সালেক সুফী:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশকে পাক হানাদারমুক্ত করেছে বীর বাঙালিরা। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ মাটির নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাহসী ও ত্যাগী নতুন সমাজ গড়ার পথ রচনা হয়েছিল।
ঝরা পালকের ছাই ভস্ম থেকে ঝুড়ি ভরা স্বভাবনার বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তিমূল স্থাপন করে দিয়েছিলেন তার অতিমানবিক দেশপ্রেম এবং দূরদর্শী, কালজয়ী, উপমধর্মী পরিকল্পনার মাধ্যমে। সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। তার মাঝে তিনি অন্যান্য সবকিছুর মতো জ্বালানি ক্ষেত্রের জন্য যে কার্যক্রমের সূচনা করে গেছেন- এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল আলোকিত। বিদ্যুৎ সরবরাহ পৌঁছে গাছে সব নাগরিকের দোরগোড়ায়। মহান স্বাধীনতার ৫০ এবং বঙ্গবন্ধুর ১০০তম জন্মজয়ন্তীতে এটা বাংলাদেশের শ্রেষ্ট মাইলফলক।
বঙ্গবন্ধু হৃদয়ে ধারণ করতেন দেশ, মাটি ও মানুষ। তার হৃদয়ের গভীরে বিশ্বাস ছিল স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে নিজেদের তেল, গ্যাস এবং খনিজ সম্পদ নিজের দেশের সোনার সন্তানদের মাধ্যমে উত্তোলন করে জ্বালানি সনির্ভরতা গড়ে তুলতে হবে।
বঙ্গবন্ধু গড়ে তুললেন দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ খনিজ, তেল ও গ্যাস করপোরেশন (বিএমওজিসি)। ১৯৭২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ১২০ এর মাধ্যমে দেশের খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন করপোরেশন’ (বিএমইডিসি) নামে অপর একটি সংস্থা গঠন করা হয়।
এখন শুধু বাংলাদেশ তেল গ্যাস করপোরেশন পেট্রোবাংলা নাম বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধু দূতিয়ালি কৌশলে ডাচ বহুজাতিক কোম্পানি শেল বিভি থেকে ৫টি বৃহৎ গ্যাস ক্ষেত্র তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর এবং কৈলাশটিলা মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং মূল্যে কিনে নিয়েছিলেন। নিতান্ত সুলভ মূল্যে পাওয়া এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর গ্যাস সেই ১৯৭৫ থেকে এই যাবৎ বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে। মাত্র স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিবেশী দেশগুলোর ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে সাগরে তেল অনুসন্ধানের জন্য ৬টি সেরা আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিকে অনুসন্ধান কাজে নিয়োগ করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের অগাস্ট মহান নেতার মৃত্যুর পর সাগরে অনুসন্ধান হয়েছে নিতান্ত সীমিত। বঙ্গন্ধুর অনুপ্রেরণায় স্বল্পতম সময়ে বড়পুকুরিয়া ও জামালগঞ্জ থেকে কয়লা উত্তোলন এবং মধ্যপাড়া থেকে গ্রানাইট পাথর উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সেই উদ্যোগগুলো এখন সীমিত। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন পার্ববাংলা হবে পেট্রোনাস বা পের্টামিনার মতো স্বায়ত্তশাসিত স্বনির্ভর জাতীয় প্রতিষ্ঠান। পেট্রোনাসের অনুপ্রেরণা ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ।
পেট্রোনাস এখন বিশ্বে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে পেট্রোবাংলা এখন অস্তিত্বের লড়াইয়ে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন স্বনির্ভর জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ সেক্টর। কিন্তু ক্রমাগত আমদানিকৃত জ্বালানি (গ্যাস, লিকুইড ফুয়েল, কয়লা) নির্ভর হতে থাকা জ্বালানি নিরাপত্তা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু দর্শন থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জলে স্থলে গ্যাস তেল উত্তোলনের ব্যবস্থা জোরদার, নিজেদের কয়লা সম্পদ উত্তোলনের যথা শিগগিরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ। দেশের মেধাবী জনগোষ্ঠীকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে উঠতে অনুপ্ৰানিত করা। সেটাই হোক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনকের শতবর্ষে অঙ্গীকার।
লেখক: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.