আমাকে স্লোগান শিখিয়েছে স্কুল ছাত্রলীগ–জেলা সভাপতি জয়
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সাম্প্রতিকতম সময়ে দেশের সব বিদ্যালয়ে শিশুদের ছাত্রলীগ কমিটি গঠন নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়।
আজ সকাল ১১টা ২০ মিনিটের সময় ফেসবুক স্টাটাসে মন্তব্য করলে বেশ আলোচনায় ঝড় তোলে সামাজিক মাধ্যমে।
গত কয়েক বছরে একের পর এক রাজনৈতিক বিষয়ে কড়া সমালোচনা করে স্যোসাইল দুনিয়ায় বেশ ঝড় তুলে যাচ্ছেন ছাত্রনেতা জয়।
নিজ দলের এমপি কিংবা দলের বাহিরে নানা অসামাজিক কর্মকান্ডের সমালোচনায় এক্টিভ ততার ফেসবুক।
যা পাঠকের প্রয়োজনে হুবহু তুলে ধরা হলো ফেসবুক পাতা হতে।
স্কুলে স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেইসবুকে বেশ সমালোচনা হচ্ছে।
স্কুলের ছেলেমেয়েরা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে,তারা বিপথে চলে যাবে এরকম আশঙ্কা করেছেন অনেকে।তবে খেয়াল করে দেখলাম, এই আশঙ্কা যারা করছেন তাদের অধিকাংশই ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে জড়িত, অনেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত।
এখানে আমি ‘ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ’ বলতে বুঝিয়েছি ‘মৌলবাদী গোষ্ঠী’কে। তবে কিছু কিছু অভিভাবকও এ ব্যাপারে চিন্তিত। স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি করার ব্যাপারে যে সব অভিভাবক চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, তাদের দুঃচিন্তা দূর করার জন্যই আমার এ লেখা। দুঃচিন্তা দূর করার আগে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকের কয়েকটি প্রশ্ন করে অভিহিত করে দুঃচিন্তার মাত্রা সাময়িক ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছি।
প্রশ্নগুলো হলোঃ–
১) বাংলাদেশে সংগঠিত কয়েকটি জঙ্গিবাদী অপতৎপরতায় স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়ে সম্পৃক্ত ছিলো। এই সম্পৃক্ততার কারণ কি?
২) স্কুল ও পাড়া কেন্দ্রিক ছোট ছোট গ্রুপভিত্তিক মারামারিতে প্রাণহারীর যে ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে তার কারণ কি?
৩) স্কুলগামী ছেলে মেয়েদের (সংখ্যায় যদিও খুব একটা বেশী না) নেশায় জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে কি কি ভূমিকা থাকতে পারে?
৪) আমার উল্লেখিত বিষয়ভিত্তিক বাস্তবিক তিনটি প্রশ্নের সাথে আপনার সন্তান বা প্রিয়জন জড়িয়ে পডছে না এর গ্যারান্টি কি?
এই প্রশ্নগুলোর সাথে অনেক বিষয় উত্তর হিসেবে আসতে পারে, তবে প্রধান যে কারণ তা হলো মৌলবাদের স্রোতে শিশুতোষ মনকে ভাসিয়ে দেওয়ার চলমান প্রক্রিয়ায় স্কুলগামী ছেলে মেয়েদের জড়িয়ে ফেলা, এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের ফাঁদে আটকে ফেলে নানাবিধ রাষ্ট্রবিরোধী ও অমানবিক কাজে ব্যবহার করা।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের যাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বেশ গোপনীয় এবং যারা মূলধারার রাজনৈতিক আচরণ ও নীতির বাইরে অবস্থান করে ছাত্রছাত্রীদের প্রভাবিত করছে।
আপনার সন্তান কিংবা প্রিয়জন এই প্রভাবের আওয়াতার বাইরে অবস্থান করছে,তা কিভাবে নিশ্চিত হবেন আপনি? স্কুলে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা থাকলে গোপনীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম দূর হয়ে যাবে, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
