ই-ভোটিং নিয়ে ইসি সংশয়ে
ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ সময় স্বল্পতা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনও সংশয়মুক্ত হতে পারেনি। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি চালুর বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, বিশেষত ই-ভোটিংয়ের ব্যবহার নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দুই মেরুতে অবস্থান করায়ও দোটানায় পড়েছে ইসি।
তবে সাবেক হুদা কমিশনের সময়ে চালু করা ইভিএম পদ্ধতি পুরোপুরি হিমাগারে চলে গেলেও ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের (ডিভিএম) গন্তব্যও এখন সেদিকেই বলে জানালেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নতুন প্রযুক্তির ভোটিং মেশিন তৈরিতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই প্রযুক্তির সঠিকতা নির্ণয়ের বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করানো সুদূরপ্রসারী।
এদিকে গত বুধবার সংসদে ই-ভোটিং নিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ভোটারদের অধিকার নিশ্চিত করতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। পরদিন বিএনপির পক্ষ থেকে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা বক্তব্য দিয়ে বলেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত দূরভিসন্ধিমূলক। এরপর থেকে ই-ভোটিং বিষয়ে সংশয়ে পড়ে ইসি।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের মধ্যভাগে ডিভিএম নিয়ে আলোচনা শুরুর পর জামিলুর রেজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি কয়েক মাসে মাত্র একটি বৈঠক করতে সক্ষম হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেয়ার পর কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন কাজ শুরু করলেও এখনো উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তির ডিভিএমের ধারণাপত্রও তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, মেশিন তৈরির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর এ মেশিন ব্যবহারের বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরো বলেন, এ মেশিন ব্যবহার করতে হলে বহু গবেষণা করতে হবে। মেশিন বানাতে হলে আলাদা ইন্ডাস্ট্রি লাগবে। বড় অঙ্কের বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম বা ডিভিএম ব্যবহারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কমিশনের সঙ্গে আলোচনাই হয়নি।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম বা ডিভিএম ব্যবহারের আগে রাজনৈতিক মতৈক্য বেশি জরুরি। পাশাপাশি এ প্রযুক্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ছোট ছোট নির্বাচনে সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম নিতে হবে। এর আগে আইনবিধি সংস্কারও করতে হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে মাত্র ২১ মাস সময়ে এসব প্রক্রিয়া শেষ করার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ইসির কর্মকর্তাদের। কারণ ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের আগে সময় রয়েছে প্রায় ২১ মাস। এ ছাড়া রাজনৈতিক নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি একসঙ্গে ১০ কোটির বেশি ভোটারের আঙুলের ছাপ সন্নিবেশ করা এবং তাদের ভোটদানের উপযোগী করার মতো বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
সম্প্রতি অবসরে যাওয়া ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রযুক্তিনির্ভর মেশিনের সহায়তা নিয়ে ভোটগ্রহণ করতে হলে অনেক ধাপ পেরুতে হবে নতুন কমিশনকে। মেশিন উদ্ভাবনের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালুর ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে ডিভিএম ব্যবহারের বিষয়টি যুক্ত করতে হবে এবং আলাদা বিধিমালা করতে হবে। আগের কমিশন আইন সংস্কারের সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি আরো বলেন, এ বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে কাজ করতে গেলে স্বল্প সময়ে সম্ভব হবে না। শুধু আইন সংস্কার করলেই হবে না, সেই সঙ্গে বিতর্কমুক্ত রাখতে সঠিকতা যাছাই নিশ্চিত করতে হবে। অন্তত দুই লাখ ডিভিএম মেশিন তৈরি, ভোটার যাছাই নিশ্চিত, ফলাফল নিয়ে জটিলতা তৈরি এবং রাজনৈতিক মতবিরোধ মিটিয়েই তা করতে হবে। কারণ সদ্য বিদায়ী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন আগের কমিশনের ইভিএম প্রযুক্তির ব্যবহার করতে গিয়ে হোঁচট খায় এবং চলমান প্রকল্পটি বাতিল করে। কারণ ছোট ছোট নির্বাচনে কোনো একটি প্রযুক্তি সফল হলেও বড় নির্বাচনে সফলতার নজির কম। কারণ রাজশাহী সিটিসহ কয়েকটি সিটিতে খণ্ড খণ্ডভাবে ইভিএম ব্যবহার করার মধ্যে রাজশাহীর একটি ওয়ার্ডে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। তখন ওই নির্বাচনটি চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল সদ্য বিদায়ী কমিশনের জন্য।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.