অপহরণ মামলার রিপোর্ট পক্ষে না আসায় তদন্ত কর্মকর্তাকে আসামী করে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এক নারীকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব ও ঘুষ দাবির অভিযোগ তুলেছে তদন্ত কারী কর্মকর্তা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক নারী । অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. শামিম মিয়া। তিনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার কার্যালয়ে উপ-পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে নোয়াখালীতে কর্মরত আছেন বলে জানান। তবে মামলায় অভিযুক্ত আসামী শামিম মিয়া বলছেন ভিন্ন কথা । তিনি জানান, অপহরণ মামলার আসামী আসমাউল হোসনার বিরোদ্ধে মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিই। গত বছরের ১৫ এপ্রিল ওই নারীর বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর থেকে এই নারী আমার বিরোদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল মহেশখালীর উজ্জল কুমার দে কে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করেছে এমন একটি মামলা হয় । যার নং সিআর ৮০৯/২০২২(চকরিয়া )এই মামলার তদন্তের ভার আসে আমার কাছে । মহেশখালীর উজ্জল কুমার দে কে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করেছে এমন তথ্যাধি আমার হাতে আসলে আমার তদন্ত ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেন । আমি আদালতে দিলে এরপর থেকে আমাকে বিভিন্নভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। আমাকে ফাঁসাতে এতোদিন পর আদালতে মামলা করেছে আসমাউল হোসনা । তার বিরোদ্ধে অপহরণ মামলার প্রমাণ হিসাবে তৎকালিন সময়ে মোবাইলসহ অপহরণের বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছিল । তা আমি মামলার প্রমাণ হিসাবে আদালতে উপস্থাপণ করেছি। ইমু বা মোবাইলে কিভাবে এসব করলো আমার জানা নেই ।
অপহরণ মামলার বাদী উজ্জল কুমার দে জানান, ২০২২ সালে এই আসমাউল হোসনা আমাকে অপরহণ করে মুক্তিপণ দাবি করে । আমি মুক্তিপণ দিয়ে কোন রকম জান নিয়ে ফিরে আসি । পরে তার বিরোদ্ধে মামলা দায়ের করি। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিল পিবিআই এর এসআই শামিম মিয়া।
জানা যায়, এসআই শামিম মিয়ার বিরোদ্ধে করা মামলার বাদী চকরিয়ার পালকাটা গ্রামের মৃত কামাল উদ্দিনের মেয়ে আসমাউল হোসনা আগের স্বামী তালাক দিলে স্বামীর বিরোদ্ধে মামলা করেন । তখন মহিলার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন চকরিয়া কোর্টের এক এডভোকেট । পরে তাকেও ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন এই মহিলা আসমাউল হোসনা। ২০১৮ সালে ঐ এডভোকেট তাকে তালাক প্রদান করে বলে জানা যায়। পরে মহেশখালীর উজ্জল কুমারকে ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল মাসে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে ৫০ হাজার। এবং তা ব্যাংকের মাধ্যমে আসমাউল হোসনা নেন বলে জানা যায়। টাকা দিয়ে উদ্ধার হওয়ার পর উজ্জল কুমার দে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে যার নং সি আর ৮০৯/২০২২(চকরিয়া ) এই মামলার আসামী আসমাউল হোসনার সাথে বিভিন্ন মামলার আসামী শহিদুল ইসলাম ভুট্্েরা, রফিকুল কাদের সাইনুর, ইমতিয়াজ উদ্দিন সবুজ ছিল বলে জানা যায় মামলার তদন্ত রিপোর্ট থেকে । এস আই শামিম তদন্তকালিন সময়ে আসমাউল হোসনার কাছ থেকে উজ্জল কুমার এর ব্যবহৃত মোবাইল ও ৬টি ষ্ট্যাম্প জব্দ করা হয় এমনটা উল্লেখ করা হয়।
এদিকে গত ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শামিম মিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা এলাকার উজ্জল কুমারকে।
মামলার আবেদনে ভুক্তভোগী নারীর দাবি, মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা এলাকার উজ্জল কুমার নামের এক যুবক প্রলোভনে ফেলে ধর্ষণ করায় তিনি বাদী হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল ধর্ষণ মামলা দাযের করেন। এরপর আসামি উজ্জল কুমার গত ২০২২ সালের ২৬ জুন চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কক্সবাজার কাযার্লয়ের উপ-পরিদর্শক (এস আই) শামিম মিয়াকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মামলার আবেদনে ভুক্তভোগী নারী আরও উল্লেখ করেন, মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে পুলিশের এসআই শামিম মিয়া মামলা তদন্তকালীন সময়ে তার সঙ্গে শারীরিকভাবে মেলামেশার প্রস্তাব দেন এবং এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পিবিআইয়ের এই পুলিশ কর্মকর্তা গত ৯ আগস্ট কক্সবাজারে অজ্ঞাত বাসায় তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন এবং শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন। তার দাবি মতে ঘুষের টাকা না দিলে মামলার প্রতিবেদন বিরুদ্ধে দেওয়ার হুমকি দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই পুলিশ কর্মকতার্র প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় গত বছরের ১৫ এপ্রিল ওই নারীর বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন এসআই শামিম মিয়া।
নারীর দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রকিব উর রাজা জানান, নিবার্চনের কারণে মামলার আসামিদের নোটিশ দিয়ে ডাকা হয়নি। দুয়েক দিনের মধ্যে তার কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য মামলার আসামিদের ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হবে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.