শেষে ৭ বলের মধ্যেই ব্যাকফুটে টাইগাররা!

ওয়ান নিউজ ক্রীড়া ডেক্সঃ দিনের শেষটায় গিয়ে কি যেন হয়ে যায় বারবার। বাংলাদেশের। তাদের শততম টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও তাই হলো। দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে। খেলা অন্তিম মুহূর্তের দিকে। কিন্তু তখনই ইমরুল কায়েস আউট! নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম পরের বলে নেই! পরের ওভারে আউট সাব্বির রহমান! গেল বিকেলে ছিল দিনেশ চান্ডিমালকে আউট করে শ্রীলঙ্কাকে গুটিয়ে দিতে না পারার কষ্ট। বৃহস্পতিবার কলম্বোর পি.সারার মাঠে শেষটায় ৭ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা নিয়ে মাঠ ছাড়া টাইগারদের। কিছুক্ষণ আগেই যে দলটি ছিল ফ্রন্টফুটে, সেই টাইগাররা দেখতে না দেখতে ব্যাকফুটে। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ২১৪ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে তারা। এখনো পিছিয়ে ১২৪ রানে। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ ৩৩৮। সাকিব আর হাসান একটা জীবন নিয়ে ১৮ রানে অপরাজিত। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ২ রান নিয়ে শুক্রবার তার সাথে মাঠে নামবেন।

শ্রীলঙ্কাকে গুটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। ৯৫ রানের জুটি তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের। আগের টেস্টে ১১৮ ও ৬৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন তারা। এবারও মনে হচ্ছিল ১০০ পেরুবে জুটি। কিন্তু ৪৯ রান করে ফেরেন তামিম। রঙ্গনা হেরাথ রিভিউ নিয়ে আউট করেছেন তাকে। আম্পায়ার আলিম দার বলেছিলেন নট আউট।

তিন টেস্ট পর ফেরা ইমরুল এরপর এসে সৌম্যর সাথে ৩৫ রানের জুটি গড়েন। টানা তৃতীয় ইনিংসে ফিফটি হয়ে যায় সৌম্যর। কিন্তু টানা তিন উইকেট নেওয়া বাঁহাতি চায়নাম্যান লক্ষন সান্দাকানের প্রথম শিকার সৌম্য। ১২১ বলে ৬ চারে ৬১ রান করে ফেরেন সৌম্য। বাজেভাবে বোল্ড হয়েছেন সান্দাকানের বলটা বুঝতে না পেরে।

এরপরই আসে একটা জুয়ার প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের জুয়াগুলো কিভাবে যেন বেশিরভাগ সময় কাজে লেগে যায়। মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসানদের পেছনে রেখে এবার সাব্বিরকে ৪ নম্বরে পাঠিয়ে দেন কোচ। আগের টেস্ট মিস করা সাব্বিরও বেশ তেড়েফুড়ে খেলতে থাকেন। ইমরুল ফেরার ইনিংসটাকে নিয়ে যান ৩৪ রান পর্যন্ত। কিন্তু সান্দাকান পরপর দুই বলে ইমরুল ও তাইজুলকে এলবিডাব্লিউর শিকার করে দেন। ইমরুল বাজে শট খেলতে গিয়ে আউট। পরের ওভারে পেসার সুরঙ্গা লাকমালের বলে ক্যাচ তোলেন সাব্বির। ৫৪ বলের ৪২ রানের ইনিংসটি ওখানেই শেষ।

শুরুর ভালোটা বাংলাদেশ যে ধরে রাখতে পারে না বেশিরভাগ সময় সেটা আবার প্রমাণিত। প্রথমে বোলিংয়ে। ১৯৫ রানে শ্রীলঙ্কার ৭ উইকেট তুলে নেওয়ার পরও অল আউট করার আগে আরো ১০০ রান দিতে হয়েছে। ব্যাটিংয়ে দিনশেষে যদি চিত্রটা থাকতো ২ উইকেটে ২১৪, তাহলে? সেটি হতেই পারতো। কারণ, ২ উইকেটে ১৯২ রান ছিল বাংলাদেশের। ১৯৮ পর্যন্ত যেতেই নেই ৩ উইকেট! সে কারণেই দীর্ঘশ্বাস নিয়েই তৃতীয় দিনে মাঠে নামতে হবে টাইগারদের।

এর আগে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে করেছে ৩৩৮ রান। এমনিতে প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষকে ৩৩৮ রানে আটকে দেওয়াটা ভালোর সার্টিফিকেটই দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের হতাশাটা ঠিক অন্য জায়গায়। দেশের শততম টেস্টের প্রথম দিন সকালেই মাত্র ৭০ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি বোলাররা। ১৯৫ রানে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। সেই শ্রীলঙ্কাই শেষ ৩ উইকেটে যোগ করেছে ১৪৩ রান! বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে যোগ করেছে ঠিক ১০০ রান।

দারুণ শুরুর পরও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের এই হতাশার সবচেয়ে বড় কারণ চান্ডিমাল। দলের বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ। শেষ পর্যন্ত মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হওয়ার আগে খেলেছেন ১৩৮ রানের আলো ঝলমলে এক ইনিংস। যে ইনিংসের আলোয় আলোকিত শ্রীলঙ্কান শিবিরও। কারণ তার ওই ইনিংসই তো ১৯৫ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে পৌঁছে দিয়েছে সাড়ে তিনশ’র কাছাকাছি। চান্ডিমাল এই ইনিংসে ৭টি জুটি গড়েছেন।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার ফেরান লঙ্কান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথকে। আউট হওয়ার আগে হেরাথ খেলেছেন ৯১ বলে ২৫ রানের ধৈর্যশীল এক ইনিংস। চান্ডিমালের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৫৫ রানের জুটি। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মেহেদী, ৯০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। মোস্তাফিজ, শুভাশীষ ও সাকিব নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। তাইজুল একটি। রান দেওয়ায় সবচেয়ে কৃপণ ছিলেন মোস্তাফিজ। ২১ ওভারে তিনি দিয়েছেন ৫০ রান, ওভারপ্রতি ২.৩৪। মেডেন ৬টি।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.