মোঃ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন টেকনাফ নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের সুযোগ সুবিধা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পর্যটনসেবী সংগঠন স্কোয়াব ও টুয়াক।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর)সকালে শহরের একটি তারকার মানের হোটেলের হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার যে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করেছে, সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও তার বিকল্প হিসেবে সাবরাং থেকে জাহাজ চলাচলের দাবী তুলেন। কক্সবাজার সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল খুবই ব্যায়বহুল দাবী করে টুয়াকের সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমদ দাবী করেন সরাসরি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পর্যটকরাও অনাগ্রহী। তাই সাবরাং থেকে জাহাজ মালিকরা নিজ খরচে অস্থায়ী জেটি নির্মান করবে বলে জানান। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জাহাজ চলাচল শুরু করার জন্য অনুরোধ ও জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পর্যটকরা টেকনাফ থেকে যেতে সাচ্ছন্দবোধ করে তাই পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ হয়ে বেশি পর্যটক যাতায়াত করে।
# পর্যটক হারাতে পারে
# কাজ হারাবে লক্ষাধিক পর্যটক কর্মী
দেশের পর্যটন স্পট সমূহের মধ্যে সেন্টমার্টিন অন্যতম। যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁসহ অসংখ্য পর্যটন প্রতিষ্ঠান। প্রবালদ্বীপের আকর্ষণকে কেন্দ্র করে জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটসমূহেরও কদর বেড়েছে। যেখান থেকে সরকার পাচ্ছে কোটি টাকা রাজস্ব। কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকার যুবক-যুবতিদের। সমৃদ্ধির পথে ব্লু ইকোনমি। তাছাড়া সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা গত দুই বছরের করোনার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ঠিক এমন মুহূর্তে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত অতিকড়াকড়িতে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে পর্যটন খাত। স্বল্প সংখ্যক পর্যটক ব্যবস্থাপনায় দ্বীপের ১৮৮টি আবাসিক হোটেলে নতুন সংকট দেখা দিবে।টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ ও পর্যটক সীমিতকরণ’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াভ) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
বৃস্পতিবার (অক্টোবর) কক্সবাজার শহরের অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ এবং হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ ১ যুগের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। অফুরান সম্ভাবনার প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সুরক্ষায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ জলবায়ুর নৈতিবাচক প্রভাব থেকে দ্বীপকে রক্ষার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছি। ২ বছর আগে করোনার শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাহাজে পর্যটক ওঠানামা এবং পারাপার করে আসছি। সেন্টমার্টিনে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর থাকায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। কারো করোনা শনাক্তও হয়নি। এনিয়ে প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। সেন্টমার্টিনকে করোনামুক্ত রাখতে ‘জাহাজ মালিক-কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ মন্তব্য এই পর্যটন উদ্যোক্তার। প্রধানমন্ত্রীকে ‘মানবতার মা’ উল্লেখ করে হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাসহ ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের খাওয়াচ্ছেন। যে কারণে বিশ্ব নেতৃত্ব আপনাকে ‘মানবতার মা’ স্বীকৃতি দিয়েছেন। আপনি জাতির জনকের কন্যা, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেত্রী। আপনার সুদৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। শুধুমাত্র কক্সবাজারের মতো একটি জেলাতেই ৭৩টি মেগাউন্নয়ন প্রকল্প চলমান। যার বিপরীতে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হলে কক্সবাজারের চেহারাই পাল্টে যাবে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের আবেদন ও ব্যাপ্তি বাড়বে বহুগুণে। কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল, শুটকি, লবণ, চিংড়িসহ নানা ব্যবসার পরিধি বাড়বে। ৬/৭ লাখ বেকার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে। এসব ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণশক্তি হচ্ছে সেন্টমার্টিন। কারণ, সেন্টমার্টিন