ডিজিটাল ডাটাবেজে সহজ করতে পারে সরকারের সহায়তা কার্যক্রম

আসাদুজ্জামান কাজল

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শেষে সরকার এই কঠোর লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে। গত বছর করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে-সরকার যখন অফিস-অদালত বন্ধ রেখেছিল তখন আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকার তাঁর সাধ্যমত খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদিও আমরা দেখিছে, যারা এই খাদ্য ও অর্থ সহায়তা পাবার যোগ্য নয় তারাও অনেকেই এই তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছে এবং কিছু চাল চোরেরও আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু, সমাজের দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করতে সরকার তাঁর সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে।

এ বছরে, এখন পর্যন্ত তেমন কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো লকডাউনের আইন ভঙ্গ করে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করছে। তাঁরা চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা, উপার্যন না করলে যাদের ঘরে এক সপ্তাহের খাবার মজুদ নেই তারা বাঁচবে কীভাবে? লকডাউনে মৃত্যু ঝুঁকি কমানোর জন্য ঘরের ভিতরে বসে থাকতে পারে সচ্ছল মানুষ কিন্তু, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর মানুষটি পারে না। কেননা, করোনার মতো অনাহারেও মানুষ মারা যায়। তাই, ক্ষুধার্থ ব্যক্তি তাঁর ক্ষুধা নিবারণের জন্য করোনার মৃত্যু ঝুঁকি নিতে বিন্দুমাত্রও ভাববে না। তাদের কাছে ক্ষুধার চেয়ে করোনার ঝুঁকি তুচ্ছ।

যাইহোক, কিছুটা হলেও আশার কথা হচ্ছে, করোনার কারণে চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ, দরিদ্র, দুস্থ, ভাসমান ও অস্বচ্ছল মানুষকে সহায়তা করতে ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্দেশ্য, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এই সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। যেটা নিঃসন্দেহে দেশের অসহায় মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর। কিন্তু, গতবছর আমরা লক্ষ্য করেছি, খাদ্য ও বিশেষ করে নগদ অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে সমাজের সচ্ছল ব্যক্তি এবং চেয়ারম্যান-ম্যাম্বারদের আত্মীয়-স্বজনের নাম উঠে এসেছিল সেই তালিকায়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে গত বছরই দাবি করা হয়েছিল এই তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। তাই, বিদ্যমান বাস্তবতায় সরকারের এই সহায্য সত্যিকার অর্থেই যারা অভাবী-পুরোটাই তাদের হাতে পৌঁছাবে কি না তা কিছুটা হলেও ভাবনার বিষয়। তাই, এমন একটা ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন যারা মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই যারা অভাবী-সরকারি সহায়তা শুধু তারাই ভোগ করতে পারবে, অন্যরা চেষ্টা করলেও পারবে না।

করোনার সময় ছাড়াও, নদী ভাঙ্গন, বন্যা, ঝড় ও বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময়ে রাষ্ট্র সমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠিকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। তাই, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের আর্থিক অবস্থা বিষয়ক একটি সঠিক ও পরিপূর্ণ ডিজিটাল ডাটাবেজ খুবই প্রয়োজন যা রাষ্ট্রের প্রকৃত অভাবী নাগরিক চিহ্নিত করতে ও রাষ্ট্রের অর্থ সত্যিকার অর্থে সেসব অভাবী মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এবং পূর্বের মত নানা অব্যবস্থাপনা থেকেও মুক্তি দিবে।

সরকার এই বিষয়ে কাজ করার জন্য একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এমন একটি স্থায়ী ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা যেতে পারে যেখানে তার দেশের সকল নাগরিকের অর্থিক অবস্থা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য থাকবে যার ভিত্তিতে সরকার চাইলে দ্রুত সেই সকল নাগরিকের নিকট প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দিতে পারবে। এই ডাটাবেজে হতে পারে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক। কেননা, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি বিভাগ বা জেলা বা একটি জেলার কিছু উপজেলাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে তাই এটি মাথায় রেখে ডাটাবেজ তৈরি করলে-সরকার যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও নির্দিষ্ট একটি উপজেলার অভাবী মানুষের কাছেও তার সহায়তা পৌঁছে দিতে পারবে কোন তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই। সরকার পরিপূর্ণ একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করলে কেন্দ্রীয়ভাবে সহজেই অর্থ সহায়তা দিতে পারবে যা সময় ও নানা ভোগান্তি থেকেও মুক্তি দিবে। পাশাপাশি, খাদ্য সহায়তা দিতে চাইলেও-এই তালিকায় অন্তভুর্ক্ত নাগরিকদের খাদ্য সহায়তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

তবে, রাষ্ট্রের নাগরিকদের তথ্য হালনাগাদ রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে এই প্রক্রিয়ায়। যেমন, কেউ মৃত্যুবরণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার নামটি বাদ পরে যাবে এই তালিকা থেকে। এই কাজটি করার জন্য বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে লিখিত মৃত্যুসনদ প্রদান করা হয় সেটিকে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে। অর্থাৎ মৃত্যু সনদ নিতে হলে সেই নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র নির্দিষ্ট একটি সর্ভারে প্রবেশ করাবে স্থানীয় প্রশাসন যার মাধ্যমে সেই নাগরিককে সকল জায়গায় মৃত্যু দেখাবে এবং এই ডাটাবেজসহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য ডাটাবেজ হালনাগদ হয়ে যাবে। পাশাপাশি, একটি নিদিষ্ট সময় পর পর এই ডাটাবেজ হালনাগাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর ফলে, নতুন করে যারা অভাবী হবে তাদের তথ্য যেমন এই ডাটাবেজ যুক্ত হবে তেমনি যারা স্বচ্ছল হবে তাদের তথ্যও এখানে যুক্ত হবে।

খুব সহজেই রাষ্ট্রের অভাবী নাগরিকদের চিহ্নিত করে তাদের কাছে অর্থ সহায়তা পৌঁছে দিতে পারবে এই ডিজিটাল ডাটাবেজ। কিন্তু, এই ডাটাবেজে যেসব ডাটা বা তথ্য থাকবে সেটা হতে হবে একশত ভাগ সত্য ও নির্ভুল। কেননা, সেটি না হলে পুরো প্রক্রিয়াটিই নষ্ট হবে এবং কোন কাজে আসবে না। কোন নাগরিক চাইলেও যেন তার সম্পদ বাড়িয়ে বা কমিয়ে না বলতে পারে তা যাচাই’এর মত ব্যবস্থা রাখতে হবে। কৃষিশুমারিসহ নানা প্রক্রিয়ায় সরকার তার নাগিরকদের তথ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন সময়ে, যেগুলোও এই তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে সহজ করতে পারে। অথাৎ, এই ডাটাবেজ তৈরির কাজটি খুব দক্ষতা, সততা ও আন্তরিকার সাথে করা প্রয়োজন। এই ডাটাবেজ তৈরির কাজ চেয়ারম্যান-ম্যাম্বারদের মাধ্যমে না হয়ে সরকারের একটি বিশেষ বাহিনী বা টিমের মাধ্যমে হলেই ভালো হবে। কেননা, কিছু চেয়ারম্যন-ম্যাম্বারদের স্বজনপ্রতি ও দুর্নীতি এই পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। তাই, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির মত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারের একটি বিশেষ শাখা এই কাজটি করতে পারে।

  1. ফয়জুল বলেছেন

    খুব ভাল উদ্যোগ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.