মায়াবতীর ময়নাতদন্ত
মায়াবতী ( ১৩ মাস ), ফুটফুটে ছোট্ট সোনা ! ফুলের মত নিষ্পাপ এবং নামের সাথে চেহারায় ও বেশ মায়া, হামাগুড়ির বয়স, মায়ের কোলে থাকার কথা যে সময় , নিথর শুয়ে আছে লাশ কাটা ঘরে চোখ বুজে নিশ্চুপ হয়ে – একেবারে শোরগোল নেই এমন ঘরে শান্তির ঘুমে !
ঈদের দিন রাতে মায়ের দেয়া গরল সহ্য করতে পারেনি সে ! যে মা আদর যত্নে বড় করেছে, প্রতিনিয়ত খাইয়ে পরিয়ে কোলে নিয়ে বড় করে তুলছে সেই ” মা “ই রাগের বশে নিজে প্রথমে বিষ পান করে খাইয়ে দিয়েছে মায়াবতী সহ অন্য দুই সন্তানকে ! মায়ের দেয়া খাবার তা যে এমন বিদকুটে ও মর্মান্তিক হবে তা কী জানত মায়াবতী !?
ছোট্ট তুলতলে শরীর কি আর এত্ত ধকল সইতে পারে !? মহেশখালী দ্বীপ হতে কক্সবাজার সদরে আসতে আসতে নিস্তেজ ও নীল হয়ে যায় মায়াবতী ! সকল প্রচেষ্টা বিফলে যায় এবং ঠাই হয় লাশকাটা ঘরে ! সারারাত পড়ে থাকে লাশ হিমঘরের ফ্রিজে !
প্রায় পাঁচ শতাধিক পোস্ট মর্টেম করেছি বিগত কয়েক বছর , অনেক “কঠোর ও নিষ্ঠুর ” হতে হয় লাশ কাটা ঘরে, বুক – পেট- মাথা চিরে ফালাফালা করে দেখতে হয় কতকিছু ! খুজে বেড়াতে হয় ৃত্যুর কারন , কিন্তু আজ অন্যরকম দিন, ঘোর লাগা কাজ করে, বাহিরে তুমুল বৃষ্টি কী মায়াবতীর জন্য প্রকৃতির কান্না ?!
যা কখনোই সম্ভব নয় বারবার মনে হয় এই বুঝি ঘুম ভাঙল মায়াবতীর !
বাহিরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামছে, লাশঘরের বাহিরে মায়াবতীর বাবা, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় মায়াবতীর মা চিকিৎসাধীন, অন্য দুই ভাই বোন তিন তলায় শিশু ওয়ার্ডে ! মায়াবতীর আজ ভয় নেই, অচেনা জায়গার আতংক নেই ! খুব মায়া লাগে মায়াবতীর জন্য ! চোখের কোনে জমে অশ্রু , বাড়ে দীর্ঘশ্বাস ! বুকে চাপ বাড়ে ! ডোমের দিকে তাকিয়ে দেখি খুব যত্নে সেলাই দিচ্ছে এবং চোখে চোখ রেখে কথা বলাতে অস্বস্তি বোধ করছে, সেও কী লুকাচ্ছে চাপাকান্না !?
কার পোস্ট মর্টেম করা উচিৎ আসলে !?
মায়াবতীর !?
রাগের !?
ইগোর !?
সম্পর্কের দ্বন্দের !?
নাকি মনের !?
লেখকঃ
ডাক্তার আশিকুর রহমান
ডেপুটি হেড
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.