খালেদা জিয়ার রায়: কক্সবাজারে পুলিশের জিরো টলারেন্স

 

 

শাহেদ মিজান,

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামীকাল ৮ ফেব্রুয়ারি। এই রায়কে ঘিরে একটি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। কক্সবাজারেও দু’তিন দিন ধরে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একই সাথে পুরো জেলাজুড়ে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সর্বত্র। সবার আশঙ্কা, খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে কেমন হবে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের পরিস্থিতি?

এদিকে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ধরপাকট চালাচ্ছে পুলিশ। এই পর্যন্ত জেলায় অন্তত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।  মঙ্গলবার থেকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ও অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ।

জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রায় কি হবে তা আমরা কেউ জানি না। কারণ আদালতের রায়তো আগে জানার সুযোগ নেই। কিন্তু সরকার এই রায়ের উপর অনুমান নির্ভর হয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে। যার কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে। তাদেরকে মিথ্যা মামলায় আসামী দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছে। শুধু তাই নয়; আমাদের জেলা কার্যালয় পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এটাতো আচরণ হতে পারে না।’

জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী জানান, গত চার দিনে জেলার মহেশখালী থেকে সাত জন, উখিয়া থেকে দুইজন, টেকনাফ থেকে চারজন, রামু থেকে চারজন, চকরিয়া থেকে চারজন, কুতুবদিয়া থেকে একজনসহ মোট ২২জনকে নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের ঘরে তল্লাশী চালানো হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণা দিন ধার্য্য করার পর থেকে বিএনপি জনমনে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এই রায়কে ঘিরে সরকার ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি নানা ধরণের বক্তব্যের কারণে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রায় পরবর্তী ‘বিশৃঙ্খলা’ রোধে সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি এবং বিএনপিরও পাল্টা জবাবের কারণে এই উৎকণ্ঠা বেড়েছে। কেননা সরকার ও বিএনপি মুখোমুখী হলে দেশে আবার একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা সবার মনে। এই পরিস্থিতিতে দেশে আবার অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলা এমন প্রতিক্রিয়াই পাওয়া গেছে।

এই পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে টহল জোরদার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীরও টহল দেখা যাচ্ছে। কক্সবাজার শহরের বিএনপি কার্যালয়সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করতে দেখা গেছে। খালেদা জিয়ার রায়কে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ অত্যন্ত সজাগ থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

রায় নিয়ে কর্মসূচী প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী জানান, ঘোষণা আগেই রায় কেমন হবে তা তো জানা যায় নায়। সুতরাং কর্মসূচীও আগেভাগে নেয়া যায় না। তারপরও যদি নিয়ে হয় তাহলে রায়ের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠান্ডা মাথায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দেয়া হবে।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক এম.এ মঞ্জুর জানান, রায় ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচী নেই। তবে কেউ যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় তাহলে আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য মাঠে নেমে তা প্রতিহত করবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আমাদের কোনো কর্মসূচী নেই। এটা সরকারের বিষয় প্রশাসনই তা দেখবে। তারপরও কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে নাগরিক দায়িত্ব দায়িত্ব হিসেবে আমরা প্রতিহত করবো।’

কক্সবাজারের জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘রায়কে ঘিরে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে। কাউকে রেহায় দেয়া হবে না। এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করছি।’

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.