১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধন সন্ধ্যায়
ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ পাঁচ দিনব্যাপী ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আজ শনিবার। আজ সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আইপিইউর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলন শেষ হবে আগামী ৫ এপ্রিল। আইপিইউর এবারের সম্মেলনের থিম বা মূল প্রতিপাদ্য— ‘সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন’।
১৮৮৯ সালে যাত্রার ১২৮ বছর পর এবারই প্রথম এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে। আয়োজক দেশ হওয়ায় এবারের সম্মেলন বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধে বিভিন্ন দেশের সরকার ও পার্লামেন্ট কীভাবে একযোগে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে কৌশল প্রণয়নের উপায় নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৩১টি দেশের সংসদীয় প্রতিনিধি দল এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টের ৫৩ জন স্পিকার ও ৪০ জন ডেপুটি স্পিকার অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে অংশ নিতে গতকাল সকালের মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন ১ হাজার ৩৫৫ জন প্রতিনিধি।
সংবাদ সম্মেলন সূত্রে জানা গেছে, আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় একটি বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন ও আইপিইউ ওয়েব টিভি উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনের অন্যান্য ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
এবারের সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুধু পাকিস্তান অংশ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। দেশটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে আয়োজকদের তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে দেশটিকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের সম্মেলন।
সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ সম্মেলনের আয়োজক ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এবারের আইপিইউ সম্মেলন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় একটি বড় অর্জন। গণতন্ত্র সুসংহতকরণ, সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি চর্চার ক্ষেত্রে আইপিইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্পিকার আরো জানান, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেবে। সংসদে সরকারি, বিরোধী দল, স্বতন্ত্র ও নারী সংসদ সদস্যরা এ প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান স্পিকার। দেশে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ও সন্ত্রাসী হামলার কারণে আইপিইউ সম্মেলন আয়োজনে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এত বড় একটি সম্মেলন আয়োজন করাটাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সারা বিশ্বেই এখন জোর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে। সেখানে আমরা সুষ্ঠুভাবে এটা করতে পারছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করছে। তাদের ধন্যবাদ। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। এ সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হলো যে, বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, আয়োজক দেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে এবারের সম্মেলনে অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আজ বৈশ্বিক সমস্যা। শুধু সামরিক কৌশল দিয়ে এর মোকাবেলা করা যাবে না। এর মূল কারণও খুঁজে বের করতে হবে। সরকারের গৃহীত নানা কৌশলের পাশাপাশি সংসদ সদস্যরাও কীভাবে এ নিয়ে কাজ করতে পারেন আইপিইউর নির্বাহী কমিটিতে সে কৌশল ঠিক করার বিষয়ে আলোচনা হবে। সংসদ সরকারের কোনো সম্প্রসারণ নয়। সরকারের বাইরেও সংসদের কাজ রয়েছে। আইপিইউ সে বিষয়গুলো নিয়েই কাজ করবে।
তিনি বলেন, উগ্রবাদের ক্ষেত্রে সরকার যা করছে, তা তো রয়েছেই, একই সঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে আমরা কী করতে পারি, আইপিইউ সম্মেলনে আলোচনার মাধ্যমে সে কৌশল ঠিক করা হবে। কমিটিতে এ নিয়ে যে আলোচনা হবে, পরবর্তী সময়ে সেটা আমাদের কাউন্সিলে যাবে। এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
এছাড়া ৩-৪ এপ্রিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে আইপিইউ সম্মেলনে আগত ভিআইপিদের যাতায়াতের সময় পরিবর্তন করা হবে বলেও জানান সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ওই দুদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কোনো ভিআইপি মুভমেন্ট হবে না। পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এত বড় একটা আয়োজনে অনেক ভিআইপি যাতায়াত করবেন। সে কারণে কিছু সমস্যা হতে পারে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে কিছু ‘লিগ্যাসি’ রেখে যেতে চাই। এবারই প্রথম আইপিইউ টেলিভিশন চালু করা হবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধনের পর সবাই ইন্টারনেটে তা দেখতে পারবেন।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস নিয়ে বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরিতে আইপিইউ সম্মেলনে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে জানতে চাইলে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা নির্ভর করবে বাংলাদেশের এমপিদের ওপর। তারা বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার সময় এ ব্যাপারে জনমত তৈরি করতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং বলেন, পৃথিবীতে এখনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়েছে। এ অসাম্য তৈরি হয় রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে। সামাজিক অবিচার ও বৈষম্য পৃথিবীতে উগ্রবাদ উত্থানেরও অন্যতম কারণ। আমাদের এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো তা দূর করা।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দেশে উগ্রবাদের উত্থানের পেছনে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেও দায়ী করেন মার্টিন চুংগং। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। বৈষম্য নিরসনে এবারের আইপিইউ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহীম, সরকারি দলের সংসদ সদস্য ডা. হাবিব-এ মিল্লাত, পঙ্কজ দেবনাথ, অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আইপিইউর মিডিয়া রিলেশন কর্মকর্তা জাঁ মিলিগান।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে আইপিইউর ১৩১তম অ্যাসেম্বলিতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। ১৯৭২ সালে রোমে অনুষ্ঠিত আইপিইউ সম্মেলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে সংস্থাটিতে যোগ দেয় বাংলাদেশ। প্রয়াত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ওই অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.