রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী চম্পাকলি দীর্ঘদিন পর স্বরুপে গানে ফিরলেন

” মানুষকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেন রবীন্দ্র সংগীত”- শিল্পী চম্পাকলিঃ

জে জাহেদ ফিচার লেখকঃ

” আজ তাঁরায় তাঁরায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে
নিদ্রাবিহীন গগণ তলে—–
গানের প্রতি আজম্ম মানুষের টান। অসম্ভব ধরনের রবীন্দ্র সুরের ইন্দ্রজাল যার কন্ঠে। বিটিভিতে নতুন করে সুরের মোহনায় ছড়িয়ে দেওয়া রবীন্দ্র সংগীতের প্রিয়মূখ নাজনীন নাহার চম্পাকলি। যে গায়িকার ছন্দজ্ঞান ও অসামান্য সুরলা কন্ঠে প্রান পাচ্ছে নিখুঁত রবীন্দ্রচর্চা। মনে হয় নতুন করে ধরনীয় বুকে প্রাণ ছড়াচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্র ঠাকুর।
শিল্পী চম্পাকলি পরিবারের পুর্ব পুরুষদের আগ্রহে ছেলেবেলা থেকে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট। ১৯১৩ সালে নোবেল জয়ী গীতাঞ্জলী পড়ে জম্মেছিলো শিল্পীর আলাদা টান। সৃষ্টি সুখের সুরের মায়াবী টানে প্রতিটি শিল্পীরা তার জীবনে সুখ খুঁজতে চেষ্টা করে কন্ঠের তরে।

তারও ব্যতিক্রম নয় আজকের শিল্পী চম্পাকলি।সংগীতের প্রতি ভালবাসা আর তীব্র টানে পুরোপুরি নিজেকে উৎসর্গ করেন রবীন্দ্র সংগীতে৷ তিনি। ছোট বেলায় বাবার অনুপ্রেরনায় রবীন্দ্র গীতিতে হাতে খড়ি । বাবা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসম্ভব প্রিয়ভক্ত। বাবার স্নেহ ভরা হাত ধরে ঢোল,পিয়ানো, তবলা স্পর্শ করা। নানা সময়ে শিখে নিয়েছেন এসব বাদ্যযন্ত্র, পিয়ানো আর তবলা। শুরুতেই যিনি ভাগ্যগুনে শান্নিধ্য পেয়েছেন খুলনার প্রখ্যাত ওস্তাদ পুতুল দিদি মনিকে। যিনি খুলনা রেলওয়ে স্কুল এর গানের শিক্ষক ছিলেন।
এ ছাড়াও জনপ্রিয় বাদক ফটিক চন্দ্র, বিটিভিতে গানের প্রোগামের বিচারক,নজরুল একাডেমী ও বেতার উচ্চাঙ্গ সংগীতের গুরু জনপ্রিয় সুরস্রষ্টা আব্দুল মালেক চিশতী স্যারের কাছে সংগীতের নানা শিক্ষা দিক্ষা নেন ও তবলা বাঁজানো শেখেন বাদক সন্তোষ কুমার স্যারের হাতে।

শুরুতেই যার গায়কী ঢং ছিল একেবারেই স্বতন্ত্র প্রকৃতির। তাঁর কণ্ঠ মাধুর্যের সঙ্গে ছিল এক ধরণের দৃঢ়তা । রবীন্দ্র সংগীতে তাঁর উচ্চারণ, স্বরক্ষেপণ, তাঁর কণ্ঠ আদর্শ হয়ে উঠেছিল অনুষ্টানের হাজার হাজার রবীন্দ্র প্রেমী দর্শকের।
প্রায় ২ সহস্রাধিক বেশি রবীন্দ্র সংগীতে যুগসন্ধি প্রাণ দিয়েছে তাঁর কণ্ঠ। রবীন্দ্র সংগীত ছাড়াও তাঁর গলায় প্রাণ পেয়েছে অতুলপ্রসাদের গান, ব্রহ্মসংগীত, আধুনিক বাংলা গানের নানা সম্ভার। ব্যক্তিগত কারনে দীর্ঘদিন গানে প্রকাশ্যে না থাকলে ও সাম্প্রতিকতম সময়ে স্বরুপে ফিরে আসলেন গানের জগতে নিজেকে নিয়মিত মেলার ধরার প্রয়াসে। অবসরে কাটে যার গান, কবিতা আর বই পড়ে।
শিল্পী চম্পাকলি খুলনা সরকারি গার্লস কলেজে হতে উচ্চ মাধ্যমিক সমপন্ন করে। তবে কলেজে পড়াকালীন সময়ে তিনি রবীন্দ্র সংগীত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ ডিগ্রী নেন। কলেজ পড়াকালীন সময়ে রবীন্দ্র গানের সম্ভারে “চেতনা” নামক এক গানের অনুষ্টানে শিল্পী হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন।

