কোন সুফল আসবে না। বরং ঝুুঁকি বাড়বে পর্যটন খাতে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.