নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইন প্রকল্প আড়াই বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

ইয়ানুর রহমান : নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইন প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর আড়াই বছর পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি । ২০১৪ সালের মে মাসে সম্ভাব্যতা যাচাই ও এরপর একই সালের আগস্ট মাসে কয়েক দফা অগ্রগতি সভা হলেও স্থবির হয়ে আছে প্রকল্পটি। এতে সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

সূত্র মতে, ২০১০ সালের ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে রেললাইন নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানারেইল কোম্পানি লিমিটেড সম্ভাব্যতা যাচাই করে।

 

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। ২০১৪ সালের মে মাসে সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত তিবেদনও জমা দিয়েছে সং¤িøষ্টরা।

 

সূত্রটি আরো জানায়, নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইনের সম্ভাব্য ম্যাপে নাভারণ থেকে শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ গ্যারেজ পর্যন্ত ৯৮ দশমিক ৪২ কিলোমিটার এলাকায় মোট আটটি স্টেশন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। স্টেশনগুলোর সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে নাভারণ, বাগআচড়া, কলারোয়া, সাতক্ষীরা, পারুলিয়া, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও মুন্সীগঞ্জে। এছাড়া ম্যাপে বাঁকাল, লাবণ্যবতী, সাপমারা খাল ও কাকশিয়ালী নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, রেললাইন বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে যশোর ও সাতক্ষীরায় কয়েক দফা অগ্রগতি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এরপর দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।

 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরায় প্রায় ২২ লাখ মানুষের বাস। এ জেলা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। সুন্দরবন, চিংড়ি সম্পদ এবং ভারত-বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে সাতক্ষীরা। ফলে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে একমাত্র সড়কপথটি ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। অচিরেই রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে যাতায়াত সমস্যা প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনেরা।

 

সাতক্ষীরা শহরের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেক আগে থেকেই সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯৫৮ সালে সাতক্ষীরা-ভেটখালী সড়ক নির্মাণের সময়ও রেললাইনের জায়গা ধরে তিনশ’ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তখনও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময় রেললাইন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু কাজ হয় না। আবারও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে, কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই কাজ থমকে আছে।

 

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি আনিছুর রহিম বলেন, সাতক্ষীরার মাছ, আম, মিষ্টি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। কারণ মুন্সীগঞ্জ থেকে সাতক্ষীরা শহর, সাতক্ষীরা থেকে যশোর হয়ে ঢাকায় যাওয়ার একটি মাত্র সড়ক রয়েছে। যাতে যানজট লেগেই থাকে।

 

এজন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আগামী বাজেটে নাভারণ-মুন্সীগঞ্জ রেললাইন প্রকল্প বাবায়নে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।

 

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, রেললাইন সাতক্ষীরার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর দৃশ্যত আর কোনো কাজ এখনও হয়নি। বেশ আগে সাতক্ষীরায় একটি অগ্রগতি সভা হয়েছিল। আশা করছি, প্রকল্পটি দ্রæত অনুমোদন পাবে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.