মোঃ নেজাম উদ্দিন,
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণে হাঁসের চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে কয়রা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ড্রেজার ডুবে গেছে। গত বুধবার (৮জুন) সন্ধ্যা সাতটায় দুটি ড্রেজার ডুবে যাওয়ার পর তিন শ্রমিক সাঁতার কেটে টাগবোটে উঠলেও অপর দুই শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। ফলে এ ঘটনার পর নিখোঁজ দুই শ্রমিকের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালান প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ারসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
নিখোজের ৪দিন পার হলেও এখনো তাদের খুজে বের করতে সক্ষম হয়নি দা বেঙ্গল ইলেকট্রনিক লিমিটেড কোম্পানি। তবে তারা বলছে তাদের খোজার তৎপরতা চলমান রয়েছে।
নিখোঁজ শ্রমিকেরা হলেন,টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হারেশা এলাকার মাইন উদ্দিন সরকারের ছেলে মোঃ রমজান আলী(৫৩) ও মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২৩)। নিখোঁজ দুই শ্রমিক মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্পে দায়িত্বরত বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পসকোর সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্যা বেঙ্গল ইলেকট্রনিক লিমিটেড কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিল। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দায়িত্বরতদের অবহেলার কারণে এত দেরি হচ্ছে তাদের খুজে পেতে।
এদিকে মাতারবাড়ির সাজ্জাদসহ ২জনের নিখোজে ঘটনায় পুরো মহেশখালীতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ১১ জন শনিবার বিকালে আতেদ উদ্দারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বলে জানা গেছে। মানববন্ধন থেকে দাবি আসে তাদেও অনতি বিলম্বে খুওজ বের করার। যদি তাদের মৃত্যু হয় তবে তাদের পরিবারের প্রতি সদয় হওয়ার আহবান জানান মানববন্ধনের আসা এলাকার মানুষ।
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্পে দায়িত্বরত বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুমিতমো কর্পোরেশনের নিরাপত্তার দায়িত্ব হাডসনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হামিদুর রহমান জানান, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পসকোর সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দা বেঙ্গল ইলেকট্রনিক লিমিটেড কোম্পানি বালু ভরাটের কাজ করে আসছেন। প্রকল্পে বালু আনলোডিং এর কাজ শেষ হওয়ায় গত বুধবার বিকাল সাড়ে চারটায় পাঁচজন শ্রমিক নিয়ে দুইটি ড্রেজার মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পশ্চিম পাশের চ্যানেল হয়ে দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে কুহেলীয়া নদীতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় সাতটার দিকে ধলঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণে হাঁসের চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পৌঁছলে উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে দুটি ড্রেজার ডুবে যায়। শ্রমিক সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ মিজান ও সেফায়েত উল্লাহ সাঁতার কেটে অপর একটি টাগবোটে উঠলেও সাজ্জাদ হোসেন ও রমজান আলী নামের দুই শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে।
নিখোজ সাজ্জাদ হোসেন এর পিতা গিয়াস উদ্দিন জানান, আমার ছেলে নিখোজ হওয়ার পর থেকে আমি সাগরে গিয়ে খুজতেছি । কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে যারা আছে তারা আমাকে কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।
কক্সবাজার জেলা পরিষদ এর সাবেক সদস্য মুশরফা জান্নাত জানান,সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতারনার আশ্রয় নিচ্ছে। স্থানীয়দের বলছে তাদের খোজা হচ্ছে । কন্তু কাজের বেরায় তারা কোন কাজ করছে না। সাজ্জাদ পরিবারের একমাত্র উপার্জন করার মতো ছেলে ছিল।তাকে তার পরিবার হারিয়ে ফেলেছে। অথচ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থা হাতে নিচ্ছেনা তাকে খুজে বের করার ।
দা বেঙ্গল ইলেকট্রনিক লিমিটেড কোম্পানির ম্যানেজার বিশ^জিৎ কুমার জানান, গত ৮তারিখ দুজন শ্রমিক সমুদ্রে নিখোজের পর কোম্পানির পক্ষ থেকে ডুরি দল এনে তাদের খোজার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে পানির ডেউ বেশি থাকার কারনে ডুবরি দল সময় নিচ্ছে ।
দা বেঙ্গল ইলেকট্রনিক লিমিটেড কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক মোঃ সেলিম খান জানান, সমুদ্রে ডেউ এর কারনে ডুবরি নামতে পারছে ন্।া আজকে ডুবরি নামানো হবে । চট্রগ্রমা তেকে একদল ডুবরি আনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন যদি নিখোজ দুজনকে আমরা না পাই তবে তাদের পরিবারের জন্য যা করতে হয় আমার করবো । তারা আমাদের সন্তান সমতুল্ল্য।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন শিমুল জানান, আমি এ ব্যাপারে জানতে পেরেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় ইউনিয়নর পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে ।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, নিখোঁজ দুই শ্রমিকের খোঁজ নিতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৩৫
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.