লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপে মুদ্রা পাচার, গ্রেপ্তার ৫
ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ বিগো লাইভ ও লাইকির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা পাঁচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন বিদেশি নাগরিকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রাজধানী বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে শনিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে রোববার ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মোস্তফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এস এম নাজমুল ও আসমা উল হুসনা সেঁজুতী এবং অজ্ঞাত বিদেশি এক নাগরিক।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের উপ মহাপরিদর্শক জামিল আহমেদ জানান, এই অ্যাপগুলোতে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা যুক্ত হতেন। বিগো লাইভে দুই ধরনের আইডি আছে। ব্রডকাস্টার আইডি ও সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করে থাকে। এই ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে তথাকথিত বিনোদনের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া হতো।
তিনি বলেন, ‘সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করতো, বিনিময়ে তাদেরকে ডিজিটাল কয়েন সদৃশ ডায়মন্ড উপহার দেয়া হতো। পরবর্তীতে এই ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যম অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতেন তারা।’
জামিল আহমেদ জানান, এদের টার্গেট মূলত দেশের যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য ডায়মন্ড নামে একটি ভার্চ্যুয়াল টাকা কিনতে হয় তাদের। সাধারণত বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ডায়মন্ড কেনা যায়। সেই টাকা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
সিআইডি বলছে, এই ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন নামে অনেক এজেন্সি রয়েছে। এরকম একাধিক এজেন্ট বাংলাদেশে রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল টাকা ও ব্যাংকের মাধ্যমে এইসব ডিজিটাল টাকা কিনছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাকৃতরা এসব অ্যাপের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন বলে জানিয়েছে সিআইডি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের নাম এসেছে এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শত কোটি টাকারও বেশি লেনদেন এর তথ্য পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তার নাজমুলের কাছ থেকে দুইটি মোবাইলফোন, দুইটি ল্যাপটপ, একটি প্রাইভেটকার বিভিন্ন ব্যাংকের ৭টি ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ৬টি চেক বই, নগদ ৫০ হাজার ৪৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার আরিফ হোসের কাছ থেকে দুইটি মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার মোস্তফা সাইফ রেজা ও আসমা উল হুসনা সেজুঁতীর কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন ও দুইটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানায় সিআইডি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.