কক্সবাজারে ২ মাসে ২৬ খুন

নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার

কক্সবাজার জেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে পরিস্থিতি অবনতির মুখে পড়ে। ফলে খুনখারাবি, মারামারি, চুরি-ডাকাতিসহ সামগ্রিক অপরাধমূলক ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনায় ডিসেম্বর থেকে সর্বশেষ সময় পর্যন্ত নিহত হয়েছে ২৬ জন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত দু’মাস সামগ্রিকভাবে জেলার আট উপজেলাতেই অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। তার মধ্যে চকরিয়া ও টেকনাফ এগিয়ে রয়েছে। এরপরে রয়েছে উখিয়া ও পেকুয়া। অন্য উপজেলাগুলোতে অপরাধ প্রবণতা কাছাকাছি হারে বেড়েছে। অপরাধের ধরনে জমি বিরোধ, পারিবারিক কলহ ও ব্যক্তিগত বিরোধ বেশি ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে তুচ্ছ ঘটনায়ও ঘটেছে খুন। পরিসংখ্যান মতে, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পৃথক ঘটনায় তিনজন খুন হয়। এর মধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের শাহ আলম সিকদার পাড়া গ্রামে মেয়ে জামাইর ছুরিকাঘাতে খুন হয় শ্বশুর। চকরিয়া উপজেলার কাকার ইউনিয়নের পুলেরছড়া গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে খুন হয় এক যুবক। পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেন তার পরিবার। এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। একই দিন টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর পুরানপাড়া সমুদ্রসৈকত এলাকায় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় এক বৃদ্ধা নারীকে। তবে এখনো এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ৩রা ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের পূর্ব নাপিতখালী গ্রামে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়। তবে গণপিটুনিতে মারা যায় মহিউদ্দীন প্রকাশ ককটেল মহিউদ্দীন নামে ওই সন্ত্রাসী। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করে পুলিশ। একই দিন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদী থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে চকরিয়ায় সড়ক ডাকাতদের তাণ্ডব দেখে এক ব্যক্তি স্ট্রোক করে মারা যান। ২রা ফেব্রুয়ারি টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছুরিকাঘাতে এক প্রবাসীর স্ত্রী নিহত হয়। ২৯শে জানুয়ারি টেকনাফের নাইট্যংপাড়া এলাকায় এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তার পরিবার। ২৬শে জানুয়ারি লবণ মাঠ দখল নিয়ে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপের বদিয়াপাড়া কলোনিঘোনায় দু’পক্ষের গোলাগুলিতে উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়। একই দিন পেকুয়ার কবির আহামদ চৌধুরী বাজারে ব্যবসায়ী অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় দু’জন আহত হয়। একই দিন রামুতে ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পেকুয়ার সদর ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত এক বিজিবি সদস্য ২৫শে জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২৩শে জানুয়ারি চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে জমি বিক্রির টাকা না দেয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করে ওই এলাকায় ওসমান গণি। একই দিন একই উপজেলার বদরখালীতে শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করে ফুফা। রাতে বাড়িতে মল ত্যাগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুটিকে হত্যা পাষণ্ড ফুফা। এ ঘটনা নিয়ে সর্বস্তরে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২১শে জানুয়ারি কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়ায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক টমটম চালক নিহত হয়। একই দিন টেকনাফের সাবরাং এলাকায় লুডু খেলাকে কেন্দ্র করে এক রাজমিস্ত্রিকে কুপিয়ে খুন করা হয়। ২০শে জানুয়ারি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সমুদ্র সৈকত থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ১৬ই জানুয়ারি টেকনাফের হ্নীলায় ধর্ষিত হয় এক কিশোরী। একই দিন কক্সবাজার শহরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে দুই পর্যটক আহত হয়। ১৪ই জানুয়ারি কক্সবাজার শহরতলির লিংকরোড জানারঘোনায় অপহরণের পাঁচদিন পর টমটম চালক এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের দাবি, তাকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। ১৩ই জানুয়ারি কক্সবাজার শহরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয় জেলা ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল। ৭ই জানুয়ারি শহরের পাহাড়তলীতে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় শাহ আলম নামে আরেক সন্ত্রাসী নিহত হয়। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় শহরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একই দিন পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের এক জামাতার সৌদি প্রবাসী শ্বশুর নিহত হয়। ৬ই জানুয়ারি রামুর রাজারকুল ছাগলিয়াকাটায় সমাজ সর্দারকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। ৫ই জানুয়ারি চকরিয়ার কোনাখালীতে বখাটের ছুরিকাঘাতে এক ছাত্রী গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই বখাটের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ওই বখাটে এখন কারাগারে রয়েছে। ২৪শে ডিসেম্বর কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডীতে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভাবিকে গলা টিপে হত্যা করে দেবর। একই দিন টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ের উংচিপ্রাং এলাকায় এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাড়ির পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। একই দিন পেকুয়ার মগনামার শরতঘোনা এলাকায় গলায় ফাঁ লাগানো এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। একই দিন কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকায় এক সিএনজি চালককে ছুরিকাঘাত করে টাকা ছিনতাই করা হয়। ১৮ই ডিসেম্বর শহরের পাহাড়তলীতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক যুবক আহত হয়। ১৪ই ডিসেম্বর উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বৃদ্ধকে গলা কেটে হত্যা ও রামুতে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দিনমজুরকে হত্যা করা হয়। ৯ই ডিসেম্বর কুতুবদিয়ার পূর্ব আলী আকবর ডেইল এলাকায় বখাটের বঁটির কোপে চার সন্তানের এক জননী নিহত হয়। সর্বশেষ গতকাল রোববার কুতুবদিয়ার বড়ঘোপের আজম কলোনিতে চিংড়িঘের দখল নিয়ে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে ১১ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে খুনসহ বেশ কিছু অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটেছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আরো নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.