মগনামা-কুতুবদিয়া নৌ-রুটে অতিরিক্ত টাকা আদায়!

পেকুয়া প্রতিনিধি
কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলে নৌ রুটের ইজারাদারের বিরুদ্ধে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও অসাধু ইজারাদারের বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ ডেনিস বোট ও স্পীডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী বহনেরও অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কোন নিয়মই মানছেন না প্রভাবশালী ইজারাদার ও যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম। তিনি মগনামা নুন্যার পাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা নুর মুহাম্মদ বদর পুত্র।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, পেকুয়া উপজেলার মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলে যাত্রী পারাপারে এক প্রকার চনম নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলের নৌ রুটের ইজারাদারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছেন দরবার ঘাট ও বড়ঘোপ ঘাট পারাপার করা শতশত যাত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: ইউনুচ চৌধুরী এ প্রতিনিধিকে বলেন, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারী হযরাতুল আল্লামা শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবী (র:) এর ২৩তম বার্ষিক ফাতেহা ও ওরস শরীফ কুতুবদিয়াস্থ কুতুব শরীফ দরবারে অনুষ্টিত হবে। এ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ ভক্ত ও মুসল্লি মগনামা ঘাট হয়ে কুতুবদিয়ায় মালেক শাহ এর দরবারে যাতায়াত করে থাকেন। আর এ সুযোগকে পুঁজি করে মগনামা-কুতুবদিয়া নৌ রুটের ইজারাদার দরবারের ওরস শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই দরবারে আগত ভক্তদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। ঝুঁকিপুর্ণভাবে যাত্রী পরিবহণ করছেন। চেয়ারম্যান আরো বলেন, মগনামা-কুতুবদিয়া নৌ রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সম্প্রতি পেকুয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্ত পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারাদারকে জানিয়ে দেওয়া হলেও সেটি মানছেন না তারা।
সরেজমিনে মগনামা-কুতুবদিয়া নৌ রুট পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ঘাট থেকে ড্যানিস বোটে করে কুতুবদিয়ার দরবার ঘাট ও বড়ঘোপ ঘাটে পারাপারে প্রতি জন যাত্রী থেকে নিয়ম অনুযায়ী ২০টাকা করে নেওয়ার কথা থাকলেও গত কয়েক দিন ধওে আদায় করছেন নিচ্ছে ৪০ টাকা করে। স্পীট বোটে নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ১শ টাকার উপরে। এছাড়াও যাত্রীর সাথে থাকা মালামাল থেকেও চারগুণ টাকা আদায় করা হচ্ছে। গলাকাটা ভাড়া আদায় করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ইজারাদারের লোকজনের সাথে যাত্রীদের ঝগড়ার ঘটনাও ঘটছে।
কুতুবদিয়ার দরবার ঘাট থেকে আবদুল মোনায়েম, আবদুল মালেক, মো: করিম নামের তিন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে ২০টাকা দিয়ে যাতায়ত করতাম। সাথে মটর সাইকেলে নিত ৪০টাকা ও মালামাল পরিবহন করলে নিত ৩০ টাকা। কিন্তু এখন ডেনিস বোটে পরিবহন বাবদ প্রতিজন থেকে ৪০টাকা, মটর সাইকেলের জন্য ১শ টাকার উপরে আর মালামালের জন্য নিচ্ছে চারগুন ভাড়া। এর প্রতিবাদ করলে বোট থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি ও লাঞ্চিত করা হয়। একই কথা বলেছেন বড়ঘোপ থেকে আসা অসংখ্য যাত্রীগণ।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, মগনামা-কুতুবদিয়া নৌ রুটে ডেনিস বোটে পারাপারে প্রতিজন যাত্রীদের কাছ থেকে নিয়মানুযায়ী ২০ টাকা করে নেওয়ার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। বেশি অতিরিক্ত নিলে ৩০ টাকা নিতে পারবে ইজারাদার। কিন্তু নিয়ম ভেঙ্গে ৪০ টাকা করে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করার কোন নিয়ম নেই।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে মগনামা-কুতুবদিয়া নৌ রুটের ইজারাদার ও যুবদল নেতা মো: নুরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।
মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলের নৌ রুটে যাত্রী পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর প্রসঙ্গে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুর্বিতা চাকমা বলেন, প্রশাসন নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের জন্য ইজারাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ইউএনও জানিয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.