বাঁকখালীতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে দিল প্রশাসন
বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পেশকারপাড়া স্লুইচগেইট এলাকায় নির্মিতব্য অবৈধ স্থাপনা বন্ধ করে দিল প্রশাসন।
বাঁকখালী তীরে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে- এমন অভিযোগে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারী) বিকালে কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ বড়ুয়ার নির্দেশে ভূমি অফিসের প্রতিনিধিদল সরেজমিন খোঁজ নিতে ঘটনাস্থলে যায়।
তারা ওই সময় কর্মরত শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে ডকুমেন্ট নিয়ে ভূমি অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু দখলবাজরা নির্দেশের তোয়াক্কা করেনি। রাতের আঁধারে অব্যাহত রাখে নির্মাণ কাজ।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, সরকারী জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে- সংবাদ পেয়ে টীম পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তলব করা হয় দখলবাজদের স্বপক্ষে কাগজপত্র। বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে কক্সবাজার এর প্রধান নদী বাঁকখালী তীরবর্তী ৬৩ একর অবৈধ দখলমুক্ত করার আদেশ দিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। আদেশে ঝুঁকিপূর্ণ দিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, ‘সংরক্ষিত’ লিখা একটি স্থায়ী সাইনবোর্ড স্থাপন, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’-মর্মে সতর্কবানী সংযোজন এবং ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ জাতীয় অচিহ্নিত জমি চিহ্নিত করণ এবং সাইনবোর্ড ও কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে দ্রুত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার উপসচিব মঈনউল ইসলাম স্বাক্ষরিত কক্সবাজার জেলার খাস জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ০৪.০০.০০০০.৫১২.৮২.০৩২.১৪-৫০৩ নং স্মারকে নোটিশ জারী করা হয়।
বাঁকখালী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশনা থাকলেও তার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা। এ সুযোগে প্রতিদিনই গড়ে ওঠছে নিত্যনতুন স্থাপনা। রাঘববোয়ালদের ছত্রছায়ায় নির্মিত হচ্ছে দালান কোটা। অভিযোগ রয়েছে, দখলপ্রক্রিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে পৌরসভার ডাম্পার ও বর্জ্যবাহী গাড়ীগুলো। জড়িত রয়েছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। তবে, পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মাহবুবুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, নির্ধারিত জায়গায় ময়লা ফেলা হয়। দখল প্রক্রিয়ায় পৌরসভার গাড়ী কিংবা পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সম্পৃক্ততা নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া থেকে মাঝেরঘাট পর্যন্ত অসংখ্য ঘরবাড়ী তৈরী হয়েছে। এখনো নির্মানাধীন রয়েছে অবৈধ স্থাপনা। বিশেষ করে পেশকারপাড়া সংলগ্ন স্লুইচগেইট এলাকার সরকারী এই খাস জমি প্লট আকারে বিক্রি করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। গত এক সপ্তাহ ধরে সেখানে নির্মিত হচ্ছে দুইটি পাকা দালান। এমনকি দখল করে ফেলা হয়েছে স্লুইচগেইট এর নালা-নর্দমাও। এতেকরে সরকারী কোটি জমি বেহাত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। তাছাড়া কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী খর¯্রােতা এ নদীর দিন দিন নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় ‘সুপেয় পনি’ শঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা করছে পরিবেশবিদরা।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিসের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে বলেন, দখলবাজরা শক্তিশালী। তাদের বিরুদ্ধে একার পক্ষে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। এরপরও তিনি দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
সুত্র জানায়, বাঁকখালী নদী তীর ঘিরে প্রায় এক হাজার অবৈধ দখলদার রয়েছে। বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারী করে প্রশাসন। তবে দুঃখজনক হলো- প্রশাসনের কার্যক্রম নোটিশে সীমাবদ্ধ থেকেছে। একারণে দখলবাজরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের ব্যানারে কিছু লোক মিলেমিশে ভাগবাটোয়ারা বসিয়েছে বাঁকখালী নদীর তীরে খাস জমিতে। প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে প্রতি রাতেই চলে নদী ভরাটযজ্ঞ। এতে ব্যবহার করা হয় ভাড়াটে লোকদের। সাথে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী’ রোহিঙ্গা শ্রমিক তো আছেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেশকারপাড়া স্লুইচগেইট এলাকায় সম্প্রতি সরকারী ভূমিতে দুইটি সেমিপাকা ভবন নির্মিত হচ্ছে। এছাড়া এখানে আরো অন্তত ১০টি অবৈধ বসতি এখানে গড়ে ওঠেছে। দখলের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত। তারা প্রতিগন্ডায় ৮/১০ লাখ টাকায় বিক্রি করছে।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারী) সকালে একদল সংবাদকর্মী বাঁকখালী তীরে নির্মিত বসতির বিষয়ে খোঁজ নিতে যায়। এ সময় বেড়িবাঁধ, জেগে ওঠা চর, ডোবা ইত্যাদি দখল করে অসংখ্য বসতি দেখা যায়। এ সময় জানতে চাওয়া হয় কারা দখলপ্রক্রিয়ায় জড়িত। এলাকাবাসী ভয়ে রাঘববোয়ালদের নাম প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এরপরও নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি কয়েকজন দখলদারের নাম জানিয়েছে। তারা হচ্ছেন, মোকতার আহমদ, নাসির উদ্দিন, আবুল হোসেন, কামাল, মকবুল আহমদ, মরজিনা বেগম, আবদুশ শুকুর, রেহেনা, মাসুদ, নুর মোহাম্মদ, নজির আহমদ, সজল, খোরশেদ আরা, আবদুর রহমান, হালিমা খাতুন, মো. আলম, আবু বকর ড্রাইভার, মীর কাশেম, ছৈয়দ আলম, জয়নাল, ইব্রাহিম কালু, ফারুক, জাকের, জাহাঙ্গীর, শফি সওদাগর, নুরুল ইসলাম, নাহারু, কবির আহমদ বাদশা, ছুট্টু, হাছন, কাশেম, শাহ আলম, নজরুল, কাঠ ব্যবসায়ী সোহেল, শাহাবু, আবদুর রহমান, গুরুনী, নুরুজ্জামান ড্রাইভার, জামাল, মুসলিম উদ্দিন, হাজি সিরাজ, আবদুল মোনাফ প্রমুখ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.