মোঃ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ
বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেলস ওয়ার্কার্স এম্প্লয়িস ফেডারেশন কক্সবাজার জেলা শাখার এর তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ জুন) কক্সবাজারের একটি অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেল এমপ্লয়ি ফেডারেশন কক্সবাজার জেলার আয়োজনে শ্রম আইনে সকল পর্যটন কর্মীর সুরক্ষা ও ডিসেন্ট কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং স্বতন্ত্র পর্যটন মন্ত্রণালয় গঠন ও সকল স্টেকহোল্ডারদের মতামত সন্নিবেশিত করে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ নিরাপদ টেকসই পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের পূর্বশর্ত শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল।
তিনি বলেন, পর্যটন এবং পর্যটক এই দুইটি সমন্বয়ে আমাদের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। পর্যটকদের যথাযথ সম্মানের মাধ্যমে এই পর্যটন এলাকা কক্সবাজারকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হবে। এর অনন্য অবদান রাখবেন হোটেল মোটেল ও পর্যটন ব্যবসার সাথে যারা জড়িত আছেন তারা। পর্যটনশিল্পকে তুলে ধরতে হোটেল মালিক নয় যারা পর্যটন সেবি আছে তারাই পারবে এই এই পর্যটন শহর কে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে। যদি একজন পর্যটন সেবি সুন্দরভাবে সেবাদান করে তবে পর্যটক কক্সবাজারে আসতে আকৃষ্ট হবে।
তিনি আরো বলেন পর্যটন এলাকার টুরিস্ট পুলিশদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরেকটু সচেতন করতে হবে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা নিয়ে কক্সবাজারে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেল ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক লায়ন মোহাম্মদ রাশেদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, ট্যুরিজম ডেভেলপার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ হাবিব আলী, কক্সবাজার পৌরসভার নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুকুল, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান, ট্যুর অপারেটর অনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার এর সভাপতি রেজাউল করিম রেজা প্রমূখ।
আলোচনাসভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবেই সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বের অনেক দেশেই বিরল। যার পরিকল্পিত উপস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে পারে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল। বৈচিত্রের প্রাচুর্যতায় আমাদের দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থেকেও পরিকল্পিত উপস্থাপনা আর নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ পর্যটনকে জাতীয় নত করেছে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প প্রতিনিয়ত আলো-আঁধারের দোলাচলে ধরছে। অসম্ভব সম্ভাবনার পড়ো সঠিক নির্দেশনার অভাবে আমাদের পর্যটন শিল্প কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না।
জুন মাসের প্রথমার্ধে ২০২৩-২০২৪অর্থবছরের নতুন বাজেট ঘোষণা করা হয়। নতুন বাজেটের আকার ৭লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫কোটি টাকা, যা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি। নতুন বাজেটে শিক্ষা, কৃষি, ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করা হয়েছে। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের পর্যটনের বাজেট ৭ হাজার ৪ কোটি টাকা থাকলেও নতুন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের পর্যটন বাজেট ৬ হাজার ৫৯৭কোটি টাকা যা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৪০৭ কোটি টাকা কম। বাজেটে পর্যটন শিল্প উন্নয়নে বিশেষ কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বাজেটে পর্যটন কে অবহেলা করা হয়েছে।
এই সংগঠনটি পর্যটন সেবীদের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের ৭টি দাবি তুলে ধরেন।
তাহলো -১/বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে পর্যটনের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা
২/পর্যটন খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইনের শিল্প তালিকায় পর্যটন শিল্পকে যুক্ত করা. পর্যটন খাতের শ্রম আইনের বাস্তবায়ন করা এবং পর্যটনকেন্দ্রিক জেলাসমূহে পরিচালক কৌস্তভ পরিদর্শকের দপ্তর চালু করা। শ্রমিকদের সুরক্ষা সুবন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের আই এল ও গৃহীত নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৩/মজুরি কাঠামো এবং বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মজুরি পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করা ।
৪/পর্যটন খাতে নিয়োগের ক্ষেত্রে হোটেল-রেস্তোরাঁ আইন ২০১৪এর বাস্তবায়ন এবং বিদেশি বা স্বজনপ্রীতি নয় পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া।
৫/যে কোন দুর্যোগে পর্যটন শিল্প সুরক্ষা এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের অবসরকালীন সময়ে তাই করা। হোটেল রেস্তোরা সহ সকল পর্যটন কর্মীদের তৈরি করে তাদের ভর্তুকি মূল্যে রেশন হেলথ কার্ড স্বল্পমূল্যে আবাসন ইনজুরি স্কিম ও পেনশন ব্যবস্থা চালুর জন্য বাজেটে বরাদ্দ সুনির্দিষ্ট করা। সার্বজনীন পেনশন স্কিম এ পর্যটন শ্রমজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৬/ট্যুরিজমের গুরুত্বপূর্ণ স্টক হোল্ডার বা অংশিদার হচ্ছেন পর্যটনের কর্মীরা। পর্যটনের মহাপরিকল্পনা উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটিতে যুক্ত করা। রাষ্ট্রীয় সকল অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনায় পর্যটন বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা।
৭/পরিবেশবান্ধব পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করতে বায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.