মিয়ানমার জেনারেলদের শাস্তির আহ্বান ইইউ’র

ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তির আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ এবং তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রেজ্যুলেশনে রোহিঙ্গাদের অবাধ মানবাধিকার সহায়তার নিশ্চয়তা এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোকে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে।

একই সঙ্গে সদস্য দেশগুলোর প্রতি মিয়ানমারের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক অবরোধ আরোপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ওপর ‘মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগের’ অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এছাড়া দেশটির সঙ্গে সব ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনা করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। লুক্সেমবার্গে ইউরোপীয় কাউন্সিলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। সেখানে বেশিরভাগ সদস্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দেন।

মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আইনি ব্যবস্থাসহ ১২ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরে সেটি গৃহীত হয়।

বৈঠকে ইইউ’র পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোঘেরিনি তার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্কতার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, পুরো পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, তা সূক্ষ্মভাবে নজর দেওয়া উচিত।

নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফেদেরিকা মোঘেরিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া এখন আর রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়। বরং এটি এখন নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, সেখানে যে দৃশ্য তিনি দেখেছেন, তা কখনো ভোলার নয়।

এই আলোচনায় মোঘেরিনি ছাড়াও যে ২৬ জন এমপি অংশ নেন, তাদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি, দায়ী সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য অবরোধ আরোপ ও বাণিজ্যসুবিধা বন্ধের তাগিদ দেন।

মিয়ানমারে অং সাং সু চির নেতৃত্বাধীন দল ক্ষমতাসীন হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রকৃত ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর হাতে এবং এর প্রধান হচ্ছে জেনারেল মিং আং হ্লাইং। এই সামরিক বাহিনীই রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান চালাচ্ছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেজ্যুলেশনে রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্যাতন বন্ধ এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চীনসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এতে শাখারভ পুরস্কারপ্রাপ্ত অং সান সু চিকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, এই পুরস্কার তাকেই দেওয়া হয় যিনি মানবাধিকার রক্ষা করবেন, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেবেন এবং আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান জানাবেন।

যারা এগুলো পালন করবে না, তাদের শাখারভ পুরস্কার ফেরত দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে কিনা, সে বিষয়ে আলোচনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতায় দুঃখ প্রকাশ করে রেজ্যুলেশনে বলা হয়, ইইউ সদস্যরাষ্ট্রসমূহ যেন চীন ও রাশিয়াসহ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের ওপর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ অব্যাহত রাখে।

এছাড়া রেজ্যুলেশনে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদ যেন এমন পদক্ষেপ নেয়, যাতে করে বিশ্বের যেকোনো দেশ যেন মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করে বা সামরিক প্রশিক্ষণ না দিতে পারে।

চলতি বছরের আগস্ট থেকে প্রায় ৬ লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলেও রেজ্যুলেশনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.