সেইদিন ২০১৭ সালের আগস্ট মাস। আমি তখন কোস্টে মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন অফিসার হিসেবে একটি কর্মসূচীতে কক্সবাজারে কাজ করি। তখন কোস্টে আমার কাজের অভিজ্ঞতা তিন বছরের বেশি। কক্সবাজারে কোস্টে আমার যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে যদিও আমি শুরু থেকে কক্সবাজারে কাজ করছি।
* কক্সবাজারে ২০১৭ সালের আগস্টের আগে প্রায় ৩ লক্ষ রোহিঙ্গা বাস করতো। মূলতঃ যারা ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৭ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজারে এসেছে। এর মধ্যে ৩৩,০০০ হাজার রেজিষ্টার শরণার্থী ছিল (কুতুপালং-এ ১৪,০০০ জন এবং নয়াবাজারে ১৯,০০০ জন)। তখন সব রোহিঙ্গাকে বলা হতো Undocumented Myanmar Nationals (UMN)। এখন সবাইকে বলা হয় বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিক (Forcibly Displaced Myanmar Nationals (FDMN)।
মূল প্রসঙ্গ: কক্সবাজারে তখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতো শুধু ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর, আইওএম এবং ডব্লিওএফপিসহ স্থানীয় ৪-৫টি এনজিও। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের ১ম সপ্তাহ। ইউনিসেফের সাথে রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীদের আমাদের সংস্থার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা চলছিল। ইউনিসেফ কক্সবাজার অফিসের সাথে আমি, Zahangir Alam ভাই, Moqbul Ahmed স্যার এবং Eakub Nannu ভাই এই কাজের সাথে যুক্ত ছিলাম। প্রজেক্ট প্লানিং-এর অংশ হিসেবে আমরা কুতুপালং, বালুখালী, লেদা ও শামলাপুরে ব্র্যাকের কিছু সেন্টার পরিদর্শন করলাম। আমরা ২২ শে আগস্ট ২০১৭ সালে প্রজেক্ট প্রপোজাল সাবমিট করলাম। কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের সেন্টার করার জন্য ইউনিসেফের সাথে আলোচনা চলছিল। কোন জায়গায় আমাদের সেন্টার করা যায় তার ক্যাম্পে ভিজিট করতে বলা হলো।
*২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট, সকাল বেলা আমরা ৪ জন (আমি, মকবুল স্যার, জাহাঙ্গীর ভাই ও ইয়াকুব ভাই) বালুখালী ক্যাম্পে গেলাম। তখন ক্যাম্প কে বলা হতো makeshift settlements। দুপুরবেলা আমরা বালুখালীতে (বর্তমানে ৯ নং ক্যাম্প) রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ মায়ানমারে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেলাম। অনেক রোহিঙ্গা কান্নাকাটি শুরু করলো। পাশের এক পাহাড়ে উঠে রোহিঙ্গারা দেখার চেষ্টা করছিল মায়ানমারে কি হচ্ছে। বালুখালীর ঐ অংশটা মায়ানমারের খুব কাছাকাছি। কিছু রোহিঙ্গা বলছিল, মায়ানমারে তাদের অনেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।
আমরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে কক্সবাজার চলে আসলাম। এরপরে ঈদের ছুটিতে আমি রাজবাড়ী চলে গেলাম। এর পরের ঘটনা সারাবিশ্ববাসি জানে। আমিও সেই থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন মানবিক সহায়তা প্রকল্পে যুক্ত। আজও কাজ করছি তাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে।
বিগত ৪ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। স্থানীয় মানুষ অবর্ননীয় ক্ষতির মুখোমুখি। আস্তে আস্তে বিদেশী সহায়তার হার কমছে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে বাড়ছে ক্রমাগত ক্রোধ। এর সমাধান কেউ দিতে পারছেনা। রোহিঙ্গারাও ভালো নেই। কারণ নিজের দেশ ছেড়ে শরণার্থী হিসেবে কেউ ভালো থাকতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারলে আমাদের দেশ একটা বড় মাথা ব্যথার কারণ থেকে মুক্তি পেত।
আমার জীবনে ২৫ আগস্ট সব সময়ই স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
Shahinur Islam,
Head Humanitarian Response,
COAST Foundation.
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.