ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ
দেশব্যাপী ষষ্ঠ জনশুমারির মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠছে, তাতে সঠিক তথ্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা গেছে। কেউ তথ্য নিচ্ছেন গৃহশ্রমিকের কাছ থেকে, কেউ অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজারের মাধ্যমে। আবার কেউ ‘সময় কম’ বলে তথ্য বসাচ্ছেন মনগড়া। অনেক ক্ষেত্রে বাসায় কেউ না থাকলে প্রতিবেশীর কাছ থেকেও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। জরিপ ও গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এতে সঠিক তথ্য না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, জরিপ আর শুমারির মধ্যে পার্থক্য আছে। শুমারিতে প্রতিটি বাসায় গিয়ে তথ্য নিতে হবে এবং একবারে না পাওয়া গেলে একাধিকবার যেতে হবে। তারা এও বলছেন, শুমারিতে উল্লেখকৃত সব প্রশ্নের সঠিক তথ্য না পাওয়া গেলে পরে বিভিন্ন সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
১৫-২১ জুন সারা দেশে ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ১৪ জুন দিনগত রাত ১২টাকে ‘শুমারি রেফারেন্স সময়’ হিসেবে ধরে ১৫-২১ জুনকে ‘শুমারি সপ্তাহ’ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি দেশ বা সীমানাবেষ্টিত অঞ্চলের সব ব্যক্তির জনতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রকাশের সার্বিক প্রক্রিয়া হলো ‘জনশুমারি’।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর মাধ্যমে মূলত দেশের প্রতিটি বাসগৃহ, খানা ও ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করার কথা।
ধানমন্ডির একটি একক পরিবার। সেখানে তথ্য সংগ্রহকারী আসেন বেলা ১২টায়। বাসায় কাজের সহকারী ব্যক্তি ছাড়া কেউ ছিলেন না। সেই সহকারীর কাছে জানতে চাওয়া হয় ওই বাসায় কারা থাকে, কার বয়স কত। সহকারী বলেন, পুরো নাম বা বয়স তিনি বলতে পারবেন না। এ সময় তাকে বলা হয়, ‘আন্দাজে একটা বয়স বলেন’। এরপর তথ্য সংগ্রহকারীকে সেই সহকারী বলেন, ‘ম্যাডামকে ফোনে ধরিয়ে দিই, আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন।’ তথ্য সংগ্রহকারী তখন জানায়, তার হাতে অত সময় নেই।
লালমাটিয়া এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। বাড়ির নিচে দারোয়ানের কক্ষে বসে একের পর এক ফ্ল্যাটে কল করে গুটিকয়েক প্রশ্ন করছেন এক তথ্য সংগ্রহকারী। বাকি প্রশ্নগুলো নিজেই পূরণ করছেন। এমনকি একক পরিবারের দুই জনের নাম লিখে, আলাদা করে খানা প্রধান কে সেটাও জানতে চাননি তিনি। ধরেই নিচ্ছেন পুরুষ ব্যক্তিই খানাপ্রধান।
শ্যাওড়াপাড়ায় একজন নারী নিজেকে খানাপ্রধান লিখতে চাইলে তাকে বারবার ‘বোঝানো’র চেষ্টা করা হয়, খানাপ্রধান হবেন পুরুষ।
কোনও জরিপ বা গবেষণার তথ্য সংগ্রহে কারও মুখ দিয়ে জোর করে কিছু বলানোর সুযোগ নেই বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো ইশরাত রায়হান।
তিনি বলেন, যখন কাউকে তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠানো হবে তখন অবশ্যই যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিছু প্রশ্ন ধরিয়ে বাসায় বাসায় গিয়ে উত্তর আনাই একমাত্র কাজ নয়। কীভাবে প্রশ্ন করবেন, কোন উত্তরটি কীভাবে লিপিবদ্ধ করবেন সব বিষয়েই গাইড করতে হবে বিশদভাবে। মাঠে নামার আগে এটা জানতে হবে যে নৈতিক কোনও বিষয়ে ছাড় দেওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে শুমারি-কর্মী হিসেবে সারা দেশে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার গণনাকারী, ৬৪ হাজার সুপারভাইজার এবং বিবিএসের সাড়ে ৪ হাজারের অধিক কর্মচারী সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন বলে শুরুতে জানানো হয়। এছাড়াও বিবিএস-বহির্ভূত বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রায় ৯০০ জন কর্মচারী জোনাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা।
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি)-এর প্রধান নির্বাহী সাঈদ আহমেদ বলেন, জরিপের ক্ষেত্রে একটা সুবিধা পাওয়া যায়। ধরুন প্রতি ৫ বাড়ি পর একজন উত্তরদাতা নেওয়া হবে বলে ঠিক করা হলো। সেক্ষেত্রে ৫ বাড়ি পর উত্তরদাতা না পেলে আপনি ষষ্ঠ বাড়ির উত্তরদাতাকে নিতে পারবেন। শুমারিতে সেই সুযোগ নেই। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ধরে ধরে সবার তথ্য নিতে হবে। আমাদের এখানে তথ্য ঠিক হয়েছে কিনা সেটা কম দেখা হয়। তথ্য সংগ্রহর পরে টিমের সুপারভাইজার দৈবচয়ন পদ্ধতি মেনে তথ্য যাচাই করতে সেই এলাকায় যাবেন। কিন্তু সেটিও ঠিকমতো করা হয় না।
তিনি আরও বলেন, শুমারির বড় খামতিটা হলো জেন্ডার অসংবেদনশীলতা। নারী খানাপ্রধান দাবি করলে সেটা নিয়ে যে প্রশ্ন না তুলে সেটাই নথিবদ্ধ করতে হবে, সেটা জানানোও জরুরি। সঠিক তথ্য উঠে না এলে যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হচ্ছে সেই সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রশ্নে প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন বলেন, প্রত্যেককে চার দিনের সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনেও তথ্য সংগ্রহের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ ধরনের অভিযোগ আসার কথা নয়। তারপরও যেহেতু অভিযোগ এসেছে, আমি সারা দেশে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি সোমবারের মধ্যেই।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.