নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ খরুলিয়ার চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামে একদল দুর্বৃত্ত এক স্কুল শিক্ষকের জমিজমা ও ভিটেমাটি দখল নিতে একের পর এক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুর্বৃত্তদের হুমকির মুখে দুই সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং নিরাপত্তা চেয়ে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ওই এলাকার মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে প্রাইমারী শিক্ষক নুরুল হক (৪০)। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এলাকার বাসিন্দা এবং অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হকের ক্রয়কৃত জমি এবং পৈত্রিক সম্পত্তি তারই বড় ভাই নুরুল আবছার ও তার দুই পুত্র দেলোয়ার হোসেন ও রিয়াজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে জবর দখলে নিতে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৮ মে) খরুলিয়া বাজারস্থ নুরুল হকের ক্রয়কৃত জমিটি জবর দখল করে দোকান নির্মাণ করতে গেলে তিনি বাধা দেন। এসময় তারা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালায়।
জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে শুধু তার উপর হামলা চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি তারা, সেদিন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা নুরুল হককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে তার বসত বাড়িতে গিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের মারধর করে। এসময় তার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনিসুল হক সন্ত্রাসীদের মারধরে মারাত্মকভাবে আহত হয়। এ নিয়ে থানা-পুলিশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে, এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও খুন করা হবে বলে হুমকি দিতে থাকে সন্ত্রাসীরা।
তবুও উপায়ন্ত না পেয়ে এ নিয়ে থানা-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী স্কুল শিক্ষক নুরুল হক। কিন্তু পুলিশের সহায়তা নেওয়ায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ওই চক্রের সদস্যরা। অস্ত্রের মহড়া দিয়ে নুরুল হকের বাড়ির আশেপাশে সন্ত্রাসীরা আতঙ্ক সৃষ্টি করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক নুরুল হক।
তিনি বলেন, ‘আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ও নিজের ক্রয়কৃত জমিগুলো বড় ভাই আবছার এতদিন ভোগ দখল করে আসছিলেন। বছর কয়েক ধরে তাকে আমার সম্পত্তি ভোগ দখলে বাঁধা দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি ষড়যন্ত্র করে খরুলিয়া বাজারস্থ আমার একটি ক্রয়কৃত জমি দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিছুদিন ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই সম্পত্তি দখল নিতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তার দুই সন্ত্রাসী ছেলেদের নিয়ে একাধিকবার হামলা চালিয়ে দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়।’
নুরুল আরোও বলেন, ‘বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আমি নুরুল আবছারের দুই ছেলেসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি। থানা পুলিশের একটি দল তদন্তে আসলে আবছার ও তার ছেলেরা পুলিশের সামনে আমরা উপর ফের হামলা চালায়। সেদিন পুলিশ নুরুল আবছারকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করে দেয়। তিনি আদালত থেকে জামিনে এসে পুনরায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। সেদিনের বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি এজাহার জমা দেওয়া হয়। এরপর থেকে আবছারের দুই ছেলে দেলোয়ার ও রিয়াজ উদ্দিন আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে, নতুবা আমাকে ও আমার স্কুলপড়ুয়া ছেলে আনিসুল হককে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে আমি সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। নিরাপত্তা চেয়ে ও বিচারের দাবিতে থানাসহ প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’ এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন অসহায় পরিবারটি।
এই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এ এস আই রাসেল মিয়া বলেন, ‘তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। পরবর্তীতে তাকে এজাহার দিতে বলা হলেও এখনো পর্যন্ত এজাহার না দেওয়ায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়নি।’
তার নির্দেশে অভিযোগের পর তিনি (নুরুল হক) একটি এজাহার দিয়ে রেখেছেন অনেকদিন আগে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কোন এজাহার পাইনি। তাছাড়া বিষয়টি তারা স্থানীয়ভাবে বসে সমাধান করার চেষ্টা করছেন।’ এমনটাই দাবী পুলিশের এই কর্মকর্তার।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.