মোঃ নেজাম উদ্দিন,
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যৌন বাহিত রোগ এইচআইভি (এইডস) ভাইরাস প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এ রোগ। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের অসচেতনতার কারণে তাদের কাছ থেকে এই রোগ কক্সবাজারের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সচেতন মহল মনে করছে। রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরার কারণে এই রোগের সংখ্যা কক্সবাজারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন মত প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞগণ। কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি ।গত মাসেই এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১১জন। সব মিলিয়ে কক্সবাজার এখন আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় এখন এইচআইভি ভাইরাস রোগে পুরুষ, মহিলা ও শিশু মিলিয়ে মোট সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭১০ জনের। তার মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছে ৫০৫ জন ও উখিয়া হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ২০৫ জন। ৭১০ জনের মধ্যে ৬১২ জন রয়েছে রোহিঙ্গা,বাকি ৯৮জন স্থানীয় নাগরিক। । কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে ৬১ রোহিঙ্গা এবং ৫৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা। এদিকে এসব তথ্যে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছে যদি রোহিঙ্গাদের আটকানো না হয় তবে এই রোগ কক্সবাজারে চরম আকার ধারণ করতে পারে।
কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসে কয়েক হাজারের রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত। তারা অনিরাপদভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করছে। নামকরা শহরের লালদিঘী পাড় কেন্দ্রিক কিছু আবাসিক হোটেলে পতিত-খদ্দেরের অবাধ যাতায়াত। যেখানে সন্ধ্যা হলেই এই রোহিঙ্গা যৌনকর্মীদের দেখা যায়। এতে কক্সবাজারে এই রোগ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা যৌনকর্মী ছাড়াও পর্যটন শহর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে যৌনকর্মীদের ব্যাপকহারে কক্সবাজার আগমনও এইডস বিস্তারের আরেকটি অন্যতম কারণ।তালিকায় শুধু যুবক যুবতী নয় আছে শিশুও । কোন না কোনভাবে এই ভাইরাস তাদের শরীরে গেছে। ভাসমান যৌনকর্মী ছাড়াও প্রবাসী অনেকেই এইডস আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরছেন। এইচআইভি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এসব ব্যক্তির কারণে তাদের স্ত্রীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে জানান বিশেষজ্ঞগণ।
এইচআইভি নিয়ে কাজ করা এনজিওদের কাছ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় ২ হাজারের মতো যৌনকর্মী রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগের এইচআইভি সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। ফলে তাদের মধ্যে কতজনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও সমকামীদের বিষয়টি অনেকেই জানে না অথবা জানলেও লজ্জায় অনেকেই মুখ খুলে না বললেও জানা যায়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আশিকুর রহমান জানান, বিশ^ এখন রোহিঙ্গাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার সবসময় চেষ্টা করছি তাদের সুন্দর স্বাস্থ্য সুরক্ষার। রোহিঙ্গা আসার আগে তেমন এই রোগের প্রাদূর্ভাব ছিল না ।রোহিঙ্গাদের কাছে এইচআইভি রোগের প্রার্দূভাব থাকার কারনে ও তাদের অবাধ মেলামেশা ও এক জায়গা বেশি সংখ্যক জনবল হওয়ার কারণে এইচআইভি ভাইরাসটি দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে। এই রোগটি দীর্ঘ মেয়াদী হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আলাদা না করার কারণে এই রোগ আরো ব্যাপকভাবে ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমি মনে করি যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আলাদা রাখতে হবে। তাদের যদি আলাদা করা না হয় তবে দেশের জন্য এটি বড় ধরনের অশনি সংকেত বলে মনে করছি ।তবে এ নিয়ে জাতীয় এইডস এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এইডস/এসটিডি) কাজ করছে । এই প্রোগ্রামে এটিকে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি। এই চ্যালেঞ্জে আমার আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা প্রদান করা এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরাম এর সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য সব সময় আতঙ্কের । মানবকিতার কারনে তাদের স্থান দেওয়া হয়েছে । কিন্তু তারা তার প্রতিদান দিচ্ছে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজ করে। রোহিঙ্গাদেও পাশাপাশি স্থানয়িদের সচেতন করতে হবে যেন তাদের সাথে মেলামেশা না করে। এই রোগ নিয়ন্ত্রন করতে পারে একমাত্র সচেতনতায়।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, এই রোগের সংখ্যা রোহিঙ্গাদের একটু বেশি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের সচেতন করতে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আশা করছি এই সংখ্যা কমিয়ে আনা যাবে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অল্প সংখক স্থানীয় রয়েছে যারা এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত । তাদের আমরা চিহ্নিত করে চিকিৎসা চলমান রেখেছি।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনেক সংস্থা কাজ করছে। বেশ কিছু এনজিও এইচআইভি তথা যৌন সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচিও চালাচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.