ইমাম খাইর:
টেকনাফের হোয়াইক্যং কাটাখালী এলাকায় বাঙালি ও চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৪ অক্টোবর) বিকালের ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
চাকমাদের প্রসাদ খাওয়ার ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, মাদকের চালান ছিনতাইয়ের সুত্র ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ।
চাকমাদের অভিযোগ, এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল সম্রাটসহ ২০ জন। এতে কাজল চাকমার ছেলে মহলং চাকমা (৪৫), জতিন চাকমার ছেলে উনমদি চাকমা (৩০) ও মংপ্রুচিং চাকমা (২৫), থাইংচাহ্লা চাকমার মেয়ে মৃদুলী চাকমা (১৬), ক্যায়াচু অং চাকমার ছেলে আথুইমে চাকমা (৩০) আহত হয়েছেন।
বাঙালি আহতদের মধ্যে আছেন কাটাখালীর আব্দুল মজিদের ছেলে মোহাম্মদ মানিক (১৮), আব্দুর শুক্কুরের ছেলে রশিদ আমিন (১৭) ও মোহাম্মদ কালুর ছেলে মোহাম্মদ সেলিম (২৮)। ঘটনার ব্যাপারে একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছে।
ঘটনার ব্যাপারে কাটাখালী চাকমা পল্লীর বাসিন্দা পপি চাকমা বলেন, কয়েকজন চাকমা তরুণী স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারের নলকূপে থালা ও হাড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজ করছিল। এসময় বৌদ্ধ বিহারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কয়েকজন বাঙালি যুবক তাদের উত্ত্যক্ত করে। এতে চাকমা তরুণীরা প্রতিবাদ জানালে বাঙালি যুবকরা তাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন চাকমা যুবক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাঙালি যুবকরা হামলা চালায়। বিকালে এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৩০/৪০ বাঙালি যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে বৌদ্ধ বিহার ও চাকমা পল্লীতে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারিরা বৌদ্ধ বিহারের রান্নাঘর ভাংচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, চাকমা সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্নিমার অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানের প্রসাদ (খাবার) খাওয়া শেষে হাড়ি-পাতিল পরিস্কারের সময় ছবি তুলতে যায় স্থানীয় কিছু যুবক। এ নিয়ে বাঙালি যুবকদের ওপর হামলা চালায় ক্ষিপ্ত চাকমারা। হামলার সুত্র ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
ওসি জানান, ঘটনাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপনের কোন সুযোগ নাই। ঘটনার আরো কোন কারণ আছে কিনা, তা অনুসন্ধান চলছে।
ঘটনাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক ফায়দা হাসিলের কোন সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ওসি মো. হাফিজুর রহমান।
এদিকে, হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় এজাহারনামীয় ১৩ জনসহ আরো ৩৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে। কাটাখালী চাকমাপাড়ার মৃত কাজল চাকমার ছেলে জতিন চাকমা (৬০) বাদি হয়ে রবিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে মামলাটি করেছেন। যার নং-৯০/২১।
তবে, ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয়দের নিকট থেকে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। মামলার বর্ণনার সাথে ঘটনার কোন মিল নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা তোফাইল বলেন, রবিবার (২৪ অক্টোবর) ভোর ৬টার দিকে বাহারছড়া ডেইঙ্গাকাটা সড়কে কয়েকজন চাকমা মিলে বাঙালীদের টাকা-পয়সা ও তরি-তরকারী কেড়ে নেয়। খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে জানতে পারলাম, তরকারী নয়, ইয়াবা কেড়ে নিয়েছে। এই খবরে আর যাইনি।
এ ঘটনা নিয়ে বেলা দুইটার দিকে ডেইঙ্গাকাটা এলাকায় কয়েকজন চাকমার সাথে আমার কথা কাকাকাটি হয়। এ পর্যায়ে তারা আমার মোবাইল, টাকা কেড়ে নেয়। ওই সময় আমি একা। নিরুপায় ছিলাম। সেখান থেকে কোনমতে চলে আসি। আসরের পরে কাটাখালী ব্রিজের ওপর তাদের একজনকে দেখে থাপ্পড় মারি। এ বিষয়ে আমার বড় ভাই কাইছারকে বিচার দেয় চাকমারা।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, ইয়াবা কেড়ে নেওয়া ও থাপ্পড় মারাকে কেন্দ্র করে রবিবার বিকালে কাটাখালী ব্রীজের উপরে বৈঠকে উভয়পক্ষের লোকজন জড়ো হয়। সালিশ চলাকালে এক পর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়। এতে উভয়পক্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় ১০ জন মতো আহত হয়েছে।
সন্ধ্যার দিকে চাকমার পল্লীর পরিত্যক্ত বাড়ির রান্না ঘরে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হয়। যেখানে বাঙালীদের কোন সম্পর্ক নাই।
সাম্প্রদায়িক ইস্যু টেনে ফায়দা হাসিল করতে চাকমারা নিজেরাই ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে।
হোয়াইক্যং মডেল ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, তুচ্ছ বিষয়ে বাজার এলাকায় ঘটনা হয়েছে শুনলাম। চাকমা পাড়ায় অগ্নিসংযোগের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:১০
আগের খবর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.