অনলাইন ডেক্সঃ
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার অংশ হিসাবে গত এপ্রিল মাস থেকে বন্ধ কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। ফলে কক্সবাজার শহরসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহে অবস্থিত ৭ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও সহস্রাধিক রেস্তোরাঁয় এ বছর ঈদের প্রস্তুতি নেই। করোনার কারণে কক্সবাজারের পর্যটন সেক্টরের সাথে জড়িত অর্ধলক্ষাধিক পরিবারে এবারও ঈদের আনন্দ ম্লান।
প্রতিবছর দুই ঈদ, দূর্গাপুজা ও ইংরেজি নববর্ষে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ পর্যটকের ঢল নামে।
তবে করোনার কারণে গতবছরও কক্সবাজারের পর্যটন সেক্টরের অবস্থা ছিল এবারের মতোই। তবে বছরের আগস্টে সীমিত পরিসরে পর্যটন শিল্প খুলে দেয়ার পর গত ইংরেজি নববর্ষে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।
এসময় একদিনেই কক্সবাজারে ১০ লক্ষাধিক পর্যটক সমাগম ঘটে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার গত ১ এপ্রিল থেকে কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করলে কক্সবাজার শহরসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহে অবস্থিত ৭ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও সহস্রাধিক রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, ট্যুর অপারেটরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়েন।
ফলে এবারের ঈদুল ফিতরের আনন্দ থেকে কক্সবাজারের পর্যটন সেক্টরের সাথে জড়িতদের পরিবার বঞ্চিত বলে জানান ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান।
ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন- করোনা লকডাউনের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে দৈনিক ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। গত দেড় মাস ধরে হোটেল-মোটেলসমূহ বন্ধ থাকায় মালিকপক্ষ ব্যাপক লোকসানের শিকার হচ্ছে। যে কারণে বেশিরভাগ কর্মচারীকেই ছুটি দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস অফিসার্স এসোসিয়েশন পর্যটন সেক্টরের কর্মজীবীদের জীবিকা রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের সময় হোটেল-মোটেল ও সমুদ্র সৈকত খুলে দেওয়ার দাবী জানান। এই দাবীতে সংগঠনটি খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিচ্ছে বলেও জানান সংগঠনটির সভাপতি সুবীর চৌধুরী বাদল ও করিম উল্লাহ কলিম।
তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আমাদের করোনার মধ্যে বসবাস করতে হবে, আবার অর্থনীতির গতিও সচল রাখতে হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাংক, বীমা, অফিস-আদালত, গণ পরিবহনসহ অনেক কিছু স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে খুলে দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের দাবী কক্সবাজার পর্যটন সেক্টরও খুলে দেওয়া হউক। কারণ পর্যটন শিল্প বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে হোটেলের ৩০হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ লক্ষাধিক মানুষ।
দীর্ঘদিন পর্যটন সেক্টর বন্ধ থাকায় এসব পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। দক্ষ ও যোগ্য পর্যটন কর্মীরা পেশা পরিবর্তন করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। ফলে পর্যটন শিল্পে দক্ষ ও যোগ্য কর্মীর অভাব দেখা দিবে।
দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীরা এখন সম্পূর্ণ কর্মহীন রয়েছে। দীর্ঘ দিন হোটেল বন্ধ থাকার ফলে হোটেলে আসবাবপত্র এসিসহ মুল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া রেস্তোঁরার কর্মচারী, ঝিনুক ওয়ালা, বীচ হকার, জীপ গাড়ির ড্রাইভার ও হেলপার, কিটকট কর্মচারী, শুটকী বিক্রেতা, বার্মিজ শিল্পের সাথে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ বেকার রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুসারে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে এলে সরকার পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.