সংবাদদাতা:
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কালোবাজারি সিন্ডিকেট। প্রশাসন অভিযান চালালেও ফাঁকি দিয়ে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কার্যক্রম। পাচার করছে চাল, ডাল, তেলসহ নানা সামগ্রী। প্রশাসনের অভিযানে কিছু কিছু পাচারকারী আটক হলেও অধরা শতাধিক সিন্ডিকেটের মূল ব্যবসায়ীরা।
তাদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত প্রশাসন। বুধবার (১০ জুন) রাতে অভিযান চালিয়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রেশনের ২০ বস্তা চাল ও ১৮০০ লিটার ভোজ্য তেল ট্রাকে করে পাচারকালে তিনজনকে আটক করে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাতে পাচারকালে ১০০ বস্তা ত্রাণের চালভর্তি একটি ট্রাক জব্দসহ একজনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে স্থানীয় ও রোহিঙ্গারাও রয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে একসাথে ব্যবসা করে আসছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
জানা যায়, প্রয়োজনের বাইরে এনজিও সংস্থাগুলো থেকে যেসব ত্রাণসামগ্রী রোহিঙ্গারা পায়, সেসব ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করে দেয় তারা। অনেক রোহিঙ্গা স্থানীয়দের গ্রামে গ্রামে গিয়ে কমদামে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের বিশাল একটি অংশ এসব ত্রাণসামগ্রী বিক্রি করে কালোবাজারি সিন্ডিকেটের কাছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব সিন্ডিকেট বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হলো রোহিঙ্গাদের অপ্রোয়জনীয় সামগ্রীর অবাধ বিক্রি। রোহিঙ্গারা টাকার জন্য ত্রাণ সামগ্রীর অতিরিক্ত একটি অংশ বিক্রি করে দেয়। ১১ লক্ষের উপরে এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিক্রি করা ত্রাণসামগ্রী ক্রয় করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে শতশত সিন্ডিকেট।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটে রয়েছে স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা। স্থানীয় যে ব্যবসায়ীগুলো রয়েছে তারা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমেই চাল, ডাল ও তেল ক্রয় করিয়ে থাকে। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কৌশলে ক্রয়কৃত জিনিস প্রশাসনের চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে বাইরে এনে মজুদ রাখে। পরে চড়া দামে বিক্রি করে।
উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালীতে গড়ে উঠেছে এসব সিন্ডিকেট। জামতলী, হাকিমপাড়া, তাজনিমারখোলা, ঘোনারপাড়া, ময়নার ঘোনা, মুছারখোলা, লম্বাশিয়াসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরের এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি কার্যক্রম চলে বলে জানা গেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরেও এসব কালোবাজারি সিন্ডিকেট সক্রিয়। গত ২২ মে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের একটি গুদামে অভিযান পরিচালনা ৫৪৫০ কেজি ভিজিডি’র চাল জব্দ করেছিল উপজেলা প্রশাসন। সরকারিভাবে বিতরণকৃত এসব চাল বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মজুদ রেখেছিল অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় উপকারভোগীদের কাছ থেকে কিছু সিন্ডিকেটের সদস্যরা কমদামে চাল কিনে মজুদ রেখে পরে চড়া দামে বিক্রি করে থাকে। এধরনের খবর আমরা পেলে সাথে সাথে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করি। পরে উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কালোবাজারি সিন্ডিকেটের কার্যক্রমের ব্যাপারে ১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক নিপু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্প ভিত্তিক চক্রগুলো রোহিঙ্গাদের প্রদত্ত রেশনের চাল, ডাল, তেলসহ নানা পণ্য কমদামে কিনে বাইরে নিয়ে বিক্রি করে। আমরা এধরনের খবর পেলে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে থাকি। অপরাধীদের ধরতে পারলে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দেয়া হয়।
নাঈমুল হক জানান, গত কয়েকদিনে আমাদের হাতে এমন কয়েকজন ধরা পড়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পাশাপাশি আটককৃতদের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল মজুদ ও পাচারের অভিযোগে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এসব কালোবাজারি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.