পাহাড়ে সম্ভাবনাময় চা বাগান

নাইক্ষ্যংছড়ির চা বাগান

মোঃ নেজাম উদ্দিন ও আব্দুর রশীদ, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ফিরেঃ
চা শিল্প, নাম উঠলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে সিলেটের কথা ।সিলেট চা বাগানের জন্য ও চা পাতা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। সিলেট থেকে চা পাতা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করছে চা শিল্প মালিকগণ। সেই চা বাগান দেখতে পর্যটকদেও আর সিলেট যেতে হবে না। পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসলে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য দেখা সাথে সাথে কক্সবাজার থেকে পূর্বে প্রায় ৩০ কিরোমিটার পরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় দেখা মিলবে একখন্ড সিলেট। এই চা বাগানেওে উদ্যোগক্তা নুরুল আলম কোম্পানী। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তের পাহাড়ে চা শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই শিল্পের বিকাশে একক ভাবে স্বপ্ন দেখেছেন নুরুল আলম কোম্পানী। তিনি ব্যক্তি মালিকানায় প্রায় ৬০/৭০ একর জায়গা জুড়ে সৃজন করেছেন চা বাগানটি। এই বাগান থেকে পুরো এলাকার চা’য়ের চাহিদা পুরণ হয়ে অন্যান্য জেলায় নিয়ে যাচ্ছে বড় ডিলারেরা। কৃষিজাত এ শিল্পের বিকাশে দরকার সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। তবেই জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে এমনটি জানিয়েছেন সচেতন ব্যবসায়ীমহল।
পাশাপাশি এই চা বাগানকে ঘিরে পর্যটন খাতেও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ঈদুল আযহার
হার পরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসে ভীড় জমিয়েছিল।এখনো প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার সিলেটের চা বাগান উপভোগ করতে ছুটে আসে পর্যটকেরা। তখন দেখা যায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়।
গত ১৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দুপুরের দিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থেকে প্রায় ১৩ কি:মি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষে ইউনিয়নের আশারতলী এলাকায় সবুজের সমারোহে গড়ে উঠেছে সম্ভাবনাময়ী এই চা বাগান। নিজ উদ্যোগে বাগানটি করেছেন নুরুল আলম কোম্পানী। দৈনিক ভিত্তিতে বাগানে নিয়মিত অর্ধ শতাধিক নারী-পুরুষ কাজ করেন। দরকার শতাধিক অভিজ্ঞ শ্রমিক। পাহাড়ের ঢালুর কোলঘেঁষা সারি সারি সবুজ চা গাছে প্রকৃতির যেন অনন্য রূপে সেজেছে। চারপাশ জুড়ে ছোট বড় উঁচু-নিচু টিলা আর হরেক রকম গাছ-গাছালি। টিলার পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা সড়ক। সড়কের কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। যেনো মনে হয় একটুকুরো অন্যরখম সিলেট। এছাড়াও সেখানে ভালো লেবু চাষ আর রবার চাষের বাগান হয়েছে। এতে লেবু বাগানের চাষ করার মাধ্যমে ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণ করছে প্রতিনিয়ত।
ঘুরতে আসা পর্যটক সাঈদু জামান বলেন, এখানে চা শিল্পের বিকাশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো দরকার। এই শিল্পের সঠিক উন্নয়ন হলে স্থানীয় চাহিদা পুরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এছাড়াও বহু কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আফসান ইকবাল চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থী পর্যটক বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি উন্নয়ন হয়েছে তবে বাগানে যাওয়ার রাস্তাটি আরো অধিকতর উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও মালিকপক্ষকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি চা চাষে ব্যাপক সফলতা আসবে।
বাগানের ম্যানেজার এম ডি নাসির উদ্দীন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় ৬০/৭০ একর ভূমিতে বিস্তৃত এ চা বাগান। আরো কিছু জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আমি সিলেটসহ অন্যান্য জেলার চা বাগানে চাকুরী করেছি প্রায় ২৩ বছর যাবৎ। তবে অন্যান্য চা বাগানের চায়ের কোয়ালিটি চেয়ে এ চা পাতা কোয়ালিটি কম না। প্রশিক্ষিত চায়ের শ্রমিক পেলে চা শিল্পটি আরও এগিয়ে নেওয়া যাবে। নাইক্ষ্যংছড়িতে এ চা শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে পর্যাপ্ত ডেভেলপিং করতে পারিনি। এছাড়া সরকার সুদৃষ্টি দিলে ভালো মতো এগিয়ে নিতে পারতাম। তিনি এও বলেন, প্রফারলি মেইনটেইন্যান্স করলে প্রতি বৎসর ৮০/৯০ হাজার কেজি চা উৎপাদন সম্ভব। এখানকার স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে কোন রখম কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। অনভিজ্ঞ শ্রমিক বলে দৈনিক ৩০০ থেকে সর্বচ্চো ৬০০টাকা বেতন দিতে হয়। তবে চা বাগান হিসেবে জনবল একেবারে কম। বাগান থেকে চা পাতা উঠানো প্রতি কেজি ৮ টাকা করে পরিমাপ করে নেওয়া হয়।
বাগান মালিক নুরুল আলম কোম্পানী বলেন, ২০১২ সালে বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ করা হয়েছে। সেই সাথে প্রক্রিয়াজাতের একটি মিনি ফ্যাক্টরী স্থাপন করা হয়েছে। গত তিন বৎসর চা উৎপাদন হলেও লাভের মুখ দেখিনি। এখন একটু লাভের মূখ দেখা দিয়েছে। চা বোর্ডের রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন হয়নি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইনামুল হক জানিয়েছেন, চা চাষের জন্য ওই এলাকার পরিবেশ খুবই উপযোগী। ব্যক্তিমালিকানা গড়ে উঠা বাগানটির জন্য সরকারি পরামর্শ কিংবা সহায়তার জন্য কখনো কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করেনি বাগান মালিক। তবুও কয়েকবার সার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি এও বলেন, এই বাগানের উৎপাদিত চা থেকে পার্শ্ববর্তী পুরো এলাকার চায়ের চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও চা শিল্পের বিকাশে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.