ফাইল ছবি
ওয়ান নিউজ ডেক্স,
জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রামের একটি আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এ সময় প্রদীপের সঙ্গে কারাগারে আইনজীবী ও তার স্বজনদের সাক্ষাত এবং মোবাইল ফোনে কথা বলার একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুল আলমের আদালতে প্রদীপকে হাজিরের পাশাপাশি তার আবেদনের ওপর শুনানি হয়। প্রদীপকে হাজিরের সময় আদালত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
দুদকের কৌঁসুলি মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত আগস্টে দায়ের হওয়া একটি দুর্নীতির মামলার ধার্য তারিখে কারাগারে থাকা প্রদীপ কুমার দাশকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এদিন মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। তবে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন আসেনি। প্রদীপের পক্ষে তার সঙ্গে কারাগারে আইনজীবী ও স্বজনদের সাক্ষাত করা এবং কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি আবেদন করা হয়েছিল।’
‘কিন্তু ২০২০ সালের ১ মার্চ আইজি-প্রিজনের একটি সার্কুলার আছে যে, কারাগারে থাকা দুর্ধর্ষ জঙ্গি, ভয়ঙ্কর অপরাধী-চাঁদাবাজদের সঙ্গে স্বজন ও আইনজীবীরা সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। তাদের মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগও নিয়ন্ত্রিত। ওই সার্কুলারের বিষয়টি আমি আদালতে তুলে ধরেছি। আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। এছাড়া মৌখিকভাবে প্রদীপের আইনজীবী তার উন্নত চিকিৎসার আরজি জানান। আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন’— বলেন মাহমুদুল হক।
অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের একটি আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব। ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রদীপ এখন কারাগারে আছেন।
এ ঘটনার পর গত ২৩ আগস্ট দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২-এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে চার কোটি ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের করেন। দুদকের অভিযোগ- উল্লিখিত অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদ তাদের মালিকানায় আছে, যা তারা সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করেছেন।
ওই মামলায় দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রদীপের উপস্থিতিতে শুনানি করে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। ২০ সেপ্টেম্বর দুদক ‘অবৈধভাবে অর্জিত’ তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করে।
আবেদনে প্রদীপ ও চুমকির হেফাজতে থাকা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৪ টাকার স্থাবর সম্পদের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- রেজিস্ট্রেশন খরচসহ ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো মাইক্রোবাস, ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো প্রাইভেট কার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখায় রক্ষিত ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ টাকা।
একই আবেদনে তিন কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ আছে। এর মধ্যে আছে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয়তলা একটি বাড়ি। এর জমির দাম ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ভবনের দাম এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ ১৪ কোটি ২১ লাখ ৭০০ টাকা। এরপর আছে নগরীর পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমির ওপর সাত লাখ টাকা দামের সেমিপাকা ঘর। কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকায় একটি ফ্ল্যাটের বিষয়ও উল্লেখ আছে আবেদনে।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, উল্লিখিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ স্থানান্তর ও হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির কারণ আছে। এজন্য এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণপূর্বক দুদকের একজন রিসিভার নিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য চট্টগ্রাম সদরের সাব রেজিস্ট্রার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক এবং চট্টগ্রামের বিআরটিএ’র উপ-পরিচালকের প্রতি আদেশ জারি করার আবেদন করে দুদক। আদালত দুদকের আবেদন গ্রহণ করে মামলায় উল্লিখিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
সারাবাংলা
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.