সাইফুদ্দীন আল মোবারক, টেকনাফ
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অবহেলায় ফিরোজ আহমেদ নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ৮টায় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহত ফিরোজ টেকনাফ পৌরসভার খায়ুকখালী পাড়ার মুহাম্মদ আলীর ছেলে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে পেট ব্যাথার কারণে ফিরোজকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন তার বাবা। তাকে ভর্তির পরে ঠিকমতো চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।
নিহতের স্বজনদের দাবি- চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের দায়সারা মনোভাবের কারণে রোগির এই করুণ মৃত্যর হয়েছে। রোগির স্বজনরা ওই সময় কর্মরত দুই চিকিৎসকের উচিত শাস্তির দাবি জানান। অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হলেন ডা: সিনসিয়া ও শোভন দাস। মূলত তাদের অবহেলা ও দায়সারা চিকিৎসার কারণেই ফিরোজের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান পিতা মোহাম্মদ আলী।
রোগির স্বজনরা আরও জানান, রোগির অবস্থা অবনতি হলে কর্মরত চিকিৎসকরা রেফার করতে পারতো, তা কিন্তু করেনি। নিজেরাও সঠিক চিকিৎসা দেননি, যারফলে রোগির মৃত্যু হয়। নিহত ফিরোজের পিতা মোহাম্মদ আলী বলেন, ডা. সিনসিয়া শুক্রবার দিনের ডিউটিতে ছিল, প্রথমে তার অবহেলা দেখা গেছে । আজ সকালে ডা: শোভন দাস একটু দেখাও করে নাই রোগীর সাথে। ডাক্তার কবে আসবে জানতে চাইলে নার্স ধমকের সুরে বলেন, স্যার বিশ্রামে আছে,পরে আসবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডা.শোভন দাস বলে, মারা যাওয়া রোগীর অবস্থা ভালো ছিল, কিন্তু তার জন্য একটা ঔষধ পাওয়া যায়নি। রোগি মারা যাওয়ার আগে আমি বিশ্রামে ছিলাম। তখন কে ডিউটি ছিল জানতে চাইলে বলেন, হ্যাঁ, আমি কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলাম,তবে ক্লান্তির কারণে একটু বিশ্রামে গিয়েছিলেন বলে জানান।
একই পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল পিকলু নামের এক রোগি। তিনি জানান, ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তারা চরম অবহেলায় কাজ করে হাসপাতালে।
ডাক্তার সিনসিয়া ছিদ্দিককে বার বার মুঠোফোনে কল করা হলে রেসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল ডাক্তারদের অবহেলার কথা স্বীকার করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে পেট ব্যাথার কারণে ফিরোজকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তখন তার রিপোর্ট ভালো ছিল। রোগির অবস্থা অবনতি হলে কর্মরত চিকিৎসক কেন রেফার করেনি, তা বোধগম্য নয়।
তবে পুরো হাসপাতাল তার একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন,আমি শুনেছি পেটে ব্যথার কারণে স্বজনরা টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি আরও জানান, তবে এ ঘটনায় নিহতের পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
অভিযোগ পেলে প্রয়োজনী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে ঘটনার পর থেকে ডাক্তাররা হাসপাতাল ছেড়েছে। স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের অনেক খুঁজাখুঁজি করেও তাদের পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.