সেলফি জ্বরে আক্রান্ত দেশ,প্রিয় নেতাদের সাথে সেলফি কোন অপরাধ !!

জাহেদ সাংবাদিক ও লেখকঃ
মানুষের বেঁচে থাকার সবকিছু রাজনীতি নয়। রাজনীতি সামাজিক একটি উপাদান বলা যায়। কারো ভালো লাগবে কারো লাগেনা। অনেকে নেতা হতে চায় আর কেহ নেতাদের  ভক্ত হতে চায়। জনপ্রিয় নায়ক নায়িকাদের ভক্ত যেমন থাকবে অন্যদিকে প্রিয় নেতাদের ও থাকবে কিছু ভক্ত। সকলে নেতা হতে রাজনীতি করেনা অনেকে নিজেদের কর্মী ভাবতে ভালোবাসে।
কথা গুলো বলছি সাম্প্রতিকতম সময়ে গত ১৩ই ফ্রেবুয়ারী রাত ১০টা ১৩মিনিটে কক্সজারের এক সমাজকর্মী নিভৃত পথচারী, আর্থমানবতার সেবায় যিনি অনেক গুলো সামাজিক কাজে জড়িত থাকে নিয়ে একটি স্টাটাস দেয় ছাত্রনেতা নাজমুল। যা মিডিয়ায় তীব্র আলোচনা হচ্ছে।  স্টাটাসে অবশ্যই মেয়েটিকে তখন দেশের অনেক বড় বড় নেতাদের সাথে সেলফিতে  দেখা যায়। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে একটি মহল উদ্দেশ্য প্রনোণিত হয়ে  কান্ডটি ঘটিয়েছে বলে দাবি করে মেয়েটি।
জামালপুরের অধিবাসী  সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম স্টাটাসটির শুরুতেই লিখেছেন,কক্সবাজারের সাবেক এক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক ইনবক্স করেছেন বলে। আদৌও কি কারো পাঠানো ছবিও  তথ্য এভাবে যাচাই বাচাই না করে কেহ প্রকাশ করে আমার বোধগম্য নয়। এমনকি সিদ্দিকী নাজমুল এটাও কি, জানতে চেয়েছেন লন্ডনে বসে। যেসব নেতাদের সাথে মেয়েটির ছবি জড়িত তাদের সাথে যোগাযোগ করে। কোন মন্তব্য জেনেছিলো কিনা জানিনা।
তবে আমি প্রবন্ধটি লেখার পুর্বে সম্পাদক নাজমুলের নাম্বার ও ফেসবুকে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন মন্তব্য পাইনি যার স্কিনশট রয়েছে । এমন সাংঘর্ষিক স্টাটাসে কি আঃলীগের নেতাদের বা দলের মান ক্ষুন্ন হয়না!!
কেননা মেয়েটিকে কেউ চিনুক বা না চিনুক তাতে মান যায় না কিন্তু নেতাদের তো জগত চিনে তাইনা।  অনেকে দেখলাম বিষয়টিকে শেয়ার করেছে আর মজা নিচ্ছে। আবার অনেকে কক্সবাজার থেকে সেই স্টাটাসে কমেন্টস করেছে বিষয়টি সম্পুর্ন ভুয়া, আর তথ্যগুলো সাজানো উদ্দেশ্যমুলক মিথ্যা ছবির বর্ননা।
অন্যদিকে মেয়েটির সম্পর্কে জানতে গিয়ে জানা যায়। দলীয় কোন পদে মেয়েটির অবস্থান নেই। তবে ঢাকায় বসবাসকালে নানা সামাজিক অনুষ্টানে যেসব নেতা ও অভিনেতাদের সাথে দেখা হয় তাদের সাথে সেলফি তোলা। তারমতে  শুধুমাত্র দলকে ভালেবেসে দেশের বড় বড় রাজনীতিবিদদের সাথে সেলফি তোলা তার শখ। কেননা মেয়েটি আওয়ামী লীগের সার্পোটার ও তার পরিবার  আঃলীগের পরিবার বলে জোর দাবি  বিষয়টি এতটুকু জেনেছি।
কিন্তু কে কোন দল করে তার আমার আলোচনায় নয়। সেলফিতে কি সমস্যা সেটাই খুজি। অনেকের বাসনা থাকতে পারে বড় বড় নেতাদের রাজনীতি চর্চা করা ও শখের বসে সেলফি তোলা। আর এটা কি রাজনীতিতে অপরাধ। দুনিয়া কাঁপে সেলফি জ্বরে আর সে জ্বরে জয়া জাহান চৌধুরী নামে একজন মানবাধিকার কর্মী বা আওয়ামী ভক্ত কয়েকটি তুলে নিলে তাতে মহাভারত গলদ হয় কোনদিকে বুঝিনা।
দেশে দৈনিক ৪ কোটি লোকের কেউ না কেউতো বড় বড় জনপ্রিয় নেতাদের সাথে সেলফি করে। তাতে কি তাদের চরিত্র হন। ঘটনাটি তাহলে এমন হচ্ছেনাতো কোন তরুণী মেয়ে  আওয়ামী লীগের  কর্মী হতে পারবেনা। সবাইকে নেতা হতে হবে  আর নেতাদের সাথে শুধু নেতারাই সেলফি করতে পারবে। কোন মানবাধিকার  বা সমাজকর্মী  তাহলে নেতাদের ভক্ত হতে পারবেনা।
এ রকম সেলফি ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে আপলোড করেন অনেকেই। মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা থেকে শুরু করে পোপ ফ্রান্সিস কিংবা মহাকাশচারী আকাই হোসাদি, হলিউড কিংবদন্তি মেরিল স্ট্রিপেরও এ ইতিহাস রয়েছে। গত সপ্তাহে শাহরুক খানের সেলফিতে পিছনে দাড়ানো একটা স্কুল ছাত্রীর ছবি নিয়ে বিশ্ব জুড়ে তোলপাড়।
নিজের ছবি তোলা ও তা শেয়ার করার এ প্রবণতা যাঁকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘সেলফি’। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারের কল্যাণে অনেকের হয়তো এই শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে। যেমনটি নায়ক ফেরদৌসের সাথে হলি আর্টিজেনের জঙ্গি নিব্রাস আলমের। এমনকি ভারতের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কাপুরের সাথেও নিব্রাসের ছবি সোস্যাইল মিডিয়ায় এসেছিলো, তার মানে কি নায়ক ফেরদৌস ও শ্রদ্ধা কাপুর জঙ্গী হবে? যদি না হয় তাহলে জয়া জাহানের  কি দোষ, সেটা কি কেউ খেয়াল করেছে!!
