কুতুপালংয়ে অভুক্ত রোহিঙ্গাদের আহাজারি, বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টারঃ মিয়ানমার থেকে নবাগত উখিয়া কুতুপালং এলাকায় আশ্রয় নেওয়া শত শত রোহিঙ্গাদের মাঝে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে। প্রতিদিন খাদ্যের আশায় খাদ্য বিতরন কেন্দ্রে ধর্ণা দিয়েও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এধরনের শত শত অভুক্ত রোহিঙ্গা গতকাল সোমবার কুতুপালংস্থ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির খাদ্য বিতরন কেন্দ্র ঘিরে আহাজারি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্যের তড়িৎ হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৩/৪ শ রোহিঙ্গা নারি পুরুষ কুতুপালংস্থ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির খাদ্য বিতরন কেন্দ্রের গেটে অবস্থান নিয়ে আহাজারি ও বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভরত কুতুপালং নবাগত রোহিঙ্গা বস্তির ছৈয়দুর আমিন (৫০) জানায় তিন মাস পূর্বে মিয়ানমার থেকে ৭ সদস্যের পরিবার নিয়ে জান বাঁচাতে কুতুপালং এসে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালিত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শুমারিতেও অর্ন্তভূক্ত হয়। প্রতিবেশী অনেক রোহিঙ্গারা চাল সহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা নিয়মিত পেয়ে গেলেও তার পরিবার কোন ত্রাণ সমাগ্রী পায়নি।

একই অভিযোগ ই-৩ ব্লকে ১নং পাহাড়ের মাঝি (সদ্দার) জাহেদ হোছন, ছেতেরা বেগম, রুকিয়া খাতুন, জুবাইদা বেগম, আমির হোছন সহ শত শত নবাগত রোহিঙ্গার। সকলের হাতে বাংলাদেশ সরকারের সম্প্রতি করা অনিবন্ধিত মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিক শুমারির স্লিপ রয়েছে। মাঝি জাহেদ হোছন বলেন, আমার পাহাড়ের ৩৫০ নতুন রোহিঙ্গা পরিবার অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে থেকে ২শ পরিবার নিয়মিত ত্রাণ সহায়তা পেয়ে থাকলেও দেড়’শ পরিবার কোন ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না। কুতুপালং রোাহিঙ্গা বস্তি পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক ও সাধারন সম্পাদক মোঃ নুর জানান, নিয়ম অনুযায়ী নতুন আগত রোহিঙ্গারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সহ বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের তালিকা প্রনয়নের অনিয়মের কারণে শত শত নতুন রোহিঙ্গা কোন ত্রাণ সামগ্রী না পেলেও মাঠ পার্যায়ের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মীদের সাথে সম্পর্ক থাকায় অসংখ্য পুরাতন রোহিঙ্গা ও নিয়মিত ত্রাণ সামগ্রী পেয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং এলাকার ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার বখতিয়ার আহমদ বলেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি স্থানীয় মুক্তি নামক এনজিওর মাধ্যমে নতুন রোহিঙ্গাদের মাঝে পরিবার পিছু ১৫দিন পর পর ২৫ কেজি হারে চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু তাদের বিভিন্ন অনিয়মের কারনে অসংখ্য রোহিঙ্গা অভুক্ত থাকতে থাকতে গতকাল খাদ্য বিতরনের কেন্দ্রের সামনে আহাজারি ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে অভুক্ত একদল রোহিঙ্গা নারি পুরুষ জোর করে খাদ্য বিতরন স্থলে প্রবেশ করতে চাইলে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে আমি দ্রুত ঘটনা স্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় বলে ইউপি মেম্বার জানান।

এনজিওর মুক্তির খাদ্য বিতরন প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল মামুন শাহীন রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরন নিয়ে এনজিও মুক্তির কোন ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নেই বলে জানান। কারন খাদ্য সরবরাহ করছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, তাদের প্রনিত ও সরবরাহকৃত তালিকা অনুযায়ী কুতুপালং নতুন আগত ৬হাজার ৬শ ৪৮ পরিবারের মাঝে ২৫ কেজি হারে চাল বিতরন করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অনেকে আয় রোজগার করতে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ায় চাল বিতরনের দিন অনুপস্থিত থাকায় ও কিছু রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে মিয়ানমার ফেরত চলে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তালিকা প্রনয়ন নিয়মিত হলে বিতরন নিয়ে আর কোন সমস্যা থাকবে না বলে তিনি জানান।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.