ঘিরেই এক তৃতীয়াংশ পর্যটক আগমন ঘটে কক্সবাজারে। কিন্তু সেন্টমার্টিনে যদি পর্যটক সীমিত করা হয়, তাহলে কক্সবাজারে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি হোটেল মোটেল ও ব্যবসা এবং পর্যটন খাতে লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগে ধ্বংস নামবে। পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে ঠিক এই মুহূর্তে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ করার চিন্তা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে জাহাজ মালিক। মাত্র একটি জাহাজ চললে কয়েক হাজার পর্যটক বঞ্চিত হবে, যার প্রভাব পড়বে পুরো পর্যটন শিল্পে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ব্যবসা। জাহাজ চলাচল বন্ধ হলেও বিকল্প পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের নৌকায় চড়ে সেন্টমার্টিন যাবে পর্যটকেরা। সুতরাং যে উদ্দেশ্যে জাহাজ চলাচল সীমিত করা হচ্ছে তার কোন সুফল আসবে না। বরং ঝুুঁকি বাড়বে পর্যটন খাতে।
জাহাজ চলাচল এবং হলে হোটেল ব্যবসাসহ পর্যটনখাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
আমরা জানতে পেরেছি, সেন্টমার্টিনে অদূর ভবিষ্যতে দুইটি জাহাজ চলবে এবং ১২৫০ জন পর্যটক যাতায়াতে সুযোগ পাবে। স্বল্প সংখ্যক পর্যটক ব্যবস্থাপনায় দ্বীপের ১৮৮ টি আবাসিক হোটেলে নতুন সংকট সৃষ্টি হবে। কর্মহারা হবে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পর্যটকের যাতায়াত এবং ব্যবসা ঘিরে সেন্টমার্টিনের অন্তত ৫০০০ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। পর্যটক সীমিত করলে তাদের জীবিকাও হুমকিতে পড়বে।
এ ক্ষেত্রে জাহাজ মালিকদের সুপারিশ হলো, বর্তমান চলাচলরত ১০টি জাহাজে করে সর্বোচ্চ ৩০০০ পর্যটক যাতায়াত করবে। দ্বীপের আবাসিক হোটেলগুলোতে কক্ষ আছে ১৪০০টি। প্রতি কক্ষে একজন করে দৈনিক ১৪০০ পর্যটক সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন করুক। বাকি ১৬০০ পর্যটক গন্তব্যে ফিরে আসুক। বিগত ১০ বছর থরে এই প্রক্রিয়ায় পর্যটক যাতায়াত করে আসছে। সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। সাংবাদিকদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, এমন কোন নিউজ করবেন না যাতে পর্যটনের ক্ষতি হয়। নিজ এলাকার মান ক্ষুণ্ন করে এমন রিপোর্ট থেকে বিরত থাকা উচিত।
সেন্টমার্টিনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাহাজ মালিকদের ভূমিকা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৫০০ টাকা দিলেও আমরা অনেক সময় পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকি। আমরা চাই, বিশ্বব্যাপী কক্সবাজার আরো সমাদৃত হোক, সম্মান বাড়ুক। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।
ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার টুয়াক এবং সী ক্রুজ অপারেটরস্ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর যৌথ সংবাদ সম্মেলনঃ-গত ২৮ সেপ্টেjম্বর ২০২২ বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সেন্টমার্টিন নিয়ে সিদ্ধান্তের আলোকে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্কোযাবের প্রেসিডেন্ট জনাব, তোফায়েল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন টুয়াকের সভাপতি জনাব, আনোয়ার কামাল। সঞ্চালনা করেন স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক জনাব, হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)এর সাধারণ সম্পাদক জনাব এ,কে,এম মুনিবুর রহমান টিটু,সহ সভাপতি ইফতিকার আহামদ চৌধুরী, যুগ্ন-সম্পাদক জনাব, আল আমিন বিশ্বাস তুষার। যুগ্ন সম্পাদক জনাব, আকতার নুর। অর্থ সম্পাদক জনাব, নুরুল আলম রনি। পার্বত্য বিষয়ক সম্পাদক জনাব, তৌহিদুল ইসলাম তোহা,আইসিটি প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইদ্রিস আলী, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ মোছা, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জনাব, এস এ কাজল। উপস্থিত ছিলেন ট্যুর গাইড এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার এর সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক জনাব, কামরুল ইসলাম বাপ্পীসহ অন্যান সদস্যবৃন্দ। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মানিত স্কোয়াব এর সদস্য কেয়ারী সিন্দাবাদ ও কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইনের প্রতিনিধি জনাব নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী,আটলান্টিক ক্রুজ এর প্রতিনিধি জনাব মোঃ নাছির উদ্দিনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট গণমান্য ব্যক্তিবগ উপস্থিত ছিলেন। ও সংবাদ সম্মেলনে টুয়াক ও স্কোয়াব কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.