নীতিশ বড়ুয়া, রামু
গহীন জঙ্গলে ফুলঝাড়ু কাটতে গিয়ে বন্য শুকরে আক্রান্ত হন আবদুল মালেক ও নুরুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি। ভয়ে অন্য সঙ্গীরা পালিয়ে গেলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদেরকে একাই উদ্ধার করেন, হারুন নামে তাদের এক সঙ্গী। ঘটনার বিবরণ শুনে উদ্ধারকারী হারুন অর রশিদকে বীর আখ্যায়িত করে, নগদ ১০ হাজার টাকা পুরস্কৃত করেন, কক্সবাজার-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল। এ ঘটনায় আহতদেরও চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেন এমপি কমল।
এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন, রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড পশ্চিম কাউয়ারখোপ ঢেবারকাচা এলাকার মোহাম্মদ কবীর প্রকাশ পন্ডিত কবীরের ছেলে আবদুল মালেক (৪৫) ও মৃত আলী আহমদের ছেলে নুরুল ইসলাম (৪২)। তাদের উদ্ধারকারী মো. হারুন অর রশিদ, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসের চর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে।
মঙ্গলবার সকালে পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি হতে প্রায় ৮/১০ কিলোমিটার পূর্বে রেজুখালের আগা নামক জুমখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আহত দুইজনকে কক্সবাজার সদর হাসাপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার বিকালে কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদে বন্য শুকরের আক্রমণ থেকে দুই জনকে উদ্ধারকারী মো. হারুন অর রশিদকে পুরস্কারের ১০ হাজার টাকা ও আহত আবদুল মালেকের পরিবারের হাতে ১০ হাজার টাকা, আহত নুরুল ইসলামের পরিবারের হাতে নগদ ৫ হাজার টাকা চিকিৎসা সহায়তা তোলে দেন সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি। এ সময় কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের শামশুল আলম, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ওসমান সরওয়ার মামুন ও সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া সহ স্থানীয় ইউপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, আমি আহতদের মুখে ও তাদের স্বজনদের কাছে শুনেছি, হারুন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আবদুল মালেক ও নুরুল ইসলামকে উদ্ধার করেছে। হারুন একজন বীর। সে বীরের মতো কাজ করেছে। আমি হারুনকে অর্থ পুরষ্কৃত করে সম্মান জানানোর চেষ্টা করেছি।
এমপি কমল বলেন, আহত দুই জনের চিকিৎসার জন্যও আর্থিক সহায়তা দিয়েছি এবং হাসপাতালে আহতদের যথাযত চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছি। আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছেন বলেও জানান এমপি কমল।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম কাউয়ারখোপ এলাকা থেকে দুই দফায় ১২ জন লোক ফুলঝাড়ু কাটতে বনে যায়। প্রথম দলে আবদুল মালেক ও আবদুল মোনাফ নামে দুই জন, অপরদলে মোহাম্মদ ও তার ছেলে মিজানুর রহমান,
সিফাত, আবদুল গফুর, রওশন আলী, সোনালী, সুরুত আলম, নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে শাহীন সরওয়ার রনি, শ্যালক মো. হারুন অর রশিদ। তারা প্রত্যেকেই রামুর কাউয়ারখোপের মনিরঝিল হয়ে হেঁটে পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি পুলিশ ক্যাম্প এবং পুলিশ ক্যাম্প থেকে পূর্বদিকে আরও ৮/১০ কিলোমিটার হেঁটে গহীন পাহাড় জুমখোলা এলাকায় পৌঁছায় এবং একেক জন একেক দিকে গিয়ে পাহাড়ের ফুলঝাড়ু কাটতে শুরু করে।
আহতদের উদ্ধারকারী মো. হারুন অর রশিদ ও আহত নুরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা দশ-বারজন মিলে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করতে হেঁটে গহীন বনের ভিতরে যায়। ফুলঝাড়ু সংগ্রহের এক পর্যায়ে তারা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এ সময় হঠাৎ এক পাহাড়ের ঢালুতে একটি বন্য শুকর মালেককে আক্রমন করে। মালেকের চিৎকারে, ভয়ে সবাই পালিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও ফুলঝাড়ু কাটার হাতের দা নিয়ে ছুটে যায় হারুন, চিৎকারের শব্দ লক্ষ করে।
হারুন জানায়, মঙ্গলবার রেজুখালের আগায় পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে ফুলঝাড়ু কাটার সময় হঠাৎ করে একটি বন্য শুকর আবদুল মালেকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ও তার হাতে, ঘাড়ে, মাথায় ও পায়ে কামড় দিয়ে তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করে। আবদুল মালেক আক্রান্ত হলে, ভয়ে অন্যরা নিরাপদ দুরত্বে সরে পড়ে।
হারুন বলেন, আমি হাতে থাকা দা নিয়ে চিৎকার শুনে, ছুটে গিয়ে দেখি একটি বন্য শুকর মালেককে আক্রমণ করেছে। ছুটে গিয়ে দা দিয়ে, শুকরের মাথায় ও মুখে চারটি উপুর্যপুরি আঘাত করি। এতে কিছুক্ষণের জন্য মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বন্য শুকরটি। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগে আমার ভগ্নিপতি নুরুল ইসলাম মালেককে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। তখন শুকরটি নুরুল ইসলামকেও আক্রমণ করে, হাতে ও পায়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।
আমি মরিয়া হয়ে লড়াই করি, বন্য শুকরটির সাথে।শুকরটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে, আমাদের অন্য সঙ্গীরা এসে আবদুল মালেক ও নুরুল ইসলামকে উদ্ধার করে, আমরা ওই স্থান ত্যাগ করি।
পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা গুরুতর আহত আবদুল মালেককে আশঙ্কা জনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। নুরুল ইসলামকে প্রথমে রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে তাকেও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, শুকরের আক্রমণে আহত নুরুল ইসলাম নামে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, বন্য শুকরের আক্রমণে দুইজন আহত হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। আহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা চাওয়া হলে আমরা উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবো।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.