ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা এবং স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাগুলো নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে। তবে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দেবে।
এদিকে নতুন করে আরেক দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ছুটির এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে প্রাথমিক, জেএসসি ও স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা আরও ফিকে হয়ে আসছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে এ বছরের জেএসসি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, প্রথমত, শ্রেণিকক্ষে ক্লাস হয়নি, উপরন্তু এই পরীক্ষার জন্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তা–ও শুরু করা যায়নি।
* এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত।
* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বেড়েছে।
* স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা হওয়াও অনিশ্চিত।
অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হবে কি না, সে বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। তবে রাজধানীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের (ডিআর) কাজটি করে রাখার জন্য তাঁদের বলা হয়েছে। তাঁরা এই কাজটি করেছেন। ডিআরভুক্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা থানা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছেন; যাতে পরীক্ষা হলেও নেওয়া যায়, আবার না হলেও এর ভিত্তিতে সনদ দেওয়া যায়।
গত বছরও এই পরীক্ষাগুলো হয়নি। তখন পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ওপরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হয়েছিল। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সরকার একাধিকবার পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার। কিন্তু সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছুটি থাকলেও গতকাল তা আবার বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলো।
দীর্ঘ ১৬ মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকায় শ্রেণিকক্ষে কোনো ক্লাস হচ্ছে না। পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হয়ে থাকে বছরের নভেম্বর মাসে। এই চার পরীক্ষায় কমবেশি ৫০ লাখ পরীক্ষার্থী থাকে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাগুলো হয় ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু চলতি বছরের প্রায় সাত মাস কেটে গেলেও এসব পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছে না সরকার।
১৫ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে আটকে থাকা চলতি বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সব বিষয়ে না নিয়ে শুধু বিভাগভিত্তিক (গ্রুপ) তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে নেওয়া হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে এ বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা হবে। আর আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন হবে এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ‘বিষয় ম্যাপিং’ করে। আর করোনার কারণে পরীক্ষা একান্তই নিতে না পারলে অ্যাসাইনমেন্ট এবং বিষয় ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে ফল মূল্যায়ন করা হবে।
ওই দিন শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এ বছরের জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে। জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নেহাল আহমেদ গতকাল বলেন, এ বছরের জেএসসি পরীক্ষা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত পাননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতি যা মনে হচ্ছে, তাতে গতবারের মতো এবারও জেএসসি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে ছাপা এবং আনুষঙ্গিক যেসব কাজ করা দরকার, তা করা হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, তাঁর ধারণা, হয়তো ‘অ্যাসাইনমেন্টের’ মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণিসহ (জেএসসি) বিদ্যালয়ের অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে ওঠানো হতে পারে। তবে এগুলো প্রাথমিক ভাবনা। কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খবর প্রথম আলো।
করোনা মহামারির কারণে টানা ৫০০ দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এ সময় অনলাইনে শিক্ষাদান চালু হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনলাইনে ক্লাস করছে না বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে টানা স্কুল বন্ধ থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশ্বের বহু দেশে ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত খোলা সম্ভব হয়নি। দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা মারাত্মক সমস্যা পড়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.