সেলফির সংজ্ঞায় আরও বলা যায়, সেলফি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে নিজের মানসিক অবস্থা জানাতে নিজের তোলা বা নিজের সম্পাদনা করা ছবি আপলোড করে ভারচুয়াল বন্ধুদের জানানো। নিজের তোলা ছবি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের পোস্ট করা বাড়তে শুরু করার সেলফি ও হ্যাসট্যাগ অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয় শব্দ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। গবেষকেরা এ প্রজন্মকে বলছেন ‘সেলফি’ প্রজন্ম। এ প্রজন্ম প্রযুক্তি ও নিজেকে নিয়ে ভাবতেই অভ্যস্ত। ভারচুয়াল জগতে বন্ধু তৈরি করে এই প্রজন্ম নিজেকে একাকী করে তুলছে বলেও ভারতের প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
ভারতের মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অঞ্জলি সাবরি বলেন, এখনকার প্রজন্মের তরুণরা ভারচুয়াল জগতে নিজেদের মনের মতো একটি জগত গড়ে তুলছে আর এই জগতে অধিকাংশ সময় সেলফি পোস্ট দিচ্ছে। সেলফি দিয়ে তার মনের ভুল ছবিটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে চাইছে তরুণরা।
নিজের পছন্দনীয় নেতা নেত্রী বা প্রিয় নায়কদের সাথে সেলফি পোস্ট করা কি কোন দোষের কিছু? তাহলে মানুষ কি ছবি ও তোলতে পারবেনা কোন প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও স্বপ্নের  মহান পুরুষদের সাথে। কোনটা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ধারায় পড়ে বুঝতে পারছিনা। কারো সাথে সেলফি তোলা কিংবা কোন মেয়ের ছবি বিনা অনুমতিতে আপ করে  সম্পর্কে  চরিত্রগত  মন্তব্য করা কোনটা ৫৭ধারায় পড়ে পাঠক আপনারা বুঝে নেন। ছবি-বিষয়ক পরামর্শক সিনা আগরওয়াল বলেন, সেলফির মাধ্যমে নিজের প্রতি ভালোবাসা বোঝা যায়। এটি নিজেকে মানসিক শক্তির একটি উপায় হতে পারে। নিজের আত্মবিশ্বাসকে এবং নিজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্তকে স্মরণ করতে আমরা সেলফিতে ক্লিক করি।
খুব আশ্চর্য্য লাগে নেতাদের সাথে কোন কোন কর্মী বা সমর্থক ও ছবি তুলতে চাইলে  তাকে রাজনীতি করতে হবে । নেতা কি শুধু দলের নেতাদের জন্য সৃষ্টি? না গনমানুষ আর সাধারণ মানুষের  জন্য।  যদিও ছবি গুলো দেখা যাচ্ছে অত্যন্ত শালীন ভাবে তোলা । তাহলে কেন এতো সমালোচনা আলোচনা। জনগন কি নেতাদের কাছ থেকে সেটাই আশা করে।
অনেকে মনেকরে নিজেদের বিবেক জাগ্রত করা জরুরী। সেলফিতো খারাপ হতে পারেনা যদি সেটা মার্জিত হয়। তবে সেটাই দোষের মনে হয়,কারো স্টাটাসে যদি কারো ক্ষতি হয় কিংবা পরিবার থেকে একটা বড় বোন, একটা মা একটা বাবার  বকুনীতে যদি কেহ নিঃগৃহীত হয়। নানা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এসব সাইটে ছবি খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আশঙ্কাও থাকে। সামাজিক যোগাযোগের সাইটে প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
সুতরাং রাজনীতিবিদ, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব কিংবা প্রিয়তম মানুষদের সাথে ছবি তোলা কারো দোষের কিছু নয়। আমাদের দরকার হিংসুক মনের পরির্বতন। দরকার দৃষ্টি ভঙ্গি বদলানোর। জগতে যতদিন ততদিন ছবি চলবেই।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.