আর আরেকটি ব্যাপার এখানে উল্লেখযোগ্য তা হলো, ছাত্রলীগের এই স্কুলভিত্তিক কার্যক্রম আগেও ছিলো। মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ ছিলো, এখন আবার শুরু হয়েছে। এতোদিন কেন স্কুলে ছাত্রলীগের কার্যক্রম বন্ধ ছিলো? এরকম প্রশ্ন না তুলে উল্টো প্রশ্ন করা হলো, স্কুলে ছাত্রলীগের কার্যক্রম কেনো শুরু হলো।
এবার একটু অন্যভাবে বিষয়টি ব্যাখা করি, উন্নত বিশ্বের স্কুলগুলোতে রাজনীতির চিত্র অনুযায়ী।
প্রত্যেকটি উন্নত দেশে স্কুল থেকেই রাজনীতির চর্চা শুরু হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো স্কুলে তদের কর্মপ্রক্রিয়া সম্পাদন করে। তবে একেক দেশে একেক ধরণের নিয়ম। পুরো আমেরিকাতে দুইশোর উপরে রাজনৈতিক দলের স্কুল উইং আছে যার মাধ্যমে সংগঠনের কার্যবিধি সম্পাদিত হয়। ওদের নামগুলো বেশ অদ্ভুত, আদুরে আদুরে নাম।
যেমনঃ
ব্লাক ইউথ প্রজেক্ট
ক্যাম্পাস এক্টিভিজম
ড্রিম ভিফেন্ডার
এরকম আরও অনেক নাম। অনেক ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক রাজনৈতিক দলের স্টুডেন্ট উইং একত্রিত হয়ে সংগঠন পরিচালনা করে।
স্কুলপড়ুয়া কোন ছাত্র বা ছাত্রী সাধারণত বয়স স্বল্পতার জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদান করতে পারে না,তবে স্কুলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। প্রতিটি নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক নতুন ভোটার থাকে, যাদের ভোটের সিদ্ধান্তের একটা বড় অংশ স্কুল জীবন দ্বারা প্রভাবিত।
ব্যাপারটি রাজনৈতিক হলেও এর সাথে মনস্তাত্ত্বিক একটি যোগাযোগ আছে। এই পুরো ব্যাপারটাকে এক কথায় “ইয়ুথ টার্ন আউট” বলা হয়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো “সেল্ফ ক্যারেকটারাইজেশন”।
প্রত্যক্ষ রাজনীতি চর্চার সাথে নিজে নিজে যুক্ত হওয়া বা না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারার ক্ষমতার মাধ্যমে “সেল্ফ ক্যারেকটারাইজেশন’ শক্তিশালী হয়। এই কারণে পৃথিবীর সব নামীদামী স্কুলে ছায়া সংসদ,ছায়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রলীগের স্কুলে যে কার্যক্রম পরিচালিত হবে তা মূলত কারিকুলাম কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত, কিছুটা সম্প্রসারিত ও বিকশিত এবং অনেকাংশে সাদৃশ্যপূর্ণ। সভা, সমাবেশ ও মিছিল কেন্দ্রিক কোন অংশগ্রহণ স্কুল ছাত্রলীগের থাকবে না এবং কোন বাধ্যবাধকতা নাই সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার।
মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, ইতিহাদ, বিজ্ঞান ও মূল্যবোধ বিষয়ক পাঠচক্র; বইপড়া, লেখালেখি করা…
এইসব মিলেই স্কুল ছাত্রলীগ।
এই চর্চায় আপনার আপত্তি থাকলে আপনার প্রতি আমার সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে কি আপনি চান স্কুলে স্কুলে গোপণে গোপণে জিহাদি বই সরবরাহ করে জঙ্গীবাদের দিকে নিয়ে যাক স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের?
আমি নিজেই স্কুলে ছাত্রলীগ করেছি। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে আমি আমার স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। স্কুলজীবনের সেইসব ছাত্রলীগ করা দিনগুলোর কাছে আমি ভীষণ ঋণী।
আমাকে বিতর্ক করতে শিখিয়েছে স্কুল ছাত্রলীগ, আমাকে লেখালেখি করতে শিখিয়েছে স্কুল ছাত্রলীগ, আমাকে আবৃত্তি শিখিয়েছে স্কুল ছাত্রলীগ ,আমাকে স্লোগান শিখিয়েছে আমার স্কুল ছাত্রলীগ…
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.