বিএনপি-জামাত জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে- প্রধানমন্ত্রী

মোঃ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে পর্যটন এলাকা কাঁনায় কাঁনায় ভরে উঠে জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পদভারে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দুর থেকে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হলেও নেতাকর্মীরা হেটে শ্লোগানের মাধ্যমে সমাবেশে যোগ দেন। আইনশৃংখলা বাহিনী ছিল কঠোর নিরাপত্তায়। তারা কোন ধরনেরঘটনা যেন না ঘটে সেদিক বিবেচনা করে জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতাযেন করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিকালে শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামে মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা । সমাবেশের বক্তব্যে তিনি বলেন,২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনেও আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। কক্সবাজার আগে খুবই অবহেলিত ছিল। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই কক্সবাজারসহ পুরো দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। লবণ বোর্ড গঠন করা হবে। যাতে রপ্তানি করা যায়। কক্সবাজারে বিমান বন্দর ও রেল লাইন করা হচ্ছে। এতে যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে। মৎস্য চাষীদের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সমুদ্র সৈকতে যেন বিদেশী পর্যটক আসে তাঁর জন্য সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স হচ্ছে। কক্সবাজারের মানুষের দাবি করতে হয়নি। আমার বাবা কক্সবাজারকে ভালবাসতেন, তাই এখানে সবকিছু দিয়েছি। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। মহেশখালী সিঙ্গাপুর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হবে। যাতে এখানকার সন্তানেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

# নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন
# নির্বাচন ২০২৪ জানুয়ারীতে হবে
# লবণ বোর্ড গঠন করা হবে
# ২৯ প্রকল্পের উদ্বোধন
# চার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
# আধুনিক শুটকী বাজার করা হবে
# রেল ও বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জামাত-বিএনপি আগুন সন্ত্রাস ছাড়া এ দেশের মানুষকে কিছু দেয়নি। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাত করেছে। তাঁর ছেলে তারেক রহমান দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। আমরা শান্তির জন্য র‌্যালী করেছিলাম। আমাদের উপর গ্রেনেড হামরা হয়েছিল। যে গ্রেনেড যুদ্ধের মাঠে ব্যবহার করা হয় সেই গ্রেনেড মারা হয়েছিল আমাদের ওপর। আমাদের আইভি রহমানসহ অনেকে মারা গেছে। আল্লাহর রহমতে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। ধ্বংস করা ছাড়া এরা (বিএনপি-জামায়াত) কিছু পারে না। ৭৫-এর পর এরা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। এরা কী দিয়েছে বাংলাদেশকে? জিয়া সরকার তো কিছুই দিতে পারেনি। বিএনপি-জামাত জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। দেশের মানুষের সম্পদ লুটপাট করে খেয়েছে। তাঁরা স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল ধ্বংস করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সবই করেছে দেশের কল্যাণে। কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নানা কারণে আন্তর্জাতিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তাই খাদ্য উৎপাদনে যার যতটুকু জমি আছে চাষ করবেন। আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নাই। এ দেশের মানুষের জন্য আমার পরিবার জীবন দিয়েছে। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে এই বাংলাদেশ অনেক আগে উন্নত রাষ্ট্র হতো। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে এখন দেশের মানুষের জন্য সবকিছু করছি। এই বাংলাদেশের মানুষ আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় থাকবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। এখানে কেউ ভূমি ও জমিহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা হবে। তাই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অপেক্ষা করুন, খেলা হবে। ফুটবলের মাঠে খেলা হচ্ছে, সামনে খেলা। রাজনীতির মাঠে খেলা হবে, নির্বাচনে খেলা হবে। আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হবে ভোট চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। বিএনপির মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব বাড়াবাড়ি করবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরে গেছে। বিএনপি থেকে সাবধান, তারেক রহমান থেকে সাবধান।”
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংসদ সদস্য জাফর আলমসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সঞ্চালনায় সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কক্সবাজারে ২৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও চার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জনসভাস্থলে এসে শুরুতেই এসব প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলো এক হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে ৫৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন তিনি। উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলো হলো- কক্সবাজার গণপূর্ত উদ্যান, বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ, কুতুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন, পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস, কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ভবন, শেখ হাসিনা জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন, কক্সবাজার জেলার লিংক রোড-লাবনী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীরদ্বীপ অংশ পুনর্র্নিমাণ, প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ, বাঁকখালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), শাহপরীর দ্বীপে সি ডাইক অংশে বাঁধ পুনর্র্নিমাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ, ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারগুলোর পুনর্বাসন প্রকল্প। এছাড়া আরও রয়েছে রামু কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউপি সড়কে বাঁকখালী নদীর ওপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সেতু, কক্সবাজার জেলায় নবনির্মিত ছয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, চারটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন (রামু, টেকনাফ, মহেশখালী ও উখিয়া), কক্সবাজার পৌরসভার এয়ারপোর্ট রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, শহিদ সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, নাজিরারটেক শুটকি মহাল সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, টেকপাড়া সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, সি বিচ রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, মুক্তিযোদ্ধা সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, সৈকত-স্মরণ আবাসিক এলাকা সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন ভবন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পগুলো হলো বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প, কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কে ধুরুংঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি এবং আকবর বলি ঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি নির্মাণ, মহেশখালী উপজেলার মহেশখালী গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলোর (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন প্রকল্প।
এর আগে কক্সবাজারের ইনানীতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউয়ের (আইএফআর) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের নৌবাহিনী ও মেরিটাইম সংস্থার অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে এ আইএফআর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এ আইএফআরের আয়োজন করছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, সৌদি আরব, ভারত, চীন, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস এবং স্বাগতিক বাংলাদেশসহ এতগুলো দেশের অংশগ্রহণে এটি দেশের প্রথম আইএফআর। আইএফআর-২০২২ বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর জন্য তাদের দক্ষতা, নৌ কূটনীতি, সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা প্রদর্শনের জন্য একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। নৌবাহিনী সদর দপ্তর আশা করছে যে আইএফআর সাধারণভাবে বাংলাদেশ এবং বিশেষ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য বড় একটি সুযোগ কারণ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জলসীমায় বিশ্ব নৌবাহিনীর সাথে যোগাযোগ এবং দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যটন ও অবকাঠামো উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হবে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.