বার্তা পরিবেশকঃ
অবিলম্বে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে একটি উদাহরণ তৈরি করতে পারে। কিন্তু এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন ধরনে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগহ অব্যহত রয়েছে। এধরনে বিনিয়োগ বন্ধের মধ্য দিয়ে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।

দি ইন্টারগভারনমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-র সর্বশেষ প্রতিবেদন দেখায় যে গত দশকে বার্ষিক গড় বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ নির্গমনের পরিমাণ মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ছিল। এসত্তে¡ও যদি দেশগুলো যদি চমকপ্রদ ভাবে এনার্জি সক্ষমতা বাড়াতে পারে, বাস্ততন্ত্র ধ্বংস রোধ করতে পারে এবং নবায়নযোগ্য এনার্জির প্রয়োগ বাড়াতে পারে তাহলে এখনো গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার জন্য পৃথিবীর দরকার ৯৫% কম কয়লা, ৬০% কম তেল এবং ৪৫% কম গ্যাস ব্যবহার করা ২০৫০ সালের মধ্যে।
৫জুন (রবিবার) সকালে কক্সবাজারে কলাতলী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে বিশ^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রিক্সা শোভাযাত্রায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুসারে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রবর্তন, উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে জলবায়ু-ক্ষতিপূরণ আদায়, কয়লাসহ সকল ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা এবং জলবায়ু দুর্যোগের হাত থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষার দাবিতে এ রিক্সা শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২-উপলক্ষে “প্যাডেল ফর পিপল এন্ড প্ল্যানেট” শিরোনামের রিক্সা র্যালীটি বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদি সংগঠন গ্রীন কক্সবাজার, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এবং ঋণ ও উন্নয়ন বিষয়ক এশীয় জন-আন্দোলনের (এপিএমডিডি) যৌথ উদ্যোগে এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় কক্সবাজারের সাংবাদিক, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, জলবায়ু-কর্মী ও শতাধিক রিক্সাচালক অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গ্রীন কক্সবাজার এর চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের মতো দেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো থেকে শর্তহীন প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। কিন্তু উন্নত বিশ্ব আমাদের দুর্যোগকে কেন্দ্র করে ঋণের ব্যবসা করতে চায়। এ আচরণের বিরুদ্ধে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর নেতা হিশেবে বাংলাদেশকেই কথা বলতে হবে।
সাংবাদিক এইচএম এরশাদ জানান, আমরা দ্রæত, সঠিকভাবে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে ক্রমান্বয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে স্বচ্ছ এনার্জি বেছে নেয়ার আহ্বান জানাই। ২০৫০ সালের আগেই আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুক্ত হতে হবে। যেভাবে চলছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। এর কারণে জনসমাজ, জীবনযাত্রার, খাদ্য ব্যবস্থার, বাসস্থানের এবং অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। বিজ্ঞান আমাদের বলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকা এখনো সম্ভব আর এটা হচ্ছে এখনো সবচেয়ে নিরাপদ তাপমাত্রার সীমা। কিন্তু নেট জিরোর অন্তঃসারশূন্য অঙ্গিকারগুলো যা ব্যবসাগুলোকে আগের মতোই চলতে দেয় তার বদলে আমদের পদ্ধতিগত পরিবর্তন দরকার,”
সিইএইচআরডিএফ এর প্রধান নির্বাহী মোঃ ইলিয়াস মিয়া জানান, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে অবিলম্বে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করার জন্য সরকারের আরো সক্রিয় ভূমিকা নেয়া উচিৎ। তাপমাত্রার একটু একটু বৃদ্ধি মানে আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের মারাত্মকভাবে বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং অন্যান্য মারাত্মক জলবায়ু দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়া। যেমনটা আমরা জানি, ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পৃথিবীর জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে দেবে।
গ্রীন কক্সবাজার এর প্রধান নির্বাহী মোঃ নেজাম উদ্দিন জানান, সরকারের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়ে গেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হলেও বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে তিন শতাংশেরও কম। অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন আরো কঠিন করা হয়েছে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মাসুদুর রহমান, সাংবাদিক ওমর ফারুক হিরু,জেলা প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক জাহেদুর রহমান, সেলিম উদ্দিন শাফায়েত প্রমুখ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.