এছাড়া নাজনীন নাহার চম্পাকলি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়া সত্বেও ক্যান্টনমেন্ট এর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও কিছু মহিলা সংগঠনের নানা অনুষ্টানে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে হাজার হাজার সংগীত পিপাসু দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়ে নানা পুরষ্কারে ভূষিত হন।
এসময় তিনি খুলনা ক্যান্টনমেন্টে শিশুদের নিয়ে রবীন্দ্র অনুষ্টান,চট্রগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গানের লাইভ প্রোগাম, লেডিস ক্লাবে নিয়মিত গানের আসর এবং চট্রগ্রামসহ খুলনায় একাধিক প্রোগামে দর্শক মাতিয়েছেন শিল্পী চম্পাকলি। দেশের গন্ডি পেঁরিয়ে সিংগাপুরেও রবীন্দ্র সংগীতের একক প্রোগাম করে প্রবাসীদের মাতিয়েছেন।

যার ঝুলিতে দক্ষতা হিসাবে জমা রয়েছে চৈতন্য রবীন্দ্র সংগীত কোর্সের সার্টিফিকেট। ঢাকার বিখ্যাত ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শাস্ত্রীয় সংগীতের উপর দখল। ছায়ানট থেকে গত বছর রবীন্দ্র সংগীতের উপর কোর্স সমপন্ন করে সার্টিফিকেট ও অর্জন করেন তিনি। এক সময় যিনি মহাখালীতে একটি আইটি কোম্পানীতে খন্ডকালিন চাকরি ও করতেন।
এমনকি রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ক্যান্টনমেন্টে শিল্পী চম্পাকলির নিজ পরিচালনায় সাংস্কৃতিক ও সংগীত সন্ধ্যা পরিবেশিত হয়েছে বহুবার। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে সুরের ধারা চ্যানেল-আই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে টিভি দর্শকের নজর কেড়েছেন আজকের সংগীত শিল্পী নাজনীন নাহার চম্পাকলি।
দীর্ঘ অনেকটা বছর গানে অনিয়মিত থাকলে ও আবারো নিজের ভালো লাগা হতে ফিরে এসেছেন গানের পাখি গানের জগতে। হয়তো কিছু গান যদি কারো ভালো লাগে সেটাই পরম পাওয়া । বর্তমানে নিজের একক ভিডিও সিডি ও একক প্রোগামের কাজে মনোনিবেশ করেছে শিল্পী নেজেই। বাংলাদেশ শিল্পাকলা একাডেমী প্রাঙ্গন,ছায়ানট,রমনা বটমূলে দেশের নানা সাঃস্কৃতিক অনুষ্টানে যার নিয়মিত পদাচারণা।

সংগীত জীবনে যার লক্ষ্য নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে গানের জগতে শিক্ষা নিতে আসা ছাত্রছাত্রীদের রবীন্দ্রনাথ এর রবীন্দ্র সংগীতের গভীরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। সমসাময়িক অন্যান্য গানের মতো রবীন্দ্র সংগীত যে কতটা বুঝার বিষয় তা নিজেকে উজাড় করে সঁপে না দিলে কখনো বুঝা যায়না বলে মনে করেন তিনি।
এ পর্যন্ত নানা সোস্যাইল মিডিয়া ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে শিল্পীর শতশত গান রয়েছে ইচ্ছা করলে যেকোন দর্শক শুনতে পারেন শিল্পী চম্পাকলির কন্ঠে গাওয়া হাজানো রবীন্দ্র সংগীত।
এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদক শিল্পীর কাছে রবীন্দ্র সংগীত বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পী নাজনীন নাহার চম্পাকলি বলেন,”আমার জীবনে বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রবীন্দ্র সঙ্গীতের যে বিস্তৃত প্রভাব তা আমি কখনও ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা। মনের পুজারী আর ভালোবাসায় ভরা রবী ঠাকুরের সৃষ্টিশীলতা। প্রতিদিনের পথচলার সাথী হয়ে যিনি পথ দেখায় জীবন দর্শন হিসাবে।

কেন জানি ভালোবাসা আর ভালো থাকা শব্দ দুটির স্বাদ এই কবির বানীতে খুঁজে পাওয়া যায়। মনেহয় সব দুঃখ কষ্ট যাতনাকে উঁপড়ে ফেলে মানুষকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেন এই সংগীত। প্রতিটি বাঙ্গালীর অনুভুতি, চেতনায়, সকল আবেগ ও উপলদ্ধিতে এই রবিঠাকুরের বাণীগুলি তিনি কতো গভীরে বসে লিখেছিলেন জানিনা। এক একটি গান যেনো পূজা, প্রেম, প্রকৃতি বা অনুভুতির বাণী আর সংগীত।
জয় হোক রবীন্দ্র সংগীতের, সুর ছন্দ আর তালে——
ফিচারে জে জাহেদ সাংবাদিক।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.