৮ বাংলাদেশিসহ ১২৯ শান্তিরক্ষীকে “দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল” প্রদান

ডেস্ক নিউজ
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে ২৭ মে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীসহ বিশ্বের ৪৪ দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করল জাতিসংঘ। এর মধ্যে বাংলাদেশের ০৮ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ।

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ৪৪ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে স্ব স্ব দেশের আত্মোৎসর্গকারীদের মেডেল তুলে দেন। এ সময় তিনি বলেন, এই পদক বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত জীবনের শক্তি, বিশুদ্ধতা ও নশ্বরতাকেই বার বার স্মরণ করছে।

জাতিসংঘের অধীনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা হলেন: মালিতে মিনুস্মা মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো: আব্দুল হালিম, কঙ্গোতে মনুস্কো মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো: সাইফুল ইমাম ভূইয়া, সার্জেন্ট মো: জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট এমডি মোবারক হোসেন ও ল্যান্স কর্পোরাল মো: সাইফুল ইসলাম; সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মিনুস্কা মিশনের ল্যান্স কর্পোরাল মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সার্জেন্ট মো: ইব্রাহীম এবং দক্ষিণ সুদানে আনমিস্ মিশনের ওয়াসারম্যান নুরুল আমিন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মেডেল গ্রহণ করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। এ অনুষ্ঠানে আরও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: ছাদেকুজ্জামান। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এসকল মেডেল নিহত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবে।

এ উপলক্ষে প্রদত্ত এক বার্তায় রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “আমি জাতিসংঘের পতাকাতলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী নীল হেলমেটের সকল সাহসী পুরুষ ও নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি এবং তাঁদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি”। রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার পবিত্র দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ তার অনেক বীর সেনানীকে হারিয়েছে। কিন্তু এই ত্যাগ জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনের কোনো আহ্বানে সাড়া দিতে কখনই আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি; বরং, শান্তির লক্ষ্যে নিজেদেরকে উৎসর্গ করার দৃঢ় সঙ্কল্পকে আরও জোরদার করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, বুভুক্ষা ও দুর্দশা মুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করে শান্তির অনুসন্ধান করলেই কেবল কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী এই শান্তিরক্ষীদের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা হবে।

আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘স্থায়ী শান্তির পথে: শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যুব-শক্তিকে বৃদ্ধি করা’।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহাসচির গুতেরেস বিগত সাত দশকব্যাপী জাতিসংঘের পতাকাতলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী সামরিক ও বেসামরিক শান্তিরক্ষীগণের বিদেহী আত্মার স্মরণে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে ‘শান্তিরক্ষী মেমোরিয়াল সাইট’-এ পুস্পস্তবক অর্পন করেন।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর শান্তিরক্ষি দিবস পালন করে জাতিসংঘে। সে উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে মহাসচিব বলেন, স্থায়ী শান্তি কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না যদি যুব সমাজকে আন্তরিক অর্থে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব না হয়। সে আলোকেই সারাবিশ্বে শান্তিরক্ষা মিশনের সৈনিকেরা যুব সমাজকে সাথে নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত কমানোর মাধ্যমে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। জাতিসংঘের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রায় ৭ হাজার শান্তিরক্ষী কর্মরত রয়েছেন। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯৪৮ সাল থেকে এ যাবত বিশ্বের মোট ৪ হাজার নারী-পুরুষ প্রাণ দিয়েছেন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে।
প্রতিবছরই যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৯ মে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা দিবস উদযাপন করা হয়। কোভিড-১৯ অতিমারিজনিত কারণে এবারের অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালে করা হলো।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.