ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি দুদকের মামলায় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মসিউরের ১০ বছরের কারাদন্ড, সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ

জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমানের ১০ বছরের কারাদন্ড ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার যশোরের স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার দুটি ধারায় এ আদেশ দেয়া হয়। ২৬ (২) ধারায় তথ্য গোপনের অভিযোগ তিন বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা; ২৭ (১) ধারায় ৭ বছরের কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদন্ড। এছাড়াও ১০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মসিউর রহমান জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ। বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি। এর আগে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। এদিকে এ রায়কে প্রত্যাখ্যান করে ঝিনাইদহ বিএনপি বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলাব্যাপী আধাবেলা হরতাল ডেকেছে। রায় ঘোষণার পর যশোর প্রেসক্লাবে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের এ ঘোষণা দেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে তারা ন্যায়বিচার পাননি। ফলে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি নেতা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলায় চার্জ গঠনের পর যশোর আদালতে ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এই বিচারক এই রায় দেন। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু আসামি পক্ষের নানা অপতৎপরতার কারণে মামলাটির বিচার কাজ দীর্ঘায়িত হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহিদুর রহমান জানান, তারা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। মামলার রায়ে তারা সন্তুষ্ট।

 

মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন প্রায় ১০কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন মৃধা মামলা দায়ের করেন। ২০০৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্ত শেষে মো.মসিউর রহমানকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখির করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে যশোরের উপ-পরিচালক মো.নাসির উদ্দিন। যার নম্বর ৩৮৮। ২০০৯ সালের শেষের দিকে ঝিনাইদহ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত মামলাটি আমলে নেন। আমলযোগ্য মামলাটির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে প্রসিডিং কোয়াসমেন্টের জন্য আবেদন করেন মো. মসিউর রহমান। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুন উচ্চ আদালত মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করেন। যার নম্বর ক্রিমিনাল মিসকেস নম্বর ১৬৬/৭১/২০১০। চার বছর পর ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল উচ্চ আদালত আসামির মকদ্দমা খারিজ করে স্থগিতাদেশ বাতিল করেন। একই সঙ্গে স্পেশাল জজ আদালত যশোরকে মামলার কার্যক্রম আইন অনুযায়ী পরিচালনার নির্দেশ দেন। এরপর আসামি পক্ষের বিভিন্ন সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল (যারা নম্বর ৩৩২/১৪) দাখিল করেন আসামি। পরবর্তীতে লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে গেলে পুনরায় সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন ৭৪/১৫ দাখিল করেন। রিভিউ পিটিশন খারিজ হলে বিচার কাজ শুরু হয়। পুনরায় আয়কর আইনের বিরুদ্ধে ৪৩৩৭/১৬ রিট পিটিশন দাখিল করেছেন উচ্চ আদালতে। সেখানে এই মামলার বিষয়টিও অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এদিকে, ১৬ অক্টোবর আদালতে দুই পক্ষের আইনজীবীর যুক্তি তর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন হয়। এরপর আদালত নির্ধারিত দিনে (২৫ অক্টোবর) মামলার রায় ঘোষিত হলো। রায় ঘোষণার পর আদালত সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.